দুই বছর আগে হঠাৎ সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন ফোরাম থেকে ফের রপ্তানির সুপারিশ এলেও তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিতে পড়েছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। হাতছাড়া হচ্ছে রপ্তানি বাজার। বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

জানা গেছে, রপ্তানি নীতিতে সব ধরনের চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকায় রয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে স্থানীয় উৎপাদন ও চাহিদা পর্যালোচনার ভিত্তিতে বরাবরই সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের জুলাইয়ে ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় চালের মজুত বিবেচনায় সুগন্ধিসহ সব ধরনের চাল রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে। ওই বছরের ২৯ জুন সুগন্ধি চাল রপ্তানি সাময়িক স্থগিত করা হয়। রপ্তানিকারকদের অনুরোধে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই আবার সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আগে অনুমোদন পাওয়া ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার ২৪৪ টন সুগন্ধি চাল ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে রপ্তানি করার অনুমতি দেওয়া হয়। তিন মাস না যেতেই আবারও কৃষি মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর দেশের সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ করে। চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালসহ খাদ্য পণ্যবাহী ট্রাক ও কনটেইনার বন্দর থেকে ফেরত আনতে হয়। এতে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যিক ক্ষতি হয়। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সুগন্ধি চাল রপ্তানি অনুমোদন দেওয়া থাকলে এর আড়ালে সাধারণ চাল রপ্তানি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই দেশে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মজুত বাড়ানোর লক্ষ্যেই সব ধরনের চাল রপ্তানি বন্ধ করা হয়। বন্ধ করার পর কয়েক দফা তা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এক সময় সুগন্ধি চালের অবদান ছিল প্রায় ১০ শতাংশ। সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ থাকায় ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছায়। কিন্তু সুগন্ধি চাল রপ্তানিতে বাধা পড়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই রপ্তানি আয় কমে দাঁড়ায় ৮৪৩ মিলিয়নে। কমার ধারাবাহিকতা পরের অর্থবছরেও বজায় থাকে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে এক সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে জানানো হয়, প্রায় ১৮ লাখ ৩৫ হাজার টন সুগন্ধি চাল উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টন চাল রপ্তানি হয়, যা উৎপাদিত মোট সুগন্ধি চালের ১ শতাংশের কম। সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি প্রদান করা হলে খাদ্য নিরাপত্তায় ঘাটতি হবে না। গত ২০ অক্টোবর ট্যারিফ কমিশনে আরেক বৈঠকে সুগন্ধি চাল রপ্তানি বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসে। এর পর তিন মাস পার হলেও রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়নি।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো.

পারভেজ সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দুই বছরের বেশি আগে খাদ্য নিরাপত্তার নামে কিছু দুর্বল যুক্তি দিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধ করা হয়। এর পর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে অনুমোদন দেওয়া হলেও মাত্র তিন মাস পর আবার তা বন্ধ করা হয়। তখন পাশের দেশ বন্ধ করে দেওয়াসহ বেশ কিছু দুর্বল যুক্তি দেখানো হয়। অথচ ভারত সাধারণ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছিল। কিন্তু বাসমতি চালকে (সুগন্ধি) এর আওতার বাইরে রাখে। তিনি আরও বলেন, সুগন্ধি চাল নিয়মিত কেউ খান না। প্রতিবছর এ চাল রপ্তানি বাড়ছিল। কিন্তু এখন বন্ধ থাকায় না পাওয়া যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা, একই সঙ্গে হারাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল সমকালকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সুগন্ধি চালের ভালো বাজার তৈরি হয়। রপ্তানি হলে চাল উৎপাদন করে কৃষকদের আরও বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ থেকে এ চাল রপ্তানি বন্ধ থাকায় ভারত এবং পাকিস্তান এ বাজার দখলে নিয়ে নিচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় সুগন্ধি চাল রপ্তানির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা উচিত।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের যে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তামিম

২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে সাকিব আল হাসানের একটি সাক্ষাৎকারে তামিম ইকবালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে এবার মুখ খুলেছেন এই সাবেক অধিনায়ক। সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তামিম পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, তিনি কোনো ম্যাচ ‘বেছে বেছে’ খেলতে চাননি এবং সাকিবের কথায় কিছু ভুল তথ্য ছিল।

সাক্ষাৎকারে তামিম বলেন, ‘সে তার মতামত দিয়েছে। কিছু ভুল তথ্য দিয়েছে। ওখানে সাকিব একটা কথা বলেছে—আমি বেছে বেছে ম্যাচ খেলতে চেয়েছি। এটা সে কোথায় পেয়েছে? ফিজিও বলেননি, নির্বাচকরা বলেননি, আমিও বলিনি।’ তামিম আরও জানান, এমন মন্তব্য শুনে তিনি কষ্ট নয়, বরং বিস্মিত হয়েছিলেন।

তামিম বলেন, যদি কোনোদিন সাকিবের সঙ্গে আড্ডায় বসা হয়, তাহলে তিনি বিষয়টি জানতে চাইবেন তার কাছ থেকে।

তবে শুধু সাকিবের কথাতেই নয়, বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তামিম। তিনি বলেন, ‘সাকিব আর আমার ঝামেলার কথা মিডিয়া অনেক আগে থেকেই জানত। খেলায় প্রভাব না পড়ায় কেউ লিখেনি। কিন্তু বিসিবি সভাপতি প্রকাশ্যে বলে দেওয়ার পর থেকেই মিডিয়ায় এসব লেখা শুরু হয়।’

তামিমের মতে, ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের ঠিক আগে বিষয়টি সামনে এনে এমন ‘ভাঙন’ সৃষ্টি করা হয়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই নিতে হবে। যদিও এখন তারা পদে নেই বলে এই মুহূর্তে কিছু বলার জায়গা দেখছেন না তামিম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফ্ল্যাটের নিবন্ধন খরচ ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি রিহ্যাবের
  • ‘১০০ টাকার’ বাজেটের নতুনত্ব কোথায়
  • শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল সদস্য মনোনয়নে বিএসইসির কমিটি
  • সাকিবের যে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তামিম
  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি