কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে বানানো দুই শতাধিক পিঠা নিয়ে শুরু হয়েছে দিনব্যাপী পিঠা উৎসব। ২৩টি স্টলে এসব পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক পরিষদের দারুণ এ আয়োজন দেখতে ও পিঠার স্বাদ নিতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ছাড়াও এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এসব পিঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে শীতের মৌসুমে চতুর্থবারের মতো এ আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের আয়োজনে ফুলে সজ্জিত ফিতা কেটে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর আ.
শিক্ষক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ মো. মতিউরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া। এছাড়াও কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নায়লা ইয়াসমিন, গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সম্পাদক মো. আজহারুল ইসলাম। পরে তারা পিঠার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।
কলেজ শিক্ষক পরিষদের আয়োজনে ২৩টি স্টল স্থাপন করে পিঠা উৎসবে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদ, সবকটি ছাত্রাবাস, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্টসহ কলেজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের শিক্ষার্থীরা।
পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, মাংস পুলি, দুধ পুলি, নারকেল পুলি, দুধ চিতই, দুধ পোয়া, ঝাল পোয়া, মাল পোয়া, সেমাই পিঠা, ডিম পিঠা, মাংস-ঝাল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা, জামাই পিঠা, রুট পিঠা, থামি পিঠা, অঙ্কন পিঠা, চিরুনি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, দুধ গুগল, বিস্কুট পিঠা, সমুচা পিঠা, ঝিলমিল পিঠা, ডিমের পুডিং, চিকেন চপ, প্রজাপতি পিঠা, চাপটি, টাকি পিঠা, চিতই, ডিম চিতই, দুধের সন্দেশ, ডোবা পিঠা, গোলাপ কাটা পিঠা, পাপড়ি পিঠা, মাংসের পুলি, পায়া পিঠা, শিমফুল পিঠা, অরেঞ্জ জেলি, বেলুনি পিঠা, গোলাপফুল পিঠা, ভ্যানিলা জেলি, মি ডুবা, শল পিঠা, দুধ পুলি, সুখ চিতই, মলই পিঠা, বিস্কুট পিঠা, খাল মশলা পিঠা, টমেটো ঝাল পিঠা, কুড়িমুড়ি পিঠা, নারিকেলের চিড়া, মাংসের মশলা পিঠা, এম পিঠা, এহন সুপি পিঠা, মিষ্টি পিঠাসহ ২২ স্টলে দুই শতাধিক পিঠা দেখা গেছে। একেকটির স্বাদ একেক রকম।
তবে মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে মেয়েদের মন ২০ টাকা, ভালোবাস ডট কম, হৃদয় হরণ ও ব্যাকআপ। ব্যতিক্রম এ তিনটি পিঠা দেখে সবার নজর গেছে সেদিকে।
ঢাকা/রুমন/ইমন
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।