পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজাহান গাজীর বিরুদ্ধে অতিদরিদ্র ১২ নারীর ৬৬০ কেজি চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান দাবি অনুযায়ী কাকপক্ষী প্রায় সাড়ে ১৬ মন চাল খেয়ে ফেলেছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় এসব চাল বরাদ্দ আসে বলে জানা যায়।

চাল না পেয়ে তালিকাভুক্ত উত্তর কেশবপুর গ্রামের শাহিনুর আক্তার ও একই গ্রামের সীমা বেগম নামের দুই নারী প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আলাদাভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

শাহিনুর আক্তার বলেন, ‘‘আমি ভিডব্লিউবি কর্মসূচির তালিকাভুক্ত। আমার কার্ড নম্বর ২১। প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাই। কিন্তু, গত বছরের এপ্রিল ও ডিসেম্বর মাসের ৬০ কেজি চাল পাইনি। চালের জন্য প্যানেল চেয়ারম্যানের কাছে গেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, কাকপক্ষী চাল খেয়ে ফেলেছে।’’

সীমা বেগম বলেন, ‘‘গত বছরের এপ্রিল, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর চার মাসের ১২০ কেজি চাল পাইনি। চালের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, চাল কাকপক্ষী খেয়ে ফেলেছে।’’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘চাল না পেলেও প্যানেল চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ লোক শহিদুল মেম্বার জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ভিডব্লিউবি কার্ডে টিপসই নেন। এ বিষয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেছি।’’

কেশবপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে ২২ জন কার্ডধারী নারী ভিডব্লিউবি কর্মসূচির চাল পেয়ে থাকেন। শাহজাহান গাজী প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চাল নিয়ে নয়ছয় শুরু করেন।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘গত চার মাসে আমার ওয়ার্ডের ১২ নারীর ৬৬০ কেজি চাল আত্মসাত করেছেন শাহজাহান গাজী। ভুক্তভোগীরা চাল চাইতে গেলে চেয়ারম্যান বলেন, কাকপক্ষী চাল খেয়ে ফেলেছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’’

তবে, অভিযোগের বিষয় নাকচ করেছেন কেশবপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি শাহজাহান গাজী। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই।’’

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/ইমরান/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক কপক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি