মৌলভীবাজারে ভূমিসেবা সার্ভারের জটিলতার কবলে পড়ে কমেছে জমি রেজিস্ট্রেশন। এতে জেলার সাতটি উপজেলায় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকার রাজস্ব কমেছে। ডিসেম্বর মাসে কয়েক হাজার গ্রাহক জমি রেজিস্ট্রেশন করতে না পারায় ভোগান্তিতে ছিলেন। এখনো সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না হওয়ায় অনিশ্চয়তায় রয়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।

মৌলভীবাজারের জেলা রেজিস্ট্রার মফিজুল ইসলাম জানান, জমি রেজিস্ট্রি বাবদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার সবকটি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস মিলিয়ে ২৮ হাজার ৯২৭টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। এতে ৯৪ কোটি ৫৯ লক্ষ ৫৮ হাজার ৭৪টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। তবে ২০২৩ সালে ৩৭ হাজার ১২১টি দলিল রেজিস্ট্রি বাবদ ১০৪ কোটি ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৩১৭ টাকা রাজস্ব অর্জিত হয়েছিল। 

২০২৩ সালের তুলনায় ৮ হাজার ১৯৪টি দলিল সম্পাদন কম হয়েছে। ফলে রাজস্ব আদায় কমেছে ৯ কোটি ৪২ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৩ টাকা। এদিকে কয়েক বছর পর পর নতুন করে জানুয়ারি মাসে জমির বাজার মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। প্রায় প্রতি বছরই বাজার মূল্য বাড়ে। ফলে গ্রাহকদের রেজিস্ট্রি খরচও বেশি বহন করতে হয়। 

এ কারণে বাড়তি খরচ থেকে বাঁচতে গ্রাহকরা ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এ কাজ শেষ করতে চান। বছরের শেষ মাসে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়গুলো সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। এ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। তবে গেল ডিসেম্বর মাসে সার্ভার আপগ্রেডেশনের জন্য ভূমিসেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকরা খাজনা দিতে না পারায় জমি রেজিস্ট্রির সংখ্যা কমে যায়। 

আবার অনেকে অনলাইনে নামজারি করতে না পারায় জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেননি। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। এখনো মাঝেমধ্যে সার্ভার ঠিক হলেও দিনের বেশিরভাগ সময়ে খাজনা দিতে পারছেন না গ্রাহকরা।

রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ গ্রামের মোতাচ্ছির বেগ শোভা ও শত্রুমর্দন গ্রামের মো.

আয়াজ মিয়া জানান, গত ডিসেম্বর মাসে জমি কিনতে চেয়েছিলেন তারা। ভূমিসেবা সার্ভার বন্ধ থাকায় তখন খাজনা ছাড়া রেজিস্ট্রি হয়নি। এখন রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে দেখেন মৌজায় জমির সরকারি মূল্য বেড়ে গেছে। ফলে রেজিস্ট্রি খরচ বেশি দিতে হচ্ছে। সার্ভার সমস্যার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগের মূল্যে রেজিস্ট্রির সুযোগ দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

জেলা রেজিস্ট্রার মফিজুল ইসলাম বলেন, “সারা বছরের মধ্যে ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি জমি রেজিস্ট্রি ও রাজস্ব অর্জিত হয়। কিন্তু এ মাসে মাত্র ১ হাজার ৬৭৭টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। মূলত এসময় সার্ভার জটিলতায় গ্রাহকরা খাজনা দিতে না পারায় ও অনেকের নামজারি আটকে থাকায় রেজিস্ট্রি করতে পারেননি। এ কারণে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার রাজস্ব কম অর্জিত হয়েছে। তবে এখন কিছু কিছু রেজিস্ট্রি হচ্ছে।”

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসা. শাহীনা আক্তার বলেন, “সার্ভারের আপগ্রেডেশনের জন্য ডিসেম্বর মাসে খাজনা দিতে সমস্যা হয়েছিল। এখন কিছু কিছু খাজনা দেওয়া যাচ্ছে। আশা করি সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে।”

ঢাকা/আজিজ/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনরাত্রির দৃশ্য

আমাদের টাউনকে আমার পরাবাস্তব টাউন মনে হয়। যেন এই টাউন কখনও পাহাড়ে থাকে। কখনও পাহাড়ের উপত্যকায়, জলাভূমির মাঝখানে দ্বীপ হয়ে থাকে। বাসিন্দা কারা টাউনের?– আমার বন্ধুরা। ফরিদ, বাপি, অমিয়, মান্না, শামীম, নাসের, অঞ্জন, তুষার, রোমেন, নুমান, লিখন, সর্বোপরি মুস্তফা। তারা কি পরাবাস্তব?
সবকিছুই পরাবাস্তব। যারা বেঁচে আছে, যারা মরেছে। পরাবাস্তব টাউনে কোনো নোটিশ বোর্ড নাই– ‘মৃতদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।’ মৃত আকল পণ্ডিত বরং অধর্ম করেন। ছামুলালের ঘরে বসে মদ্যপান করে জমে যান বব মার্লের সঙ্গে জ্যামিং-এ। কিছু উটপাখি, কিছু ঝাউগাছ রাতে সেই পরাবাস্তব টাউনে ঢুকে যায়।
দেখা এসব দৃশ্য লিখে যাই। মান্নাকে মনা, ফরিদকে ইরাব, তুষারকে কুটু বড়াল বানিয়ে। মুস্তফা শুধু মুস্তফা থেকে যায়। আউট ল সে, ধার ধারে না কোনো গ্রন্থিকের।
‘আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনরাত্রি’ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে লেখা। দৈনিক সমকাল-এর ঈদসংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। বই হয়েছে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে। প্রকাশক: মজিবর রহমান খোকা। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা। কাহিনি? মনে নাই।
আমার ছাপা বই আমি পড়ি না। অস্বস্তি লাগে, বাজে লাগে। জীষ্ণু, বিন্দুবাসিনী, অংশুদা এসব কিছু কিছু মনে আছে। কোন পৃষ্ঠার একটা বাক্য মনে আছে– সন্ধ্যা রাতের হুডি পরে নিয়েছে। আর সেভাবে কিছু মনে নাই।– আমাদের পরাবাস্তব টাউন বহমান, উড়ুক্কু, জলমগ্ন, সর্পিল। তবে রাসেল ভাইপার সাপ তখনও আমাদের টাউনে দেখা যায় নাই। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ সেটা।
কবিতা ও উপন্যাস বিভাগে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ পেয়েছে ‘আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনরাত্রি’। অবশ্যই আনন্দের কথা। নিরানন্দের কথা এই সম্মান গ্রহণের জন্য আমাকে একদিন মাত্র একবার মঞ্চে উঠতে হবে। মাহবুব আজীজ যত সহজ করে বললেন, তত কি সহজ? আমার সোশ্যাল ফোবিয়া প্রচণ্ড। মারাত্মক মঞ্চভীতি যার অংশ। ভূত প্রেত ডরাই না, মঞ্চ ডরাই। বিপদে মধুসূদন আছেন মামুন ভাই।
‘দুর্বলেরে রক্ষা করো, মামুন ভাই!’
মামুন ভাইয়ের প্রেসক্রিপশন কম্পিউটারে আছে।– আমার কয়েকজন মামুন ভাই আছেন। বিপদে মধুসূদন কোন মামুন ভাই, না বলি। অনুষ্ঠান ৪ জুলাই ২০২৫। সন্ধ্যা ছয়টায়। আমার সঙ্গে মঈন ভাই যাবেন। কথাসাহিত্যিক মঈন আহমেদ। দেশে থাকলে খোকা ভাই (প্রকাশক মজিবর রহমান খোকা) যেতেন। আমি মাসুক ভাইকে বলেছি থাকতে। প্রতিকৃতিকর মাসুক হেলাল। দীর্ঘদিনের সখ্য আমাদের। 

মঈন ভাই আছেন, মাসুক ভাই থাকলে বুকে আরেকটু বল পাব।
মাহবুব আজীজ বিকেলে আসাদকে পাঠালেন। মঈন ভাই ও আমাকে নিয়ে গেল আসাদ। সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠান। লাউঞ্জেই প্রিয় দুজন মানুষকে একসঙ্গে পেয়ে গেলাম। মাসুক ভাই ও তারেক– আর্টিস্ট নাজিব তারেক। মাসুক ভাইয়ের হাত ধরলাম তো ধরলাম আর ছাড়াছাড়ি নাই।
‘মাসুক ভাই আপনি কিন্তু মঞ্চ পর্যন্ত যাবেন আমার সঙ্গে।’
‘যাব, ধ্রুব।’
আস্তে ধীরে কিছু অস্বস্তি কাটল। আশপাশে সব আপন মুখ দেখে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল মাহবুব আজীজের সঞ্চালনায়। কিছু মেয়ে চমৎকার নাচল। শামা রহমান গান করলেন। সকাতরে ওই ডাকিছে সকলে– এই সন্ধ্যার জন্য মনে থাকবে, আপা। আপার গানের পর সম্মাননা প্রদান।
মঞ্চের সিঁড়ি পর্যন্ত মাসুক ভাইয়ের হাত ধরে থাকলাম। মঞ্চে উঠলাম, সম্মাননা নিলাম। সকলের যে ভালোবাসা দেখলাম ভুলব না। ২০২৫-এ ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩-এর ‘বাস্তব’ সন্ধ্যা ভুলব না।
সেই সন্ধ্যা রাতের হুডি পরে নিল। আমি আবার আমাদের পরাবাস্তব টাউনে ফিরলাম। রাত বিদিক করে ফিরলাম।
আছি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজার বেইত হানুন শহর ধ্বংসের ছবি প্রকাশ করল ইসরায়েল
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৮০০ ছাড়াল
  • ভাঙছে পাড়, ঝুঁকিতে শতকোটি টাকার সেতু
  • রাস্তা করল উত্তর সিটি, উদ্বোধনে বিএনপি নেতা!
  • চার বছরের মধ্যে পাসের হার সর্বনিম্ন, অকৃতকার্যের রেকর্ড
  • আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনরাত্রির দৃশ্য
  • মোহামেডানে নেই সাফল্যের নায়ক দিয়াবাতে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি আরও বেড়েছে
  • ক্রেতা হারাবে চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ কারখানা
  • ইসরায়েলের দুর্ভেদ্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য তাহলে কি অনুপ্রবেশ দায়ী