বিএনপির কবজায় ৮ পদ অন্যদের ভাগে ৪
Published: 18th, January 2025 GMT
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আগের মতোই বেসরকারি কারা পরিদর্শক নিয়োগ নিয়ে ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি হয়েছে। একসময় নিরপেক্ষ দানবীর, সমাজসেবক ও মানবাধিকারকর্মীরা নিয়োগ পেতেন। আওয়ামী লীগ সরকার সেই ধারা ভেঙে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়োগ দিয়ে প্রথম বিতর্ক সৃষ্টি করে। ৫ আগস্টের পরও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। নিরপেক্ষ ও প্রকৃত সমাজসেবকদের নিয়োগের পরিবর্তে কারা পরিদর্শক হিসেবে রাজনৈতিক দলীয় ব্যক্তিরা নিয়োগ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের জায়গায় এবার ছাত্রদল, মহিলা দল ও বিএনপির আট নেতা নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া নিয়োগ পেয়েছেন একজন ছাত্র সমন্বয়ক, এলডিপির একজন নেতা, একজন এনজিওকর্মী এবং একজন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে একসময় কারাগারে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারও রয়েছেন।
অলাভজনক পদ হলেও কারা পরিদর্শক হয়ে অতীতে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে কারাগারে জামিনে বন্দি মুক্তি বাণিজ্য, অবৈধ সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, নিষিদ্ধ মোবাইল, মাদক সরবরাহসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১২ পদে নিয়োগ পেতে এবার বিএনপি ছাড়াও দেড় শতাধিক উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সমন্বয়ক ও মানবাধিকারকর্মী আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্য থেকে বৃহস্পতিবার ১২ জন কারা পরিদর্শক নিয়োগ করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড.
ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে এ পদে নিয়োগের যে সুপারিশ এসেছিল, তার আলোকে এদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের বেশির ভাগেরই রাজনৈতিক পরিচয় জানা নেই।
নতুন কারা পরিদর্শক জোবাইরুল আলম মানিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার একজন সমন্বয়ক। অন্যরা হলেন– চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম তৌহিদ, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, নগর যুবদলের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সদস্য জাফর আহম্মদ, নগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক কামরুন নাহার লিজা ও নগর মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মৎ সুলতানা বেগম। বাকি তিনজন হলেন– এলডিপির যুব সংগঠন দক্ষিণ জেলা লিবারেল গণতান্ত্রিক যুবদলের দপ্তর সম্পাদক উজ্জল বরণ বিশ্বাস, এনজিও আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন এবং বদরপাতি যুব গোষ্ঠী নামে একটি সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ আবুল বশর। এদের মধ্যে বিগত বিএনপি সরকার আমলে কারাগারে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার ছিলেন মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।
নতুন কারা পরিদর্শক নাসির উদ্দিন বলেন, আজ থেকে ২০ বছর আগে কারাগারে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছি। নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডারে অংশ নিয়ে কারাগারের খাদ্য সরবরাহ করেছি।
নগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক কামরুন নাহার লিজা বলেন, কারা পরিদর্শক পদে আগে কখনও ছিলাম না। তাই অভিজ্ঞতা না থাকলেও বন্দিদের কল্যাণে কাজ করতে হবে সেটা জানি। সেভাবেই কাজ করব।
ছাত্র সমন্বয়ক জোবাইরুল ইসলাম মানিক বলেন, এটা আমার কাছে একটি চ্যালেঞ্জ। কারাগারে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ, শৃঙ্খলা ও বন্দিসহায়ক পরিবেশ রক্ষায় কাজ করব।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষের আশা ছিল মানবিক, দানশীল ও প্রকৃত মানবসেবকরাই এ পদ পাবেন। আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় লোক নিয়োগ দিয়ে কারাগার অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছিল, তা থেকে আমরা বের হতে পারলাম না। এবারও দলীয় লোক নিয়োগ পাওয়ায় ভালো কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। শুধু চেহারা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ দল র স ব ক সমন বয়ক য বদল র সরবর হ ক জ কর ব এনপ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।
আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।
এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।
এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকতুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।
ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