একটা সময়ে বলিউডের সিনেমা রিমেক করতো ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু এখনকার চিত্র ভিন্ন। অথচ এমন চিত্র একযুগ আগেও কল্পনার বাইরে ছিল। এখন তা বাস্তবে। বলিউড তাকিয়ে থাকে তামিল-দক্ষিণীর দিকে। তাদের সিনেমাগুলো গর্ব নিয়েই রিমেক করে। এই রিমেকের তালিকায় বাদ যাচ্ছেন না সালমান, অক্ষয় ও অজয় ও শহীদ কাপুরের মত অভিনেতারা।

বিশেষ করে গেল কয়েক বছরে দক্ষিণী তারকা আল্লু অর্জুন, এনটিআর জুনিয়র, রামচরণ, প্রভাস ও যশ পুরোপুরি জ্বলে উঠেছেন। তাদের সিনেমার ধারের কাছেও আসছে পারছে না বলিউডের সিনেমা।

বলিউড তারকা শাহরুখ খান ছাড়া কেউ ভালো সুপারহিট ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিতে পারেনি।  বড় বড় সুপারস্টারদের অভিনীত বিগ বাজেটের সিনেমাও  ধরাশয়ী হচ্ছে তামিল সিনেমার কাছে।

ভারতীয় সিনেমা সংশ্রিষ্টদের মতে, গেলে কয়েক বছর দক্ষিণী সুপারহিট সিনেমাগুলো রিমেক করতে দেখা যায় বলিউডে। এমনকি সেসব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নায়ক-নায়িকাকেও বলিউডে নিত্যনৈমিত্তিক ভাবে ব্রেক দেয়া হচ্ছে। বলিউডের চেয়েও বেশি বাজেটের সিনেমা নির্মাণের সাহস করছেন তারা।

বিগত কয়েক বছরে মুক্তি পাওয়া বলিউড বনাম দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা নিয়ে তর্ক প্রকাশ্যে এসেছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন অভিতাভ বচ্চন, আমির খান, কঙ্গনা রনৌতসহ বলিউডের বড় তারকারা। যদিও এই বিতর্ককে গায়েই মাখছে  বলিউড। তবে এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে বলিউড সিনেমা কেবল নামেই থাকবে। সে জায়গায় তামিল-তেলেগু ইন্ডাষ্ট্রিই রাজত্ব করবে।

বাজেট আর স্বকীয় নির্মাণ স্টাইল দক্ষিণী সিনেমা বেশ জনপ্রিয় এখন সারা ভারতে। শুধু ভারতেই নয়। সারাবিশ্বে তারা মার্কেট গেড়ে বসেছে। দক্ষিণী ছবির এই জয়জয়কারের সময় বলিউডের নিজস্ব ঘরানার সিনেমা প্রতিনিয়ত মার খেয়ে যাচ্ছে। গেলো কয়েক বছরে তার প্রমাণও মিলেছে।

বক্স অফিসের হিসেব মোতাবেক, ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় করা ৫ সিনেমা যথাক্রমে ‘দাঙ্গাল’, ‘পুষ্পা-দ্য রুল’, ‘আরআরআর’, ‘বাহুবলী ২’ ও ‘কেজিএফ-২’। এই পাঁচটির মধ্যে ‘পুষ্পা-দ্য রুল’, ‘আরআরআর’ ও ‘বাহুবলী ২’, ও ‘কেজিএফ’ দক্ষিণী ইন্ডাস্টির সিনেমা। এর মধ্যে ‘পুষ্পা-দ্য রুল’ মুক্তি পেয়েছে ২০২৪ সালে। ‘আরআরআর’ ও ‘কেজিএফ’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ২০২২ সালে। এবং ‘বাহুবলী ২’ মুক্তি পেয়েছে ২০১৭ সালে। একটি বলিউডের ‘দাঙ্গাল’ এটি মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। এই তালিকার দিকে তাকালেই বলিউডের বাইরের ইন্ডাষ্ট্রির সাফল্য অনুমেয়। তারা যে ক্রমেই দৈত্বের মত বিস্তৃত পাচ্ছে তা স্পষ্টা। 

সম্প্রতি বেশিরভাগ বলিউড প্রযোজক, পরিচালক এমনকি তারকারাও দক্ষিণী ছবিমুখী হয়ে পড়েছেন। ২০২৩ সালেও শাহরুখের ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ আয় করা ‘জাওয়ান’ সিনেমার নির্মাতা অ্যাটলিও কুমারও দক্ষিণী নিমাতা। আয়ের দিকে থেকে ভারতের ইতিহাসে এটি ষষ্ট নম্বরে। শোনা যাচ্ছে, এই নির্মাতার জন্য নাকি মুখিয়ে আছেন বলিউড ভাইজান সালমান খানও। সামনে আসছে এই জুটির নতুন সিনেমা। গেল মাসেই ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনেমাটি একটি মহাকাব্যিক কাহিনী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বলিউডের সফল পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম নির্দেশক সঞ্জয় গুপ্তা। ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’, ‘কাবিল’, ‘মুসাফির’-এর মতো ছবির পরিচালক তিনি। সঞ্জয়ের মতে, ইন্ডাস্ট্রিতে এই মুহূর্তে ভালো পরিচালকের বেশ অভাব। সেটি একটি অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে হিন্দি ছবির ব্যর্থতার পেছনে। আগের মতো কোথায় সেই ভালো পরিচালক, যারা দুরন্ত সব গল্প, চিত্রনাট্য নিয়ে ছবি তৈরি করতে পারতেন।

দক্ষিণী সিনেমা বনাম বলিউড সিনেমার তর্ক নিয়ে কয়েকমাস আগেই কথা বলেছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। বক্তব্যে অমিতাভ দক্ষিণি সিনেমার প্রশংসা করেন। কিন্তু বলিউডের তুলনায় দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে যে এখন বেশি ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে মানতে নারাজ বর্ষীয়ান অভিনেতা। অমিতাভের যুক্তি, ‘আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রিতে খুব ভালো ছবি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি যে, হিন্দি ছবির গল্পকেই ওরা নতুন মোড়কে হাজির করছেন।

অভিনেতা জানান, তার সুপারহিট ‘দিওয়ার’, ‘শোলে’ বা ‘শক্তি’ সিনেমা বহু দক্ষিণি ছবি তৈরির নেপথ্যে অনুপ্রেরণার কাজ করেছে। এই মুহূর্তে মালয়ালাম এবং তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে মৌলিক ছবির যে গুণগত মান, তার কথা উল্লেখ করেন বিগ বি। একই সঙ্গে বলেন, ‘কিন্তু এর মানে কোনো নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের দিকে আঙুল তুলে ওরা ভালো করছে আর আমরা পারছি না, সেটা বলা ঠিক নয়।’

এর আগে দক্ষিণী সিনেমার ধারাবাহিক সাফল্য দেখে একাধিকবার বলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে তুলোধুনো করেছেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতে। নেপোটিজম, ইন্ডাট্রিতে হানাহানি, নায়কদের একরোখা আচরণের বিষয়েও কথা বলেন তিনি। সেই সঙ্গে শাহরুখ খানের ‘জাওয়ান’ সিনেমা সাফল্যের পর বলিউডকে এক হয়ে কাজ করতেও বলেন কঙ্গনা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র মচরণ

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝগড়া থেকে দেয়ালে মাথা ঠোকা, সালমান-ঐশ্বরিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে প্রকাশ্যে আনলেন প্রতিবেশী
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন