ভাষার ভিত্তিতে গঠিত বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র। জাতিরাষ্ট্রের আত্মপরিচয়ে সংস্কৃতির পরিচয় মুখ্য। সেই ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির জাগরণী ভূমিকায় আমৃত্যু তৎপর ছিলেন নাট্যকার সেলিম আল দীন। তাঁর ১৮তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ১০, ১১, ১২, ১৩ জানুয়ারি শিল্পকলায় আয়োজিত ‘সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব ও ৭৫তম জয়ন্তী’র সেমিনারে গবেষক আবু সাঈদ তুলুর বক্তব্যে এমনটিই ফুটে উঠেছিল। আয়োজন করেছিল সেলিম আল দীন সংগ্রহশালা।
চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতিদিন একটি করে সেমিনার, সেলিম আল দীন তথ্য প্রদর্শনীসহ ঐতিহ্যবাহী গাজীর গান ও সেলিম আল দীন রচিত নাটকের উপস্থাপনও ছিল। আয়োজকদের উদ্দেশ্য ছিল সেলিম আল দীনের দর্শন-চিন্তা-কর্মকে তরুণ প্রজন্মের কাছে পরিচিত করিয়ে তাদের দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশী মনোবৃত্তিতে আগ্রহী করে তোলা। আহ্বায়ক মো.
চার দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে ১০ জানুয়ারি, বিকেল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির কনফারেন্স কক্ষে উদ্বোধন ও উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলা নাটক বিশ্বমুখী করার পেছনের কারিগর হিসেবে সেলিম আল দীনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। উদ্বোধনের পর প্রথম সেমিনারের সভাপতি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘একশত বছরে বড় যে সংখ্যক লেখক বাংলা ভাষায় হওয়া উচিত ছিল– তা হয়নি। যতজন হয়েছেন, তাদের ভেতর সেলিম আল দীন একজন।’
‘সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব ও ৭৫তম জয়ন্তী’র চার দিনের ৪টি সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন যথাক্রমে– জাহারাবী রিপন, লাবণ্য মণ্ডল, তারেক রেজা ও আবু সাঈদ তুলু। সেমিনারগুলোয় আলোচকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইউসুফ হাসান অর্ক, হামিম কামরুল হক, কুদরত ই হুদা, সোহেল হাসান গালিব, রকিব লিখন, অনিকেত শামীম, ইসলাম শফিক, অসীম কুমার নট্ট, জাহিদ রিপন, ফজলে রাব্বি সুকর্ন প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে– মোহাম্মদ আজম, শহীদুল মামুন, ফয়েজ আলম ও গোলাম শফিক। ১২ ও ১৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হলের লবিতে সেলিম আল দীনসংক্রান্ত তথ্য প্রদর্শনী হয়। এতে সেলিম আল দীনের ওপর ১১টি এমফিল গবেষণা, ২৫টি পিএইচডি গবেষণার নানা তথ্য প্রদর্শন করা হয়। তা ছাড়াও সেলিম আল দীনকে নিয়ে নানা গ্রন্থ, পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, নানা ধরনের প্রবন্ধ প্রদর্শন করা হয়। সেলিম আল দীননির্ভর বৈচিত্র্যময় নানা তথ্য-ডকুমেন্ট প্রদর্শন করা হয়।
১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এক্সপেরিমেন্টাল হলে সন্ধ্যা ৭টায় প্রদর্শিত হয় গাজীর গান। গাজীর গান পরিবেশন করেন মানিকগঞ্জের জামশা থেকে আসা আজিজের দল। প্রায় দু’ঘণ্টা সময় টান টান উত্তেজনায় নৃত্য-গীত-অভিনয় সহযোগে বাংলার ঐতিহ্যবাহী গায়েন রীতিতে গাজীর জন্মখন্ডের পালাটি উপস্থাপিত হয়। ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় এ হলে প্রদর্শিত হয় সেলিম আল দীন রচিত নাটক ‘ধাবমান’। নাটকটি পরিবেশন করেন সেলিম আল দীন প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা অভিনয়সহ উপস্থাপনার কুশলীর ভূমিকা পালন করেন। নাটকটির নির্দেশনা দেন সেলিম আল দীনের ছাত্র আনন জামান।
