গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ যেন ‘মিথ’
Published: 23rd, January 2025 GMT
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) গর্ব হিসেবে পরিচিত শিক্ষার্থীদের গর্জে উঠার কণ্ঠস্বরের মঞ্চ ছাত্র সংসদ, এখন যেন হারিয়ে যাওয়া এক মিথ। নিয়মিত নির্বাচন না হওয়া, প্রশাসনের উদাসীনতা ও নেতৃত্ব সংকটসহ নানা কারণে এক সময়ের আলোচিত ছাত্র সংসদ কার্যত বিলুপ্ত।
জানা গেছে, বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (গকসু) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি ছিল ঐতিহাসিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডা.
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জুয়েল রানা সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং মো. নজরুল ইসলাম রলিফ সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হিসেবে নির্বাচিত হন। এটি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত প্রথম কমিটি ছিল।
নির্বাচনের পরে দুই বছর মেয়াদের মাঝে প্রায় ৮ মাস সংসদের কার্যক্রম বন্ধ রাখে গবি প্রশাসন এবং ১৯ মাস পরে অভিষেক হয় নির্বাচিতদের। কিন্তু এরপর আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই কমিটি বাতিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ছাত্র সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং কার্যনির্বাহী পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় গঠনতন্ত্রের ১০ ও ১৩.১ ধারা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ২০১৮ সালের পর থেকে নির্বাচন আয়োজন না করা, প্রশাসনের উদাসীনতা ও কার্যক্রম পুনরায় চালুর বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগের অভাব; দীর্ঘ সময় কার্যক্রম স্থবির থাকায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়া; নেতৃত্বে স্বচ্ছতার অভাব এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপোড়েন অন্যতম।
গকসুর তৃতীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, “গঠনতন্ত্রের বিধানের বাইরে এসে হঠকারিতার মত করেই একটা নোটিশ দিয়ে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী সংসদ ভাঙার ৩ মাসের মধ্যেই নতুন নির্বাচন দিতে হবে। গবি প্রশাসন সে কাজ তো করেনি, বরং এখনো নির্বাচন আটকে রেখেছে, যা অযাচিত।”
তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নতুনভাবে রাষ্ট্র নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এখন গকসুসহ সারা দেশেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন। এতে নেতৃত্বের সংকট দূর হবে এবং দেশের দোদুল্যমান অবস্থা পার হবে। একমাত্র ছাত্র সংসদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোই এ অভাব পূরণ করতে পারবে।”
২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীরা একটি আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ পুনরায় চালুর দাবি তোলে। সাত দফা দাবির মধ্যে ছাত্র সংসদ চালুর বিষয়টি ছিল অন্যতম। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, অতীতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন, কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের এ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রাখতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখে এসেছে ধারাবাহিকভাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা মো. নাসিম বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক। শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব গড়ে উঠুক। সেই চিন্তা-কাঠামো নিয়ে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে গবিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির জন্য ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী গকসু চালু করেছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের রোডম্যাপ, নির্বাচন কমিশন গঠন করে অতিদ্রুত নির্বাচন দেওয়া জরুরি।”
২০১৮ সালের পর থেকে আশ্বাসেই আটকে আছে গকসু নির্বাচন। গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
নির্বাচন হবে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, “ছাত্র সংসদ নিয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা একটি রোডম্যাপ চেয়েছে। সমাবর্তনের পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। সম্ভব হলে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া হবে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
সকালে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আদালতে আনা হয়। সকাল ৯টার দিকে তাঁকে রাখা হয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে নয়টার আগে হাজতখানার ভেতর থেকে এ বি এম খায়রুল হককে বের করা হয়। এ সময় তাঁর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।
হাজতখানার ভেতর থেকে হাঁটিয়ে আদালতের ভেতরের একটি সরু রাস্তা দিয়ে খায়রুল হককে নিচতলায় সিঁড়ির সামনে আনা হয়। পরে দুজন পুলিশ কনস্টেবল সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের হাত ধরে রাখেন। তিনি হেঁটে হেঁটে নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠেন। পরে দোতলা থেকে আবার হেঁটে হেঁটে তিনতলায় ওঠেন। পরে তাঁকে নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায়। তখন সময় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট। নিজের দুই হাত পেছনে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তখনো বিচারক আদালতকক্ষে আসেননি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তখন দেখা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকাতে থাকেন। কিছুক্ষণ দেখার পর আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে আদালতকক্ষে আসেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মো. ছানাউল্লাহ। এ সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা এ বি এম খায়রুল হকের নাম ধরে ডাকেন।
তখন রায় জালিয়াতির অভিযোগে করা শাহবাগ থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেক মিয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এসআই খালেক মিয়া আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। সেই সংক্ষিপ্ত রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মতপ্রকাশ করেন যে পরবর্তী ১০ম ও ১১তম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য মত দেন। ওই সংক্ষিপ্ত আদেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের পক্ষে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি), সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) মত দেন। তবে আপিল বিভাগের বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। অর্থাৎ আপিল বিভাগের এই তিন বিচারপতি ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ মর্মে ঘোষণার বিপক্ষে মত দেন।’
প্রিজন ভ্যানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। আজ বুধবার ঢাকার আদালত এলাকায়