আল্লু-এনটিআরদের কাছে কেন ধরাশায়ী সালমান-অক্ষয়রা
Published: 16th, January 2025 GMT
একটা সময়ে বলিউডের সিনেমা রিমেক করতো ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু এখনকার চিত্র ভিন্ন। অথচ এমন চিত্র একযুগ আগেও কল্পনার বাইরে ছিল। এখন তা বাস্তবে। বলিউড তাকিয়ে থাকে তামিল-দক্ষিণীর দিকে। তাদের সিনেমাগুলো গর্ব নিয়েই রিমেক করে। এই রিমেকের তালিকায় বাদ যাচ্ছেন না সালমান, অক্ষয় ও অজয় ও শহীদ কাপুরের মত অভিনেতারা।
বিশেষ করে গেল কয়েক বছরে দক্ষিণী তারকা আল্লু অর্জুন, এনটিআর জুনিয়র, রামচরণ, প্রভাস ও যশ পুরোপুরি জ্বলে উঠেছেন। তাদের সিনেমার ধারের কাছেও আসছে পারছে না বলিউডের সিনেমা।
বলিউড তারকা শাহরুখ খান ছাড়া কেউ ভালো সুপারহিট ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিতে পারেনি। বড় বড় সুপারস্টারদের অভিনীত বিগ বাজেটের সিনেমাও ধরাশয়ী হচ্ছে তামিল সিনেমার কাছে।
ভারতীয় সিনেমা সংশ্রিষ্টদের মতে, গেলে কয়েক বছর দক্ষিণী সুপারহিট সিনেমাগুলো রিমেক করতে দেখা যায় বলিউডে। এমনকি সেসব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নায়ক-নায়িকাকেও বলিউডে নিত্যনৈমিত্তিক ভাবে ব্রেক দেয়া হচ্ছে। বলিউডের চেয়েও বেশি বাজেটের সিনেমা নির্মাণের সাহস করছেন তারা।
বিগত কয়েক বছরে মুক্তি পাওয়া বলিউড বনাম দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা নিয়ে তর্ক প্রকাশ্যে এসেছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন অভিতাভ বচ্চন, আমির খান, কঙ্গনা রনৌতসহ বলিউডের বড় তারকারা। যদিও এই বিতর্ককে গায়েই মাখছে বলিউড। তবে এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে বলিউড সিনেমা কেবল নামেই থাকবে। সে জায়গায় তামিল-তেলেগু ইন্ডাষ্ট্রিই রাজত্ব করবে।
বাজেট আর স্বকীয় নির্মাণ স্টাইল দক্ষিণী সিনেমা বেশ জনপ্রিয় এখন সারা ভারতে। শুধু ভারতেই নয়। সারাবিশ্বে তারা মার্কেট গেড়ে বসেছে। দক্ষিণী ছবির এই জয়জয়কারের সময় বলিউডের নিজস্ব ঘরানার সিনেমা প্রতিনিয়ত মার খেয়ে যাচ্ছে। গেলো কয়েক বছরে তার প্রমাণও মিলেছে।
বক্স অফিসের হিসেব মোতাবেক, ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় করা ৫ সিনেমা যথাক্রমে ‘দাঙ্গাল’, ‘পুষ্পা-দ্য রুল’, ‘আরআরআর’, ‘বাহুবলী ২’ ও ‘কেজিএফ-২’। এই পাঁচটির মধ্যে ‘পুষ্পা-দ্য রুল’, ‘আরআরআর’ ও ‘বাহুবলী ২’, ও ‘কেজিএফ’ দক্ষিণী ইন্ডাস্টির সিনেমা। এর মধ্যে ‘পুষ্পা-দ্য রুল’ মুক্তি পেয়েছে ২০২৪ সালে। ‘আরআরআর’ ও ‘কেজিএফ’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ২০২২ সালে। এবং ‘বাহুবলী ২’ মুক্তি পেয়েছে ২০১৭ সালে। একটি বলিউডের ‘দাঙ্গাল’ এটি মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। এই তালিকার দিকে তাকালেই বলিউডের বাইরের ইন্ডাষ্ট্রির সাফল্য অনুমেয়। তারা যে ক্রমেই দৈত্বের মত বিস্তৃত পাচ্ছে তা স্পষ্টা।
সম্প্রতি বেশিরভাগ বলিউড প্রযোজক, পরিচালক এমনকি তারকারাও দক্ষিণী ছবিমুখী হয়ে পড়েছেন। ২০২৩ সালেও শাহরুখের ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ আয় করা ‘জাওয়ান’ সিনেমার নির্মাতা অ্যাটলিও কুমারও দক্ষিণী নিমাতা। আয়ের দিকে থেকে ভারতের ইতিহাসে এটি ষষ্ট নম্বরে। শোনা যাচ্ছে, এই নির্মাতার জন্য নাকি মুখিয়ে আছেন বলিউড ভাইজান সালমান খানও। সামনে আসছে এই জুটির নতুন সিনেমা। গেল মাসেই ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনেমাটি একটি মহাকাব্যিক কাহিনী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বলিউডের সফল পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম নির্দেশক সঞ্জয় গুপ্তা। ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’, ‘কাবিল’, ‘মুসাফির’-এর মতো ছবির পরিচালক তিনি। সঞ্জয়ের মতে, ইন্ডাস্ট্রিতে এই মুহূর্তে ভালো পরিচালকের বেশ অভাব। সেটি একটি অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে হিন্দি ছবির ব্যর্থতার পেছনে। আগের মতো কোথায় সেই ভালো পরিচালক, যারা দুরন্ত সব গল্প, চিত্রনাট্য নিয়ে ছবি তৈরি করতে পারতেন।
দক্ষিণী সিনেমা বনাম বলিউড সিনেমার তর্ক নিয়ে কয়েকমাস আগেই কথা বলেছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। বক্তব্যে অমিতাভ দক্ষিণি সিনেমার প্রশংসা করেন। কিন্তু বলিউডের তুলনায় দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে যে এখন বেশি ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে মানতে নারাজ বর্ষীয়ান অভিনেতা। অমিতাভের যুক্তি, ‘আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রিতে খুব ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি যে, হিন্দি ছবির গল্পকেই ওরা নতুন মোড়কে হাজির করছেন।
