বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানির প্ররোচনায় করের বোঝায় দেশিরা
Published: 13th, January 2025 GMT
বহুজাতিক কোম্পানির দামি এবং দেশি সস্তা সিগারেটে সমান কর আরোপকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়েছে ন্যাশনাল সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন (এনসিএমএ)। রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, বহুজাতিক কোম্পানির প্ররোচনায় সরকার সম্পূরক শুল্ক অস্বাভাবিক বাড়িয়েছে।
শতাধিক পণ্যে শুল্ক এবং ভ্যাট বাড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার দুটি পৃথক অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে বিদেশি কোম্পানির উৎপাদিত অতি উচ্চ, উচ্চ এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ২ শতাংশ, অর্থাৎ সাড়ে ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। আর দেশি নিম্ন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিএমএ সাধারণ সম্পাদক নাজমুন নাহার লাকি লিখিত বক্তব্যে বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্বের সিংহভাগ আসে ভ্যাট থেকে। সিগারেট খাতে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা প্রণোদনা ও স্বার্থ সংরক্ষণ নীতি সহায়তা চাইলেও বারবার বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে সিগারেটের বাজার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার ৩৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। এই খাতের ৮৫ ভাগ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি)। ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ২০০ কোটি। এখন তা ২ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানির ৮৫ শতাংশ বিদেশি মালিকানাধীন শেয়ারের লভ্যাংশ হিসাবে বছরে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রাই বিদেশ চলে যাচ্ছে। আরেক বহুজাতিক কোম্পানি জাপান টোব্যাকোও সুবিধা পেয়ে আসছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মুনাফা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে না। দেশীয় কোম্পানির লাভ দেশে থাকে। বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বহুজাতিক কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্যে সর্বস্বান্ত হয়ে ব্যবসা বন্ধের পথে দেশীয়দের।
সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবিতে বলা হয়, নিম্ন স্তরের সিগারেটে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানির জন্য ঘোষিত ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেরিটেজ টোব্যাকোর প্রতিনিধি আরিফ আলম, এস এম টোব্যাকোর রফিকুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।