সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। প্রায়ই ভাঙা অংশে যানবাহনের চাকা পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এর ওপর দিয়ে প্রায়ই চলাচল করেন প্রশাসনের লোকজন। তবুও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। সেতুটি যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 
শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন, একই ইউনিয়নের ইটনা এলাকার মমতাজ আলী, তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের ইটনা এলাকায় সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সেতুটি। বাঘাব ইউনিয়নের চাঁদপাশা বাজার হয়ে ইটনা দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ নদীর যোশর ইউনিয়নের খৈনকুট এলাকায় এই ভাঙা সেতু। প্রায় দুই বছর ধরে অটোরিকশা, বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ নিয়েই চলাচল করছেন রিকশা-ভ্যানসহ পথচারীরা। প্রায়ই ভাঙা অংশে গাড়ির চাকা পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এরপরও সংস্কারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, শিবপুর উপজেলা এলজিইডি অফিস ৩০-৩২ বছর আগে এই সেতু নির্মাণ করে। যার ওপর দিয়ে চলাচল করেন বাঘাব, যোশর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় দুই বছর আগে সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় বাস-ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল। পরে স্থানীয় রিকশা ও অটোরিকশাচালকরা নিজেদের উদ্যোগে গর্তের পাশ দিয়ে একটি কাঠের গুঁড়ি ফেলে কিছু অংশ সংস্কার করেন। এর ওপর দিয়ে শুধু রিকশা-ভ্যান চলাচল করছে। তবে সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে লাল নিশান বা অন্য কোনো সতর্কতামূলক চিহ্ন না থাকায় প্রায়ই অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রুবেল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইটনায় সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণের দাবি তাঁর। 
বিভাটেক চালক ইসমাইল হোসেন, রিকশাচালক জয়নাল জানান, রাতে সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের রিকশার চাকা ভাঙা অংশে পড়ে যায়। এতে তাদের যাত্রী আহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাঘাব ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, প্রায়ই সেতুর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুটি সংস্কারের জন্য শিবপুর উপজেলা এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) শিবপুর উপজেলা প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম শওকত বলেন, ‘সেতুটির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ওপর দ য়

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