সংস্কৃতির সকল মাধ্যমেই বিচরণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। গদ্যে-পদ্যে পৃথিবীকে আরও সুন্দর অনুভব দিয়ে দেখতে শিখিয়েছেন তিনি।  শুধু গানে-কবিতায়, উপন্যাসে নয়. রবীন্দ্রনাথ নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন জীবনের সব মাধ্যমেও। বাংলার রূপ ও প্রকৃতি প্রভলভাবে প্রভাসিত করেছিল রবীন্দ্রনাথকে। তাই তো তার লেখনীতে ফুটে উঠেছে পূর্ব বাংলার রূপ মহিমা। শব্দের সুনিপুন বুননে বাংলার রূপ বুনেছেন তিনি। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শুরু হওয়া ৪২তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে বিশ্বকপির সৃষ্টিশিলতার সে দিকটাই উঠে এল।  সম্মেলনের  শুভ উদ্বোধন করেন রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ফাহমিদা খাতুন। বোধনসঙ্গীত “এই কথাটা ধরে রাখিস মুক্তি তোরে পেতেই হবে” এই গানের মধ্য দিয়ে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। 


অনুষ্টানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদের সম্পাদক তানিয়া মান্নান। অতিথিদেরকে ফুলের শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন উদ্বোধনী অধিবেশনের সভাপতি ডা.

সারওয়ার আলী। উদ্বোধক ফাহ্মিদা খাতুন আশীর্বচন প্রদান করেন। আলোচনা শেষে গীতিআলেখ্য ‘ফিরে চল মাটির টানে’ পরিবেশিত হয়। গীতিআলেখ্যটি গ্রন্থনা করেন সন্তোষ ঢালী, সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম। এটি পাঠ করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রপা মজুমদার। পাঠের সঙ্গে নৃত্যনন্দন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন নৃত্যম্ নৃত্যশীলন ও ধৃতি নর্তনালয়।

বিকেলে শুরু হওয়া আয়োজন চলতে চলতে নেমে সন্ধ্যা। প্রবন্ধ পাঠ, নৃত্যানুষ্ঠানের তালে তালে দিনের আলো ফুরালে শুরু হয় সান্ধ্য অধিবেশন। এই পর্বে বেজে উঠে সুরের ঝংকার। সুরের গানের কথায়  পূজা, প্রেম ও প্রকৃতির রূপরসে বিভোর করে মন।  ফারজানা আক্তার পপি, সেমন্তী মঞ্জরী, রোকাইয়া হাসিনা, অশোক সাহা, নুরুল মতিন সৈকত, আকলিমা খাতুন, শুক্লা পাল সেতু, ফেরদৌস আরা লিপিরা গান পরিবেশন করেন। 

গানে গানে  মিলন ভট্টাচার্য, সুস্মিতা আহমেদ, প্রতীক এন্দ, পার্থ প্রতীম রায়, কল্লোল সেনগুপ্ত, নাইমা ইসলাম নাজ, মাইনুল ইসলাম, অনুপম বসাক তিলক, জীবিনা সঞ্চিতা হক, সমাপ্তি রায়, অদিতি মহসীন, আইরিন পারভীন অন্না, অসীম দত্ত ও শ্রাবণী মজুমদাররা ভিন্ন এক আবেশ ছড়িয়ে দেন।  এ সময় সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, চাঁদপুর শাখা।  শিল্পী মুনমুন আহমেদদের নৃত্য পরিবেশনায় অনুষ্ঠানে নতুন প্রাণের সঞ্চয় হয় যেনো। সঙ্গে ছিল  ডালিয়া আহমেদের মনোমুগ্ধকর আবৃত্তি।

এবারের ৪৩তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে  দেশের নানা অঞ্চল থেকে আসা ৫০০ জনের বেশি শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক অংশ নিচ্ছেন।  আজ শুক্রবার  সকাল ৯টা ৩০মিনিট থেকে শুরু হয়ে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। আজও থাকছে সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যা ও আবৃত্তি। বিকেল ৩টায় থাকছে প্রতিনিধি সম্মেলন। বিকেল ৪টায়  “বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সাড়ে ৫টায়  হবে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন, রবিরশ্নি, সঙ্গীতানুষ্ঠান। 

 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন কর ন পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’

শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন  রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