সেই যে যেদিন স্পেনের রাজা ত্রয়োদশ আলফানসো মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবকে রাজকীয় উপাধি তুলে দিলেন, সেদিন ১৯২০ সালের ২০ জুন থেকে ক্লাবটির নাম হয়ে গেল রয়্যাল মাদ্রিদ (স্প্যানিশে রয়্যাল অনেকটা রিয়ালের মতোই শোনায়)। গত শতকের প্রায় পুরোটা সময়ই সেই রাজকীয় অনুভব আর শ্রেষ্ঠত্বের অহম নিয়েই স্পেনের এলিট শ্রেণির কাছে আত্মপরিচয়ের একটি নির্ণায়ক হয়ে যায় ক্লাবটি। 

মাদ্রিদের আকাশ ভরে যায় বিশ্ব ফুটবলের তারার মেলায়। স্তেফানো, পুসকাস, জেন্তো, হেক্টর, কোপা, মুনোজ, সান্তিলানা; সময়ের সেরারা সব খেলেছেন রাজকীয় ক্লাবটিতে। তবে তারকাদের এই উপস্থিতি বেশির ভাগই ছিল ছিন্ন আকাশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে; সবাইকে একসঙ্গে করে যে নক্ষত্রমণ্ডলীর আলোড়ন– তাতে বোধ হয় কিছুটা কমতি থেকেই গিয়েছিল। রাজকীয় নিখুঁত স্বাদের সেই ব্যাপারটিই চলে আসে এই একুশ শতকের শুরুর দিকে এবং যিনি সমগ্র মেধা আর ইন্দ্রিয় দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ‘গ্যালাক্টিকোস’ আবিষ্কার করেছেন, সেই মানুষটির নাম ফ্লোরেন্তিনো এদুয়ার্দো পেরেজ রদ্রিগেজ। 

উল্টোসিঁথিতে সারাক্ষণ স্যুটেড-বুটেড বছর সাতাত্তরের এই রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতিকে অবশ্য সবাই ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বলেই চিনে থাকেন। সেই পেরেজ রোববার ক্লাবের ইলেকট্রোরাল বোর্ডের সভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্বেই থাকবেন তিনি।

ক্লাবের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এই প্রশাসনিক ব্যক্তি পেরেজ; ২২ বছরে ৩৭টি শিরোপা তিনি মাদ্রিদের শোকেসে এনে রেখেছেন। স্প্যানিশ এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাভাজন যে সভাপতি, সেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সময়েও এর চেয়ে পাঁচটি ট্রফি কম ছিল। মাদ্রিদের পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া পেরেজ কিন্তু ফুটবলের বাইরেও একজন সফল ব্যবসায়ী। স্পেনের বিখ্যাত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান এসিএসের প্রধান নির্বাহীও তিনি। পুরকৌশলবিদ্যার চেয়েও ফুটবল অর্থনীতিতেই পেরেজের নৈপুণ্যের স্বাক্ষর বেশি। শুরুর কথায় যদি বলা যায়, মাদ্রিদের সিটি কাউন্সিলের সদস্য থেকে একটু একটু করে ক্লাবটির সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে যায় তাঁর। 

১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো সভাপতি পদে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন, তবে হাল ছাড়েননি। ক্লাবের আর্থিক দুরবস্থার উন্নতি করার শপথ নিয়ে ২০০০ সালে ফের নির্বাচনে দাঁড়ান। ঘোষণা দেন, লুই ফিগোকে নিয়ে আসবেন মাদ্রিদে। তখন বার্সেলোনার অনেকটাই ঘরের ছেলের মতো ছিলেন ফিগো। তাঁকে কিনা ‘শত্রু’ ক্লাবে নিয়ে আসবেন পেরেজ! অনেকে হাসাহাসি করেছিল, ভোট গণনার পর দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো রিয়াল মাদ্রিদের প্রধানের চেয়ারে বসার সুযোগ পান সেই পেরেজই। ঘোষণা দেন, তাঁর বিশ্ববিখ্যাত পরিকল্পনা ‘গ্যালাক্টিকোস’-এর। যেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, বিশ্বের সব সেরা তারকাকে একসঙ্গে মাদ্রিদের জার্সি পরাবেন। এর পর একে একে রেকর্ড অর্থে রিয়াল মাদ্রিদে আনেন জিনেদিন জিদান, রোনালদো, ডেভিড বেকহাম, মাইকেল ওয়েন, রবিনহোদের। ২০০৪ সালে আরও বেশি ৯৪ দশমিক ২ শতাংশ ভোটে ফের নির্বাচিত হন। 

তারকা ভেড়ানোর নেশায় বুঁদ হলেও কোচ নিয়ে সমস্যা দেখা যায়। দেল ভস্ক ও মাকিলিলির শূন্যতা প্রবলভাবে ফুটে ওঠে মাঠের পারফরম্যান্সে। ২০০৪ থেকে ২০০৬– কোনো ট্রফি না জেতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন পেরেজ। তাঁর তিন বছর পর ফের নির্বাচনের মাধ্যমেই ফিরে আসেন। আগেরবার তাঁর গ্যালাক্টিকোসের সমালোচনা হলেও তিনি তা থেকে সরে না আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং এবারও তিনি রিয়ালের নক্ষত্রমণ্ডল সাজাতে থাকেন মিলান থেকে কাকা আর ম্যানইউ থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে এনে। 

২০০৯ সালের জুন থেকে জুলাইয়ের মধ্যেই ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডে রোনালদো, ৩০ মিলিয়নে করিম বেনজেমাকে নিয়ে আসেন। কোচ হিসেবে চুক্তি করেন হোসে মরিনহোর সঙ্গে। শুধু এসব নক্ষত্রই নন; মেসুত ওজিল, ডি মারিয়ার মতো নতুন তারার মেলাও বসান রিয়াল মাদ্রিদে। একটি প্রজন্মের কাছে যা ছিল স্বর্ণসময়। তাঁর প্রতি সেই কৃতজ্ঞতাবোধ এবং আস্থার জায়গা আজও যেন এতটুকু কমেনি। যে কারণে ২০১৩, ২০১৭, ২০২১; এর পর ২০২৫– পেরেজ ভিন্ন অন্য কেউ এই পদেই দাঁড়াননি। 

রাজার দেওয়া সেই রাজকীয় মুকুটটি পেরেজ সফল উত্তরাধিকারের মতো আগলে রেখেছেন। কভিড পেন্ডামিকের সময় ইউরোপের অন্য সব বড় ক্লাবেও যখন আর্থিক সংকটের ধাক্কা লাগে, সেখানে পেরেজের রিয়াল মাদ্রিদ তখনও কোষাগার অক্ষুণ্ন রাখতে পারে। অবশ্য পারবে নাই বা কেন, রিয়ালের নক্ষত্রপুঞ্জের সত্যিকারের গ্যালিলিও যে তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শন করলেন দুই বিদেশি পর্যটক

‘এটি খুবই আনন্দায়ক খবর যে এই স্কুলে আদিবাসী ও বাঙালি শিক্ষার্থীরা একসঙ্গেই বসে শান্তিপূর্ণভাবে পাঠ গ্রহণ করে। যেখানে ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরাও একই আসনে বসে পাঠ নিচ্ছে। সম্প্রীতি-ভালোবাসার এ দৃশ্য আমাদের বিমোহিত করেছে।’

আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শনে এসে জার্মান নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাথিয়াস রিচার্ড এ মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত রসায়নবিদ সিলভিয়া মাউরিজিও। ‘দেশ ঘুরি’ নামের একটি ট্যুরিস্ট সংস্থার মাধ্যমে তাঁরা এ বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলে ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরিয়ে দেখান প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর। তাঁরা শ্রেণিকক্ষগুলোতে গিয়ে পাঠ উপস্থাপন দেখেন। কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের সঙ্গে ভাববিনিময় করে।

এ সময় দুই পর্যটক জানতে পারেন, এ বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বাঙালি শিশুরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না করে একবেঞ্চে বসে পাঠ গ্রহণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা খুবই খুশি হন।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুমা খাতুন দুজনকে একটি গান গেয়ে শোনায়। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সামনে ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান প্রদর্শন করে। সিলভিয়াও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাচে অংশ নেন। সৃষ্টি হয় একটি আনন্দদায়ক পরিবেশের। এ সময় বাঙালি ও কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি-ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে খুশি হন।

বিদেশি দুই পর্যটকের সামনে আলোর স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শন করলেন দুই বিদেশি পর্যটক
  • সব সিম লক রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে অপারেটররা
  • আগামী বছর নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
  • শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
  • কে হবে নারী বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন
  • ভারত নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা, কে হবে নতুন নারী বিশ্বকাপ চ‌্যাম্পিয়ন
  • বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রতি টিকিটের দাম দেড় লাখ টাকার বেশি
  • গোল্ডেন বুট হাতে এমবাপ্পে বললেন, রিয়ালে আরও বহু বছর থাকতে চাই