রিয়ালের নক্ষত্রপুঞ্জে ‘গ্যালিলিও’ পেরেজ
Published: 22nd, January 2025 GMT
সেই যে যেদিন স্পেনের রাজা ত্রয়োদশ আলফানসো মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবকে রাজকীয় উপাধি তুলে দিলেন, সেদিন ১৯২০ সালের ২০ জুন থেকে ক্লাবটির নাম হয়ে গেল রয়্যাল মাদ্রিদ (স্প্যানিশে রয়্যাল অনেকটা রিয়ালের মতোই শোনায়)। গত শতকের প্রায় পুরোটা সময়ই সেই রাজকীয় অনুভব আর শ্রেষ্ঠত্বের অহম নিয়েই স্পেনের এলিট শ্রেণির কাছে আত্মপরিচয়ের একটি নির্ণায়ক হয়ে যায় ক্লাবটি।
মাদ্রিদের আকাশ ভরে যায় বিশ্ব ফুটবলের তারার মেলায়। স্তেফানো, পুসকাস, জেন্তো, হেক্টর, কোপা, মুনোজ, সান্তিলানা; সময়ের সেরারা সব খেলেছেন রাজকীয় ক্লাবটিতে। তবে তারকাদের এই উপস্থিতি বেশির ভাগই ছিল ছিন্ন আকাশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে; সবাইকে একসঙ্গে করে যে নক্ষত্রমণ্ডলীর আলোড়ন– তাতে বোধ হয় কিছুটা কমতি থেকেই গিয়েছিল। রাজকীয় নিখুঁত স্বাদের সেই ব্যাপারটিই চলে আসে এই একুশ শতকের শুরুর দিকে এবং যিনি সমগ্র মেধা আর ইন্দ্রিয় দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ‘গ্যালাক্টিকোস’ আবিষ্কার করেছেন, সেই মানুষটির নাম ফ্লোরেন্তিনো এদুয়ার্দো পেরেজ রদ্রিগেজ।
উল্টোসিঁথিতে সারাক্ষণ স্যুটেড-বুটেড বছর সাতাত্তরের এই রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতিকে অবশ্য সবাই ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বলেই চিনে থাকেন। সেই পেরেজ রোববার ক্লাবের ইলেকট্রোরাল বোর্ডের সভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্বেই থাকবেন তিনি।
ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এই প্রশাসনিক ব্যক্তি পেরেজ; ২২ বছরে ৩৭টি শিরোপা তিনি মাদ্রিদের শোকেসে এনে রেখেছেন। স্প্যানিশ এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাভাজন যে সভাপতি, সেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সময়েও এর চেয়ে পাঁচটি ট্রফি কম ছিল। মাদ্রিদের পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া পেরেজ কিন্তু ফুটবলের বাইরেও একজন সফল ব্যবসায়ী। স্পেনের বিখ্যাত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান এসিএসের প্রধান নির্বাহীও তিনি। পুরকৌশলবিদ্যার চেয়েও ফুটবল অর্থনীতিতেই পেরেজের নৈপুণ্যের স্বাক্ষর বেশি। শুরুর কথায় যদি বলা যায়, মাদ্রিদের সিটি কাউন্সিলের সদস্য থেকে একটু একটু করে ক্লাবটির সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে যায় তাঁর।
১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো সভাপতি পদে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন, তবে হাল ছাড়েননি। ক্লাবের আর্থিক দুরবস্থার উন্নতি করার শপথ নিয়ে ২০০০ সালে ফের নির্বাচনে দাঁড়ান। ঘোষণা দেন, লুই ফিগোকে নিয়ে আসবেন মাদ্রিদে। তখন বার্সেলোনার অনেকটাই ঘরের ছেলের মতো ছিলেন ফিগো। তাঁকে কিনা ‘শত্রু’ ক্লাবে নিয়ে আসবেন পেরেজ! অনেকে হাসাহাসি করেছিল, ভোট গণনার পর দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদের প্রধানের চেয়ারে বসার সুযোগ পান সেই পেরেজই। ঘোষণা দেন, তাঁর বিশ্ববিখ্যাত পরিকল্পনা ‘গ্যালাক্টিকোস’-এর। যেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, বিশ্বের সব সেরা তারকাকে একসঙ্গে মাদ্রিদের জার্সি পরাবেন। এর পর একে একে রেকর্ড অর্থে রিয়াল মাদ্রিদে আনেন জিনেদিন জিদান, রোনালদো, ডেভিড বেকহাম, মাইকেল ওয়েন, রবিনহোদের। ২০০৪ সালে আরও বেশি ৯৪ দশমিক ২ শতাংশ ভোটে ফের নির্বাচিত হন।
তারকা ভেড়ানোর নেশায় বুঁদ হলেও কোচ নিয়ে সমস্যা দেখা যায়। দেল ভস্ক ও মাকিলিলির শূন্যতা প্রবলভাবে ফুটে ওঠে মাঠের পারফরম্যান্সে। ২০০৪ থেকে ২০০৬– কোনো ট্রফি না জেতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন পেরেজ। তাঁর তিন বছর পর ফের নির্বাচনের মাধ্যমেই ফিরে আসেন। আগেরবার তাঁর গ্যালাক্টিকোসের সমালোচনা হলেও তিনি তা থেকে সরে না আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং এবারও তিনি রিয়ালের নক্ষত্রমণ্ডল সাজাতে থাকেন মিলান থেকে কাকা আর ম্যানইউ থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে এনে।
