৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পালিয়ে থেকেও জামালপুর পৌরসভার কয়েক কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা সোহেল। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন জামালপুর পৌরসভার ঠিকাদারেরা। 

পালিয়ে থেকেও মির্জা সোহেল কীভাবে ঠিকাদারি কাজ সম্পন্ন করবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তাই পৌর কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সবাই। 

জামালপুর পৌরসভার সহকারী প্রকোশলী (প্রকৌশল বিভাগ) ফয়সাল হোসেন বকশী জানান, ২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর শহরতলীর চন্দ্রা ঘুন্টি রেল ক্রসিং থেকে চন্দ্রা ঝিনাই নদী পর্যন্ত ১৩৬৫ মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে পৌরসভা। এর প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৫ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার ৪০ টাকা। এতে মোট ১০টি দরপত্র বিক্রয় হলেও দরপত্র জমা দেন ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্রের মূল্য ধরা হয় ৪ হাজার টাকা। আর টেন্ডার ওপেন হয় চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি।

তিনি আরো জানান, ৩ কোটি ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৩.

৬৯৮ টাকায় টেন্ডারে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে মেসার্স লাবনী এন্টারপ্রাইজ। ৩ কোটি ৯০ লাখ ০৬ হাজার ৪৪০.৪২৭ টাকায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে মেসার্স এম এম এইচ- এম এম টি এন্টারপ্রাইজ। ৩ কোটি ৯৫ লাখ ১৫ হাজার ২৮১.৬০৬ টাকায় তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে মেসার্স এসবি এন্ড আর ই এন্টারপ্রাইজ।

প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স লাবনী এন্টারপ্রাইজের মালিক হলেন মির্জা গোলাম মওলা সোহেল। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ আসনের টানা ষাত বারের সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের সর্বকনিষ্ঠ সহোদর ভাই। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৭ বছর মাদারগঞ্জের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেছেন মির্জা সোহেল। এছাড়াও অবৈধভাবে বিত্তশালী হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মাদারগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল মির্জা সোহেলের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৭ বছরে তারা নানা অনিয়ম করে জামালপুর পৌরসভার সকল কাজ করেছেন। এখনো তারা থেমে নেই। তারা পালিয়ে থেকেও শিডিউল ড্রপ করছে। সর্বনিম্ন দরদাতা হচ্ছে। তারা নিম্নমানের ঠিকাদারী কাজ করে অভ্যস্ত। এখনো যদি তারা নিম্নমানের ঠিকাদারী কাজ করে তাহলে দেশ দ্বিতীয় দফায় স্বাধীন করে কী লাভ হলো? এছাড়া তিনি পালিয়ে থাকলে কাজ কীভাবে করবেন? এখানে স্বাক্ষরসহ নানা বিষয় রয়েছে।’’ 

মেসার্স সোয়াইব এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সাযযাতুল ইসলাম বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ আগেও যেভাবে টেন্ডারবাজি করেছে। এখনো তারা সেভাবেই টেন্ডারবাজি করছে। বিশেষ করে মির্জা পরিবার এখনো থেমে নেই। আত্মগোপনে থেকে এভাবে কাজ করা সম্ভব না। তারা যেনো এভাবে কাজ না করতে পারে সেদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ নজর দিবে বলে আশা করি।’’ 

এসব বিষয়ে জানতে মির্জা গোলাম মওলা সোহেলের মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়, তবে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

জামালপুর পৌরসভার সহকারী প্রকোশলী (প্রকৌশল বিভাগ) ফয়সাল হোসেন বকশী বলেন, ‘‘সব কাজ অনলাইনে হওয়ায় লাইসেন্স মালিক যে কেউ যে কোনো স্থান থেকে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারেন। আমাদের এই কাজে মাত্র টেন্ডার ওপেন হলো। এখন সব কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। এখানে নিয়ম অনুযায়ী সকল কাজ করা হবে।’’

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

আরও পড়ুননতুন ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা শুরু০৭ জুলাই ২০২৫

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।

‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।

আগের ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত ২৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে আদালত আদেশের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর আদালত আদেশ দেন। আদালত বলেন, শুধু রুল দেওয়া হলো।

আদেশের সময় রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল ও আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।

চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল