ড্রয়ের পর লিভারপুল ম্যানেজার জানালেন, ‘এর বেশি চাওয়া যায় না’
Published: 15th, January 2025 GMT
কোচিংয়ে মুনশিয়ানা দেখিয়ে ফুটবল মাঠে নিজ দলের দর্শকদের কাছ থেকে বহুবার ‘প্রশংসা ধ্বনি’ আদায় করে নিয়েছিলেন ডাচ ম্যানেজার আর্নে স্লট। তবে তার দল লিভারপুল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নটিংহ্যাম ফরেস্টের ঘরের মাঠে হারতে-হারতে ১-১ গোলে ড্র করাকালীন, অদ্ভুত এক সঙ্গীত শুনলেন ৪৬ বছর বয়সী এই ম্যানেজার। ‘স্লট, এটা আবারও হতে যাচ্ছে’- এই বলে ফরেস্টের সমর্থকরা স্লোগান তুলেছিল। যেখানে খোঁচাটা পরিষ্কার। এই মৌসুমে লিগে এখন পর্যন্ত একটা মাত্র ম্যাচ হেরেছে অল রেডরা, গত সেপ্টেম্বরে সেটা ছিল এই ফরেস্টের বিপক্ষেই! তবে পয়েন্ট খোয়ানোর পরও লিভারপুল ম্যানেজারের দাবি এর বেশি নাকি চাওয়ার ছিল না!
ঘরের মাঠ সিটি গ্রাউন্ডে ম্যাচের অষ্টম মিনিটে নিজেদের প্রথম সুযোগেই ক্রিস উডের গোলে এগিয়ে যায় নটিংহ্যাম। প্রথমার্ধে নিজেদেরকে খুঁজেই পায়নি লিভারপুল। এমনকি দ্বিতীয়ার্ধেও গোলের দেখা পেতে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল স্লট বাহিনীকে। বদলি হিসেবে নামার ২২ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করে হার থেকে দলকে বাঁচান পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড দিয়াগো জোটা।
এই মৌসুমটা দারুণ শুরু করেছিল স্লটের লিভারপুল। তবে নতুন বছরে এসে যেন সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গিয়েছে অল রেডদের। শেষ চার ম্যাচে তারা মাত্র একটিতে জয়ের দেখা পেয়েছে। সেটাও আবার দুর্বল একরিংটন স্ট্যানলির বিপক্ষে এফএ কাপের ম্যাচে। এরপর ফরেস্টের বিপক্ষে এই কষ্টার্জিত ড্র। তবে এতো কিছুর পরও তৃপ্ত অল রেড ম্যানেজার স্লট!
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ‘আমি আজ এর বেশি কিছু চাইতে পারতাম না। আমি মনে করি বেশিরভাগ দর্শকই দ্বিতীয়ার্ধের ব্যাপারে খুব ইতিবাচক কথা বলবে। বিশেষ করে যখন আপনি এমন একটি মাঠে, এমন একটি দলের বিরুদ্ধে খেলেন যারা ফর্মের তুঙ্গে আছে। যারা প্রতিটি ম্যাচে খুব কম সুযোগ দেয় এবং যারা ‘প্রতি আক্রমণে’ ভয়ংকর। আমরা আজ ৯৮ মিনিটের ফুটবলে একটিই কেবল প্রতি আক্রমণের স্বীকার হয়েছি। আমি এটাকে আধিপত্য হিসেবে দেখছি’।
আরো পড়ুন:
লিভারপুলের পয়েন্টে ভাগ বসালো ম্যানইউ
লেস্টারকে হারিয়ে আরও এগিয়ে লিভারপুল
এই ব্যাপারে ফরেস্ট সমর্থকরা স্লটের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। তবে প্রতিপক্ষে ফরেস্টকেও তাদের প্রাপ্য সম্মানটা দিতে ভুলেননি স্লট, ‘‘আমি মনে করি না তারা এখানে কেবল ভাগ্যের জোরে এসেছে। প্রতিটি দলেরই তাদের বিপক্ষে খেলা কঠিন। তারা ইতিমধ্যেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলেছে, যার মাধ্যমে আপনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন যে তারা এমন একটি দল যারা লিগ টেবিলের শীর্ষে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম’’।
লিভারপুল পরপর দুই ম্যাচ ড্র করেও টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরেস্টের সঙ্গে ছয় পয়েন্টের ব্যবধান রেখে শীর্ষে আছে। ২০ ম্যাচে ১৪ জয় ও ৫ ড্রয়ে ৪৭ পয়েন্ট অল রেডদের। অন্যদিনে এক ম্যাচ বেশি খেলে ১২ জয় এবং ৫ ড্রয়ে ৪১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ফরেস্ট।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।