২০০৯ সালের জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যেই ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডে রোনালদো, ৩০ মিলিয়নে করিম বেনজেমাকে নিয়ে আসেন। কোচ হিসেবে চুক্তি করেন হোসে মরিনহোর সঙ্গে। শুধু এসব নক্ষত্রই নন; মেসুত ওজিল, ডি মারিয়ার মতো নতুন তারার মেলাও বসান রিয়াল মাদ্রিদে। একটি প্রজন্মের কাছে যা ছিল স্বর্ণসময়। তাঁর প্রতি সেই কৃতজ্ঞতাবোধ এবং আস্থার জায়গা আজও যেন এতটুকু কমেনি। যে কারণে ২০১৩, ২০১৭, ২০২১; এর পর ২০২৫– পেরেজ ভিন্ন অন্য কেউ এই পদেই দাঁড়াননি।
রাজার দেওয়া সেই রাজকীয় মুকুটটি পেরেজ সফল উত্তরাধিকারের মতো আগলে রেখেছেন। কভিড পেন্ডামিকের সময় ইউরোপের অন্য সব বড় ক্লাবেও যখন আর্থিক সংকটের ধাক্কা লাগে, সেখানে পেরেজের রিয়াল মাদ্রিদ তখনও কোষাগার অক্ষুণ্ন রাখতে পারে। অবশ্য পারবে নাই বা কেন, রিয়ালের নক্ষত্রপুঞ্জের সত্যিকারের গ্যালিলিও যে তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় নারী এশিয়া কাপ: শক্তিশালী গ্রুপে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে।
আগামী বছরের ১-২৩ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে নারী এশিয়া কাপ। ১২ দলের এই টুর্নামেন্টের ড্র সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ দুপুরে। যেখানে শক্তিশালী গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তান, চীন ও উত্তর কোরিয়া। জাঁকজমকপূর্ণ ড্রতে বাংলাদেশ ছিল চার নম্বর প্লটে। সঙ্গী ছিল ইরান ও ভারত। গ্রুপিং ড্রতে টুর্নামেন্টের একমাত্র অভিষিক্ত দল বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় দল নির্বাচিত হয়।
পরের রাউন্ডে ‘বি’ গ্রুপের চতুর্থ দল হয় উজবেকিস্তান। এরপর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চীন বাংলাদেশের গ্রুপের দ্বিতীয় দল হয়। সবশেষ দল হিসেবে এই গ্রুপে যুক্ত হয় উত্তর কোরিয়া। যারা ২০১০ সালে প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছিল।
ড্র অনুষ্ঠানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও এএফসি অংশগ্রহণকারী সকল দেশের অধিনায়ক ও কোচকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রথমবার নারী এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের কেউ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি। গতকাল অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কোচ, খেলোয়াড়রা ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করে হারবার ব্রিজের সামনে। সেখানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া, তাইওয়ান,ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্বার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ পড়েছিল কঠিন ‘সি’ গ্রুপে, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল বাহরাইন (র্যাঙ্কিং ৯২), তুর্কমেনিস্তান এবং স্বাগতিক মিয়ানমার (র্যাঙ্কিং ৫৫)। র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে পিছিয়ে থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে বোঝার উপায় ছিল না।
প্রথম ম্যাচেই বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলের নৈপুণ্যে ২-১ ব্যবধানে হারায় মিয়ানমারকে। শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকেও ছাড়েনি মেয়েরা। ৭-০ গোলের দাপুটে জয় তুলে নেয় তারা।
এই জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। আগামী বছর মার্চে বসবে টুর্নামেন্টের ২১তম আসর, যেখানে খেলবে ১২টি দেশ।
ঢাকা/ইয়াসিন