যে কোনো সম্পর্ক শুরুতে আনন্দময় ও রোমাঞ্চকর মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একঘেয়েমি আসতে পারে। এটিই স্বাভাবিক, কারণ সম্পর্কের ভিন্ন দিকগুলো নিয়ে কাজ না করলে তা ধীরে ধীরে একঘেয়েমির দিকে গড়ায়। তবে সম্পর্ককে সুন্দর রাখা সম্ভব, যদি কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
খোলামেলা আলোচনা
যে কোনো সম্পর্কের ভিত্তি হলো সৎ থাকা এবং খোলামেলা আলাপ-আলোচনা। একে অপরের অনুভূতি, চাওয়া এবং সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করুন এবং সঙ্গীর কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি থেকেই সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। এ কারণে সব সময় কথা বলার মাধ্যমে বিষয়গুলো পরিষ্কার রাখুন।
ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে উঠুক
ছোট ছোট ভালো অভ্যাস সম্পর্ককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সঙ্গীকে ছোটখাটো কাজে সাহায্য করা, ভালো ভালো কথা বলা এগুলো সম্পর্কের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এগুলো সম্পর্ককে মজবুত করতে বড় ভূমিকা রাখে।
একসঙ্গে সময় কাটান
রোজকার ব্যস্ততার ফাঁকে একসঙ্গে সময় কাটানো খুব জরুরি। একসঙ্গে বই পড়া, সিনেমা দেখা বা নতুন কোনো কাজ চেষ্টা করা– এসব করতে পারেন। সম্পর্ক একঘেয়ে হয়ে গেলে নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করার চেষ্টা করুন। নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া বা একসঙ্গে কোনো কাজ করা সম্পর্কের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা এনে দিতে পারে।
সেপারেশন টাইম
না, এখানে একদম আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। যদি খুব বেশি একঘেয়েমি লাগে তাহলে দু’জন কিছু সময়ের জন্য আলাদা থাকুন। এ সময়টাতে দু’জনের কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করার চেষ্টা করুন। একে অপরকে অনুভব করার চেষ্টা করতে পারেন, ঠিক তখনই একে অপরের অনুপস্থিতিটা বুঝতে পারবেন। এর ফলে একঘেয়েমি দূর হয়ে নতুন করে একে অপরের প্রতি ভালো লাগা সৃষ্টি হবে।
ডাবল-ডেট পরিকল্পনা
দু’জন মিলে প্রায়ই তো আপনাদের ঘুরতে যাওয়া হয়। তবে মাঝেমধ্যে উভয়ের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে ডাবল ডেটের পরিকল্পনা করতেই পারেন। এতে করে বন্ধুদের মধ্যে গড়ে ওঠা আড্ডায় একে অপরকে নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করে দু’জন দু’জনের বন্ডিংকে আরও পাকাপোক্ত করে একঘেয়েমি নিমেষই দূর করতে পারবেন।
সারপ্রাইজ দিন
একঘেয়েমি দূর করতে সঙ্গীকে মাঝেমধ্যে সারপ্রাইজ দিন। এটি হতে পারে তাঁর প্রিয় খাবার তৈরি করা, হঠাৎ করে কোনো উপহার দেওয়া বা ছোট কোনো নোটে ভালোবাসার কথা লেখা। এ ধরনের ছোট ছোট সারপ্রাইজ সঙ্গীকে আনন্দিত করে এবং সম্পর্কের মধ্যে নতুনত্ব যোগ করে।
নিজেকে সময় দিন
কখনও কখনও সম্পর্কের মধ্যে একঘেয়েমি আসার কারণ হতে পারে নিজের প্রতি কম সময় দেওয়া। নিজের যত্ন নেওয়া, ব্যক্তিগত শখ বা ইচ্ছে নিয়ে কাজ করা এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া সম্পর্কের মধ্যে নতুন শক্তি এনে দেয়। আপনি যদি নিজের সঙ্গে খুশি থাকেন, তবে সম্পর্কেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পরস্পরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
কৃতজ্ঞতা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। প্রতিদিন সঙ্গীর ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করুন এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন। সঙ্গীকে তাঁর ছোট ছোট প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান। এ ধরনের কৃতজ্ঞতা সম্পর্কের মধ্যে ইতিবাচকতা এবং আন্তরিকতা বজায় রাখে।
সমস্যা এড়িয়ে যাবেন না
অনেক সময় সম্পর্কের সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা পরে বড় আকার ধারণ করতে পারে। সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটি সমাধানের চেষ্টা করুন। ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করুন এবং সমাধান খুঁজে বের করুন।
পরস্পরের ব্যক্তিত্বকে সম্মান করুন
সম্পর্কের মধ্যে একঘেয়েমি এড়ানোর জন্য সঙ্গীর ব্যক্তিত্ব এবং পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করা খুব জরুরি। পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারাকে গুরুত্ব দিন এবং তাঁকে নিজের মতো করে গ্রহণ করুন। একসঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। হাসিখুশি মুহূর্ত একঘেয়েমি দূর করে সম্পর্ককে সুন্দর রাখে।
সম্পর্কের প্রতি সচেতন থাকুন
সম্পর্কে বিনিয়োগ করতে হবে সময়, মনোযোগ এবং ভালোবাসা। সম্পর্ক নিয়ে উদাসীন হলে একঘেয়েমি আসতেই পারে। তাই প্রতিদিন চেষ্টা করুন সম্পর্ককে ভালো রাখার।
ছবি: আর্কাইভ
সূত্র: উইকি হাউ, বেটার আপ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: একসঙ গ দ র কর সময় ক সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
আগামী ২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের সভায় বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব উঠছে। সভায় অনুমোদন হলে একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ শুক্রবার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের সভার এ তারিখ নির্ধারণের তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ পর্ষদের বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দিতে আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন নিয়ে বিশেষত টাকা–ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসে। তবে সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৭৬ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ চেয়েছে। বাড়তি ঋণ যোগ হলে মোট দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি ডলার। বিবৃতিতে বিনিময় হার, রাজস্ব আদায়, ব্যাংক খাতসহ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।