নির্বাচনের সময়সীমা ঠিক করবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো: জাতিসংঘের দূত
Published: 14th, January 2025 GMT
ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, সেটা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে চান না।
আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন গোয়েন লুইস। তিনি এদিন বাংলাদেশ সফরে আসা জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদলকে নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কারিগরি সহযোগিতা দিতে আগ্রহী জাতিসংঘ। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করেছি। কমিশনের চাহিদা অনুয়ায়ী আমরা সহযোগিতা দেব। এ লক্ষ্যে আমাদের প্রয়োজনীয়তা সমীক্ষা প্রতিনিধিদল কাজ করবে।’
গোয়েন লুইস জানান, নির্বাচনে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয়তা সমীক্ষা প্রতিনিধিদল আগামীকাল চট্টগ্রাম যাবে। সেখানে বিভিন্ন অংশীজন, যেমন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে। প্রতিনিধিদল ফিরে এসে প্রতিবেদন দেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, ‘নির্বাচন কখন হবে, সেটা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে। আমরা সময়সীমা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমরা নির্বাচনে শুধু কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিতে চাই।’
জাতিসংঘের এই সহযোগিতা স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন উভয় ক্ষেত্রে চাওয়া হয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে গোয়েন লুইস বলেন, তাঁদের কাছে শুধু বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের শেষের দিকে অথবা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন করা যেতে পারে।
তবে তার আগেই নির্বাচন চাইছে বিএনপি। চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করছে দলটি। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা মনে করি, এ বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এ কারণে আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমার বিধান প্রশ্নে রুল
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের একটি ধারা প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধারাটিতে অপরাধ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা উল্লেখ রয়েছে। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।
২০১৭ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনের ১৮ ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ধারাটি বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ করা না হলে আদালত ওই অপরাধ আমলে গ্রহণ করবে না।
ওই ধারার বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান গত মাসের শেষ দিকে রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী।
রুলে অপরাধের অভিযোগ আমলে নেওয়ায় দুই বছরের সময়সীমা আরোপ–সংক্রান্ত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৮ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুলের বিষয়টি জানিয়ে আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এসেছে। আইনের ১৮ ধারায় সময়সীমা উল্লেখ করে দুই বছরের মধ্যে মামলা না করতে পারলে কোনো আদালত অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারবে না বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিচার করতে পারবে না। যে মেয়েটির ১১–১২ বছরে বিয়ে হয় তারপক্ষে দুই বছরের মধ্যে মামলা করা সব সময় সম্ভব না–ও হতে পারে। তখন সে নিজেই শিশু। দুই বছর পর আদালত বিচার করতে পারবে না এবং সময়সীমা আইনে বেঁধে দেওয়া সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী—এমন সব যুক্তিতে রিটটি করা হয়।