লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের বর্ণিল পিঠা উৎসব
Published: 18th, January 2025 GMT
শীতের মিষ্টি রোদে হরেক রকমের পিঠার সমারোহে লক্ষ্মীপুরে হয়ে গেল শিক্ষার্থীদের বর্ণিল পিঠা উৎসব। তিন শতাধিক পিঠার পসরা সাজিয়ে শতাধিক স্টল নিয়ে বসে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দারুণ এ আয়োজন দেখতে ও পিঠার স্বাদ নিতে ক্যাম্পাসে ছিল বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ভিড়।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে এ আয়োজন করা হয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ পিঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে শীতের মৌসুমে এ আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। ফুলে সজ্জিত ফিতা কেটে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার।
ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সম্রাট খীসা, উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সবুজ, পরিচালক হাছান মাহমুদ। পরে তারা পিঠার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।
আরো পড়ুন:
পাকা আমের মালপোয়া
পিঠা উৎসবে ঘুরে সুকন্যাদের পিঠার দোকান, নবান্নের পিঠা ঘর, পিঠার সমাহার, ঢেঁকির বৈঠক খানা, নোয়া চাইলে নোয়া হিডা, পিঠা আড্ডা, টুনটুনিদের পিঠা ঘর ও পিঠা অরণ্যসহ বিভিন্ন নামে শতাধিক দোকান দেখা যায়।
এতে পদ্মার ইলিশ পিঠা, পাটি সাপটা, পান্তুয়া, জেলি কেক, বরফি, দুধ চিতল, ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, ঝুনঝুনি পিঠা, মুগ পাকন, ক্ষীর পাটি সাপটা, হৃদয় হরণ, নারিকেল বেলি পিঠা, ডাল পাকন, শুকনা পিঠা, লতা পিঠা, শামুক পিঠা, সাকুর পিঠাসহ তিন শতাধিক পিঠা দেখা গেছে। একেকটির স্বাদ একেক রকম। একেকটি দোকানে ৫০ ধরনের পিঠা থাকলেও সবগুলোর নামও অজানা শিক্ষার্থীদের।
ছাত্র-ছাত্রী কয়েকজন বলেন, ‘‘পিঠাগুলো আমরা মাসহ অন্যদের সহযোগিতায় বানিয়েছি। অনেক পিঠার নাম আমরা জানতাম না। এ আয়োজনের মাধ্যমে পিঠাগুলো বানানো শিখলাম। পিঠার নামও শিখতে পেরেছি। প্রিয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ পাওয়াটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’’
পিঠা উৎসব দেখতে আসা রবিউল ইসলাম, আরমোন হোসেন ও আফরোজা আক্তার বলেন, ‘‘পিঠা উৎসবের খবর পেয়ে আমরা দেখতে এসেছি। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি এমন আয়োজন করে থাকে। এবারের আয়োজনটি মনমুগ্ধকর ছিল। আমরা কয়েকটি পিঠা খেয়েছি। মজার খাবার ছিল।’’
প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, ‘‘এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শীতকালে আমরা পিঠা উৎসবের আয়োজন করে আসছি। সবগুলো পিঠা অভিভাবকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে। এবার প্রতিটি স্টলে নতুন নতুন ধরনের পিঠা দেখছি। আয়োজনটি শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে উপভোগ করছে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজনের উপস্থিতি সরব রয়েছে।’’ প্রতি বছরই এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, ‘‘পিঠা উৎসব অসাধারণ আয়োজন ছিল। গ্রামীণ ঐতিহ্য ধারণে এ আয়োজন প্রশংসনীয়। এ উৎসবটি পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রত্যেকটি স্টল ঘুরে দেখেছি। সত্যিই অভিভূত।’’
