স্বপ্নে বুনন যাওয়ায় বারণ নেই। এও সত্য যে, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করা সহজ নয়। আবার অসম্ভবও নয়। সেটি জানা আছে বলেই নিজের প্রতি বিশ্বাস ধরে রেখেছেন কণ্ঠশিল্পী আতিয়া আনিসা। কখনও সস্তা জনপ্রিয়তার স্রোতে গা ভাসাননি। বরাবরই চেয়েছেন, শ্রুতিমধুর গান গেয়ে শ্রোতার ভালোবাসা কুড়িয়ে নিতে। প্রতিটি আয়োজনে চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজের সেরা গায়কী তুলে ধরার। সেই সুবাদে যদি বুনে যাওয়া স্বপ্নগুলো একে একে পূরণ হয়ে যাচ্ছে তরুণ এ শিল্পীর। তাঁর কৈশোরের বাসনা, নন্দিত শিল্পী ও সংগীতায়োজক হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে গাওয়ার; যা এরই মধ্যে পূরণ হয়েছে।
হাবিবের সঙ্গে গাওয়া ‘হোক বাড়াবাড়ি’ ও ‘কোন খেয়ালে’ শিরোনামে দুটি গান গেয়ে শ্রোতার মনোযোগও কাড়তে পেরেছেন। হাবিব ছাড়াও শিল্পী ইমরানের সঙ্গে গাওয়া দ্বৈত গান ‘মেঘেরই খামে’, তাঁর ও আরেফিন রুমির ‘খুব আদরে’, আসিফ আকবরের সহশিল্পী হিসেবে গাওয়া ‘ভালোবাসি তোমাকেই’সহ আরও বেশ কিছু গান প্রশংসা কুড়িয়েছেন শ্রোতার।
এ ছাড়াও সংগীতপ্রেমীর মনে ছাপ ফেলেছে ‘বেহায়া মন’, ‘আয়না বায়না’, ‘জাদুর আয়না’ ও ‘চুপিচুপি ভালোবাসি’সহ আরও কিছু একক ও দ্বৈত গান। একইভাবে প্লেব্যাকের ইচ্ছাও অপূর্ণ থাকেনি এ শিল্পীর। প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে ‘যদি একদিন’ সিনেমায় শিরোনাম গান এবং ‘চুপকথা’, ‘শাহেনশাহ’র ‘তুই আমি চল’, ‘পাপ পুণ্য’র ‘তোর সাথে পথ’, ‘পরাণ’-এর ‘চলো নিরালায়’, ‘দিন: দ্য ডে’র ‘তোকে রাখব খুব আদরে’সহ আর কিছু গান গেয়ে সাড়া ফেলেছেন শ্রোতাদের মাঝে।
শুধু তাই নয়, স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারের প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও উঠেছে তাঁর ঝুলিতে। ২০২২ সালে ‘পায়ের ছাপ’ সিনেমায় গাওয়া ‘এই শহরের পথে পথে’ গানের জন্য পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। অবশ্য আতিয়া আনিসার ভক্তদের জন্য এ সবই পুরোনো খবর।
নতুন খবর হল- ‘জংলি’ সিনেমায় নন্দিত গীতিকবি ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে প্লেব্যাকের সুযোগ হয়েছে এ শিল্পীর। তাহসানের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া ‘জনম জনম’ শিরোনামের গানটি সংগীতায়োজন করেছেন সময়ের আরেক আলোচিত শিল্পী ও সংগীতায়োজক ইমরান মাহমুদুল। নতুন এ গানটি প্রকাশ পাবে আগামী ভালোবাসা দিবসে। এ নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত আতিয়া।
তাঁর কথায়, ‘কিংবদন্তিতুল্য সুরকার প্রিন্স মাহমুদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে; যার কালজয়ী গানগুলো শুনে শুনে বেড়ে ওঠা, সেই প্রিন্স মাহমুদের সুরে প্লেব্যাকের সুযোগ পাওয়ায় আমি গর্বিত। তাঁর সুরে গাওয়ার পাশাপাশি অনেক কিছু শেখারও সুযোগ হয়েছে। ভালো লাগার আরেকটি বিষয় হলো প্রিন্স মাহমুদের ‘জনম জনম’ গানের সহশিল্পী হিসেবে তাহসান খান এবং মিউজিক অ্যারেঞ্জার হিসেবে ইমরানকে পাওয়া। এর মাধ্যমে শিল্পীজীবনের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি চাই, এভাবেই স্বপ্ন পূরণের মধ্য দিয়ে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে। তাই যতদিন গাইতে পারব, মন-প্রাণ উজাড় করে গাইব। গানে গানেই শ্রোতা হৃদয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে ৬৮% কারখানা
দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩৮৫টি কারখানার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ন্যূনতম মজুরি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছে ৬৮ শতাংশ কারখানা। বাকি ৩২ শতাংশ বিভিন্ন কারণে সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এসব কারখানার মধ্যে ২২ শতাংশ আগের চেয়ে মজুরি বাড়িয়েছে।
সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ (স্টিচ) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এ গবেষণা করে। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে জরিপ করা হয়। স্টিচ একটি বহুদেশভিত্তিক কর্মসূচি, যা তৈরি পোশাক এবং বস্ত্র খাতের সরবরাহ চেইনে থাকা শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করে। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, মনডিয়া এফএনভি এবং ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন।
শ্রমিক সংখ্যা বিবেচনায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের হার বেশি। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ১ হাজার ১১৩ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি পান বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) থাকা সব কারখানা এবং ইপিজেডের বাইরে থাকা বড় কারখানাগুলো ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে। যেসব কারখানা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য।
