পালিয়ে থেকেও কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা
Published: 14th, January 2025 GMT
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পালিয়ে থেকেও জামালপুর পৌরসভার কয়েক কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা সোহেল। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন জামালপুর পৌরসভার ঠিকাদারেরা।
পালিয়ে থেকেও মির্জা সোহেল কীভাবে ঠিকাদারি কাজ সম্পন্ন করবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তাই পৌর কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সবাই।
জামালপুর পৌরসভার সহকারী প্রকোশলী (প্রকৌশল বিভাগ) ফয়সাল হোসেন বকশী জানান, ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর শহরতলীর চন্দ্রা ঘুন্টি রেল ক্রসিং থেকে চন্দ্রা ঝিনাই নদী পর্যন্ত ১৩৬৫ মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে পৌরসভা। এর প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৫ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার ৪০ টাকা। এতে মোট ১০টি দরপত্র বিক্রয় হলেও দরপত্র জমা দেন ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্রের মূল্য ধরা হয় ৪ হাজার টাকা। আর টেন্ডার ওপেন হয় চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি।
তিনি আরো জানান, ৩ কোটি ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৩.
প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স লাবনী এন্টারপ্রাইজের মালিক হলেন মির্জা গোলাম মওলা সোহেল। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ আসনের টানা ষাত বারের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের সর্বকনিষ্ঠ সহোদর ভাই। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৭ বছর মাদারগঞ্জের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেছেন মির্জা সোহেল। এছাড়াও অবৈধভাবে বিত্তশালী হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মাদারগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল মির্জা সোহেলের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৭ বছরে তারা নানা অনিয়ম করে জামালপুর পৌরসভার সকল কাজ করেছেন। এখনো তারা থেমে নেই। তারা পালিয়ে থেকেও শিডিউল ড্রপ করছে। সর্বনিম্ন দরদাতা হচ্ছে। তারা নিম্নমানের ঠিকাদারী কাজ করে অভ্যস্ত। এখনো যদি তারা নিম্নমানের ঠিকাদারী কাজ করে তাহলে দেশ দ্বিতীয় দফায় স্বাধীন করে কী লাভ হলো? এছাড়া তিনি পালিয়ে থাকলে কাজ কীভাবে করবেন? এখানে স্বাক্ষরসহ নানা বিষয় রয়েছে।’’
মেসার্স সোয়াইব এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সাযযাতুল ইসলাম বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ আগেও যেভাবে টেন্ডারবাজি করেছে। এখনো তারা সেভাবেই টেন্ডারবাজি করছে। বিশেষ করে মির্জা পরিবার এখনো থেমে নেই। আত্মগোপনে থেকে এভাবে কাজ করা সম্ভব না। তারা যেনো এভাবে কাজ না করতে পারে সেদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ নজর দিবে বলে আশা করি।’’
এসব বিষয়ে জানতে মির্জা গোলাম মওলা সোহেলের মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়, তবে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জামালপুর পৌরসভার সহকারী প্রকোশলী (প্রকৌশল বিভাগ) ফয়সাল হোসেন বকশী বলেন, ‘‘সব কাজ অনলাইনে হওয়ায় লাইসেন্স মালিক যে কেউ যে কোনো স্থান থেকে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারেন। আমাদের এই কাজে মাত্র টেন্ডার ওপেন হলো। এখন সব কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। এখানে নিয়ম অনুযায়ী সকল কাজ করা হবে।’’
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।