জীবের মুক্তি পালানোর মধ্য দিয়ে হতে পারে না। জীবনের অনিবার্যকে মানার মধ্যে মুক্তি। মৃত্যুর মধ্যে প্রকৃত মুক্তি এমনই ভাব ফোটে ওঠে নাটকে। একটি ষণ্ড মহিষকে কেন্দ্র করে এ নাটকের আখ্যান আবর্তিত। সেলিম আল দীন তাঁর শিল্পাদর্শে উপনিবেশের জ্ঞানতত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। নাট্যকার-অধ্যাপক আনন জামান নির্দেশিত সেলিম আল দীন রচিত এ ‘ধাবমান’ নাটকেও উপনিবেশ জ্ঞানাদর্শকে প্রত্যাখ্যান করে নৃত্য-গীত-অভিনয়-সংগীতের ঐক্যনির্ভর চারদিকে দর্শকবেষ্টিত মঞ্চে আবহমান বাংলা শিল্পনন্দনে উপস্থাপিত হয়। প্রাণবন্ত অভিনয়, টান টান ঘটনা বিন্যাস, কালারফুল লাইট, হৃদয়ভেদী সংগীত ও অনবদ্য নাট্য পরিবেশে অনন্য উপস্থাপন ‘ধাবমান’। চার দিনের ঢাকা পর্ব শেষে ১৪ জানুয়ারি প্রয়াণ দিবসে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে সেলিম আল দীনের সমাধিতে সকাল ১০টায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে এ বছরের স্মরণোৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ল ম আল দ ন এক ড ম র প রদর শ উপস থ প শ ল পকল পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
শাবানার আজ জন্মদিন
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি শাবানা। রবিবার (১৫ জুন) এ অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সিনেমার অবিস্মরণীয় এই তারকা। তার প্রকৃত নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। কিন্তু সারা দেশের মানুষ তাকে হৃদয়ে ধারণ করে ‘শাবানা’ নামে।
মাত্র ১০ বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘নতুন সুর’ (১৯৬২) সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়ে অভিষেক হয় শাবানার। সেখান থেকে শুরু—তারপর এক দীর্ঘ পথচলা, যেখানে শাবানা হয়ে ওঠেন একের পর এক যুগান্তকারী সিনেমার মুখ। চার দশকের ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলা সিনেমার আকাশে নিজেকে স্থায়ী নক্ষত্রে রূপান্তরিত করেন।
‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘চাঁপা ডাঙার বউ’, ‘আক্রোশ’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘বাংলার নায়ক’—এমন অসংখ্য কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকের মনে দাগ কেটেছেন শাবানা। জনপ্রিয়তা ও অভিনয়গুণে অনন্য এক শিল্পী, যিনি রোমান্স থেকে শুরু করে সমাজধর্মী, দেশপ্রেম বা পারিবারিক—সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন।
আরো পড়ুন:
‘অত্যাচারী’ স্বামীর মৃত্যুতে কারিশমার শোক, যা বললেন জয়া
দর্শক বলছেন আমি যেন শুভ ভাইকে বিয়ে করি: মন্দিরা
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাবানা। প্রযোজক হিসেবেও পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। নাট্য ও সংস্কৃতি জগৎ থেকেও অর্জন করেছেন বাচসাস, নাট্যসভা, ললিতকলা একাডেমি ও কথক একাডেমি পুরস্কার।
ব্যক্তিজীবনে ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন সরকারি কর্মকর্তা ও প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিককে। তিন সন্তানের জননী শাবানা ১৯৯৭ সালে হঠাৎ করেই অভিনয় জীবন থেকে বিদায় নেন। ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি।
অভিনয়ে ফিরবেন কি না, সে প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। কিন্তু শাবানা এমন এক নাম, যার অবদান আর স্মৃতিময়তা কখনো ম্লান হওয়ার নয়।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত