সেতুর মাঝে ভাঙা, ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল
Published: 14th, January 2025 GMT
সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। প্রায়ই ভাঙা অংশে যানবাহনের চাকা পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এর ওপর দিয়ে প্রায়ই চলাচল করেন প্রশাসনের লোকজন। তবুও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। সেতুটি যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন, একই ইউনিয়নের ইটনা এলাকার মমতাজ আলী, তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের ইটনা এলাকায় সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সেতুটি। বাঘাব ইউনিয়নের চাঁদপাশা বাজার হয়ে ইটনা দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁ নদীর যোশর ইউনিয়নের খৈনকুট এলাকায় এই ভাঙা সেতু। প্রায় দুই বছর ধরে অটোরিকশা, বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ নিয়েই চলাচল করছেন রিকশা-ভ্যানসহ পথচারীরা। প্রায়ই ভাঙা অংশে গাড়ির চাকা পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এরপরও সংস্কারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, শিবপুর উপজেলা এলজিইডি অফিস ৩০-৩২ বছর আগে এই সেতু নির্মাণ করে। যার ওপর দিয়ে চলাচল করেন বাঘাব, যোশর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় দুই বছর আগে সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় বাস-ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল। পরে স্থানীয় রিকশা ও অটোরিকশাচালকরা নিজেদের উদ্যোগে গর্তের পাশ দিয়ে একটি কাঠের গুঁড়ি ফেলে কিছু অংশ সংস্কার করেন। এর ওপর দিয়ে শুধু রিকশা-ভ্যান চলাচল করছে। তবে সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে লাল নিশান বা অন্য কোনো সতর্কতামূলক চিহ্ন না থাকায় প্রায়ই অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক রুবেল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইটনায় সেতুর মাঝে কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণের দাবি তাঁর।
বিভাটেক চালক ইসমাইল হোসেন, রিকশাচালক জয়নাল জানান, রাতে সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের রিকশার চাকা ভাঙা অংশে পড়ে যায়। এতে তাদের যাত্রী আহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাঘাব ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, প্রায়ই সেতুর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুটি সংস্কারের জন্য শিবপুর উপজেলা এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) শিবপুর উপজেলা প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম শওকত বলেন, ‘সেতুটির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই সেতুটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ওপর দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।