পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর মাইলমারী পদ্মবিল
Published: 23rd, January 2025 GMT
স্কুলশিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা, আনিকা আশরাফী ও ফাহিম মুন্তাসিরের বাড়ির পাশেই বিশাল মাইলমারী পদ্মবিল। শীতবিকেলের বেশির ভাগ সময় তারা এখানেই ঘোরাঘুরি, খেলাধুলা করে কাটায়। জায়গাটি তাদের খুব পছন্দের। কারণ প্রতিবছর এই সময়ে পদ্মবিলে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। নানান জাতের এসব পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা। এসব দৃশ্য দেখতে শিশু ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় করেন বিলে।
প্রায় ১২০ বিঘা জায়গাজুড়ে রয়েছে মাইলমারী পদ্মবিল। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার এই বিলে গত কয়েক বছরের তুলনায় পরিযায়ী পাখির আনাগোনা বেড়েছে। কারণ, বিলপারের মানুষ উদ্যোগী হয়ে পাখি শিকারিদের পদ্মবিলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের প্রতিরোধের মুখে বর্তমানে পাখি শিকার বন্ধ। তাই ৫-৬ বছর ধরে সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, চীনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে পাখি বেশি আসছে। বিল এলাকায় এখন মুখর হরিয়াল, হাড়গিলা, রাতচোরা, বালিহাঁস, কাদাখোঁচা, ডাহুক, শামুকখোল, হটিটি, সরাইল, পানকৌড়িসহ নানা ধরনের দেশি ও অতিথি পাখি বিচরণ করছে। এসব পাখি সারাদিন বিলে পানিতে, কচুরিপানার ওপর ঘুরে বেড়ায়। রাত হলে আশ্রয় নেয় বিলপারের গ্রামগুলোর গাছে।
কৃষক সানাউল্লাহ গাজী ও আলমগীর হোসেন বলেন, দূরদেশ থেকে আসা পাখিদের আমরা নির্ভয়ে বসবাস করার সুযোগ করে দিয়েছি। গ্রামবাসী একাট্টা– নিজেরা কেউ পাখি ধরব না, কাউকে ধরতেও দেব না।
মেহেরপুর বার্ড ক্লাবের সভাপতি ও পাখি গবেষক এমএ মুহিত বলেন, নানা ধরনের পাখি মাইলমারী পদ্মবিলে দেখা যায়। কিছু শিকারি শীত এলেই বিভিন্ন ফাঁদ পেতে গোপনে পাখি শিকার করে। তবে সচেতন নাগরিকরা পাখির আবাসস্থল রক্ষা করছেন। ফলে নির্ভয়ে বিচরণ করছে পাখিরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিতম সাহা বলেন, বিলের পাখিরা যাতে নিরাপদে বিচরণ করতে পারে, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎসের একটি পণ্য রপ্তানি স্বস্তিতে নেই। টানা তিন মাস ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তারপরের দুই মাস, অর্থাৎ আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ এবং সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। তাতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ বিদায়ী অর্থবছর পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান আজ সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।
দেশের মোট রপ্তানি ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে এই খাতের রপ্তানি। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ৩৮ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। শুধু গত মাসে ১০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৯ শতাংশ।
এদিকে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি গত মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।
দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।