পিঠা উৎসবের মাধ্যমে গ্রামবাংলার সেই হারানো ঐতিহ্য আবারও শহরে ফিরে আসবে এমনটিই মনে করেন জেলা প্রশাসক।
ঢাকা/লিটন/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গোলের উৎসবের ম্যাচে বার্সা-ইন্টারের রুদ্ধশ্বাস ড্র
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল মানেই তো উত্তেজনার চূড়ান্ত রূপ। আর মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কাতালোনিয়ার মন্টজুইকে যা দেখা গেল— তা যেন শুধুই একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, বরং ছয় গোলের অনির্দেশ্য গল্প। যেখানে বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে একসঙ্গে রচনা করল রোমাঞ্চ আর বীরত্বের এক অপূর্ব মহাকাব্য। দুইবার পিছিয়ে পড়েও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ৩-৩ গোলে সমতা টানল কাতালান জায়ান্টরা।
ম্যাচ শুরুই হলো যেন বজ্রপাত দিয়ে। সময়ের কাঁটায় মিনিটও পেরোয়নি। এর মধ্যেই ইন্টারের মার্কুস তুরাম এক চতুর ব্যাকহিল ফিনিশে বল ঠেলে দেন জালে। সেই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো কাতালান রক্ষণভাগ। এরপর ২১ মিনিটে কর্নার থেকে ডেনজেল ডামফ্রিসের অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে যেন বার্সার হৃদয়েই ঘা লাগে, ইন্টারের লিড তখন ২-০ গোলে।
তবে ইতিহাস বলে— বার্সেলোনার যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখনই তারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই ধারাতেই, ডানদিক থেকে দুরন্ত ছন্দে এগিয়ে এসে বক্সে ঢুকে বল জালে পাঠালেন কিশোর বিস্ময় লামিনে ইয়ামাল। ইন্টারের দ্বিতীয় গোলের মাত্র তিন মিনিট পর আসে এই গোল, যা এই ম্যাচে বার্সার ফেরার না বলা প্রতিশ্রুতি হয়ে উঠেছিল।
সেই ইয়ামাল পরে আরও একবার প্রায় গোল করে ফেলছিলেন। কিন্তু ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নেয়। বল লাগে পোস্টে। তবে কাতালান আশা তখনও নষ্ট হয়নি। ৩৮ মিনিটে ফেরান তোরেস ডানদিক থেকে আসা পাসে ওয়ান-টাইম ফিনিশে বল জড়ান জালে, ফিরিয়ে আনেন সমতা। ম্যাচ তখন যেন টানটান থ্রিলারে রূপ নেয় এবং শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধে বলের দখলে ও খেলার ছন্দে এগিয়ে থাকলেও ৬৪ মিনিটে আবারও হোঁচট খায় বার্সা। কর্নার থেকে হেডে ডামফ্রিস করেন তার দ্বিতীয় গোল। ইন্টার আবারও এগিয়ে যায়। কিন্তু বার্সা মানেই তো ক্ষণিকের বিশ্রামে আবার অগ্নি হয়ে ওঠা। দ্রুতই আসে জবাব। রাফিনহার দূরপাল্লার গর্জে ওঠা শট প্রথমে লাগে পোস্টে, এরপর ফিরে এসে লেগে যায় গোলরক্ষক ইয়ান সমারের পিঠে, এরপর বল ঢুকে পড়ে জালে। ম্যাচ আবারও ৩-৩। যদিও এটি আত্মঘাতী গোল হিসেবে গণ্য হয়, কাতালানদের জন্য তা যেন নবজন্মের এক চুম্বন।
শেষ বাঁশি পর্যন্ত দুই দলই তীব্রভাবে চেষ্টা করেছে জয় ছিনিয়ে নিতে। কিন্তু ভাগ্য সেদিন ছিল ভারসাম্যপন্থী।
এখন সব অপেক্ষা দ্বিতীয় লেগের। আগামী ৬ মে মিলানের ঐতিহাসিক সান সিরো স্টেডিয়ামে লেখা হবে এই নাটকের অন্তিম অঙ্ক। এক ম্যাচ, এক ফলাফল, এক জয়ী— আর সেই জয়ীর জন্য অপেক্ষা করছে মিউনিখের আলো-আড়ম্বরের রাত। ইউরোপীয় ফুটবলের মঞ্চে চূড়ান্ত পরীক্ষার দিন।
সান সিরোর আকাশে হয়তো আবার জ্বলে উঠবে এক নতুন রূপকথার তারা।
ঢাকা/আমিনুল