অভিনেতা জানান, তার সুপারহিট ‘দিওয়ার’, ‘শোলে’ বা ‘শক্তি’ সিনেমা বহু দক্ষিণি ছবি তৈরির নেপথ্যে অনুপ্রেরণার কাজ করেছে। এই মুহূর্তে মালয়ালাম এবং তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে মৌলিক ছবির যে গুণগত মান, তার কথা উল্লেখ করেন বিগ বি। একই সঙ্গে বলেন, ‘কিন্তু এর মানে কোনো নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের দিকে আঙুল তুলে ওরা ভালো করছে আর আমরা পারছি না, সেটা বলা ঠিক নয়।’
এর আগে দক্ষিণী সিনেমার ধারাবাহিক সাফল্য দেখে একাধিকবার বলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে তুলোধুনো করেছেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতে। নেপোটিজম, ইন্ডাট্রিতে হানাহানি, নায়কদের একরোখা আচরণের বিষয়েও কথা বলেন তিনি। সেই সঙ্গে শাহরুখ খানের ‘জাওয়ান’ সিনেমা সাফল্যের পর বলিউডকে এক হয়ে কাজ করতেও বলেন কঙ্গনা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র মচরণ
এছাড়াও পড়ুন:
ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান
ভুলক্রমে সীমানায় ঢুকে পড়ায় পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে আটক হয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য পুর্নমকুমার সাউ। ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে তিনবার পতাকা বৈঠকে বসলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি বিএসএফের অনুরোধেও কর্ণপাত করছে না পাকিস্তান। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা থেকে পঠানকোট বিএসএফ দপ্তরে স্বামীর সর্বশেষ খবর জানিত ছুটে গেছেন পুর্নমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও পরিবার।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পেহেলগাও সন্ত্রাসবাদী হামলা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার ভুল করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে আটক হন বিএসএফ সদস্য পুর্নমকুমার সাউ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রিষড়া পৌরসভার ১৩ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। পুর্নম পাঠানকোটের ফিরোজপুর বর্ডারে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি চব্বিশ ব্যাটেলিয়ানের বিএসএফ কনস্টেবল।
বিএসএফ সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব পালনকালে কড়া রোদে ক্লান্ত হয়ে পড়লে গাছের নিচে আশ্রয় নেন পুর্নম। এ সময় তিনি ভুল করে বর্ডার পেরিয়ে গেলে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে আটক হন। এ দিকে ঘটনার পর তিনবার পাকিস্তানি রেঞ্জারদের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছে বিএসএফ। কিন্তু তারা পুর্নমকুমার সাউকে ফিরিয়ে দেয়নি।
স্বামীর এমন দুঃসংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী। শেষবার হোলির সময় ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন পুর্নম। গত ৩১ মার্চ কাজে যোগ দেন তিনি।
পুর্নমের বাবা ভোলানাথ সাউ জানান, ছেলেকে নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। কোনো খবর পাচ্ছেন না। বিএসএফ কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে তাকে জানানো হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে ছেলেকে মুক্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন।
সীমান্তরক্ষীদের ভুল করে নিয়ন্ত্রণরেখা পার হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে দুই বাহিনীর বৈঠকের পরে তাদের মুক্তিও দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি ভিন্ন। পাক রেঞ্জার্সের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। গত শুক্রবার পর্যন্ত এই ইস্যুতে তিনবার পতাকা বৈঠকে বসেছেন বিএসএফ এবং পাক রেঞ্জার্সের প্রতিনিধি দল। কিন্তু মিমাংসা হয়নি।
এরপরই রবিবার পুর্নমের বাড়ি যান বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা পুর্নমকে মুক্ত করে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন। যদিও মৌখিক কথায় আর ভরসা রাখতে রাজি নন রজনী। এ কারণে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আজ সোমবার পাঠানকোটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখানে তথ্য না পেলে দিল্লি গিয়ে স্বামীর খবর জানতে চাইবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএসএফের পরিচালক জেনারেল দলজিৎ চৌধুরী জানিয়েছেন ঘটনার পরে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখায় উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুর্নমকুমার সাউকে ফিরিয়ে আনতে সব রকমের চেষ্টা চলছে। এমনকি পাকিস্তানি রেঞ্জারদের সঙ্গে কমান্ডার স্তরে বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুচরিতা/তারা