জরিপের ফল নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শ্রমিক সংগঠন, উদ্যোক্তা, সরকার ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। তারা পোশাকশিল্পের ব্যয়, শ্রমিকদের জীবনমান, তাদের ব্যয়ের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও গবেষণার সুপারিশ করেন। তারা ন্যূনতম মজুরির ওপর শিল্পের অংশীজন নিয়ে সংলাপেরও পরামর্শ দেন।
জরিপে ঢাকার ১৩৫টি, গাজীপুরের ১২৮টি, নারায়ণগঞ্জের ৭১টি, চট্টগ্রামের ৪৬টি, ময়মনসিংহের ৪টি এবং কুমিল্লার ১টি কারখানাকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়। শ্রমিকদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ। শ্রমিকের বাইরে সরকার, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, উদ্যোক্তা, বাণিজ্য সংগঠন এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাতের ওপর সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ইপিজেডের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করে। ইপিজেডের বাইরের কারখানার জন্য নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, সব গ্রেডে আলাদা ন্যূনতম মজুরি রয়েছে। তৈরি পোশাক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত। এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি, যার অর্ধেকের বেশি নারী। কারখানার সংখ্যা চার হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য।
গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের পরিচালক (কর্মসূচি ও গবেষণা) মুনীর উদ্দীন শামীম সমকালকে বলেন, নমুনাভুক্ত যেসব কারখানা ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি তার বেশির ভাগই মাঝারি বা ছোট কারখানা। অন্যদিকে ইপিজেডভুক্ত এবং বড় কারখানার বেশির ভাগ অতি অল্পসময়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে পেরেছে। বাস্তবায়নকারী কারখানার ৮০ শতাংশ বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএর সদস্য। এর মানে তারা সরাসরি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। এ প্রবণতার একটি অর্থ হচ্ছে– কারখানাগুলোর বিদ্যমান সক্ষমতা মজুরি বাস্তবায়নে একটি বড় ফ্যাক্টর।
তিনি বলেন, গবেষণায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, মজুরি বাড়ার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্রেতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পণ্যের দাম না বাড়ানো, প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা না থাকা, সরকারি সহযোগিতার অভাব, কিছু ক্ষেত্রে মালিকদের অনিচ্ছা, নিয়মিত ও ধারাবাহিক কার্যাদেশ না থাকা ইত্যাদি। অনেকে বলেছেন, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সেবা খাতে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। অংশীজনরা আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় এমন মত এসেছে যে, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে তদারকি সংস্থাগুলোর তেমন কার্যকর উদ্যোগও দেখা যায় না। এছাড়া কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছে। কারখানা পর্যায়ে একটি কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা গেলে এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষের মধ্যে কার্যকর সামাজিক সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি করতে পারলে পারস্পরিক জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন আরও সহজতর হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করেন।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, যারা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে না, তাদের ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো– ক্রেতা ন্যায্য দাম দিচ্ছে না। তিনি জানান, কোনো কোনো কারখানার মালিক শ্রমিকদের নিয়োগের সময় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের অক্ষমতার কথা আগেই বলে নেন। তবে ন্যূনতম মজুরি সব কারখানার বাস্তবায়ন করা উচিত। এ কারণে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ব্র্যান্ড–ক্রেতাদের সংগঠনগুলোকে পোশাকের দাম বাড়ানোর জন্য মধ্যস্ততা করতে হবে।
জরিপে পাওয়া আরও কিছু তথ্য
ন্যূনতম মজুরি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না করা কারখানার ৩৩ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের পরিচালন ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ২৪ শতাংশ জানিয়েছে, তারা ব্র্যান্ড ক্রেতাদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। যারা বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের ৭৫ শতাংশ খরচ বাড়ার কথা জানিয়েছেন। জরিপের আওতায় থাকা ৮৩ শতাংশ কারখানা জানিয়েছে, নতুন মজুরি বাস্তবায়নে তারা সরকার কিংবা ক্রেতার সহযোগিতা পাননি। ইপিজেডের ১৮ শতাংশ এবং ইপিজেডের বাইরের ৩৩ শতাংশ কারখানা ক্রেতারা কিছুটা দাম বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের মজুরি বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। কেননা বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বেশি হারে। অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর বেতনের বৈষম্য রয়েছে।