টাকা নিয়ে বাইক দিয়ে রাজশাহীর বিদেশিদের আনার চেষ্টা, ‘দরজা খোলেননি’ কেউই
Published: 26th, January 2025 GMT
বড় কেলেঙ্কারিতে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। বিশ্বজুড়ে ধনী সংস্থা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছার কারণে বোর্ডের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিতেও কালিমালেপন করলো দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বরাবরের মতো এবারও বিপিএলকে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক। কিন্তু এবার আগের দশ আসরকেও ছাড়িয়ে গেল। দুর্বার রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা রোববার (২৬ জানুয়ারি) রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কট করেন। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে।
বিসিবি শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল ক্রিকেটারদের খেলানোর জন্য। বিপিএল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও বিসিবি পরিচালক মনজুর আলম চেষ্টা করে গেছেন শেষ পর্যন্ত। রাজশাহীর মালিক শফিক রহমান ও তার এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি।
আরো পড়ুন:
বিপিএল: খেলার চেয়ে ‘ধুলা’ বেশি
বিদেশি ছাড়া ব্যাটিংয়ে ধুকল রাজশাহী, পেল মামুলি সংগ্রহ
মনজুর আলমের সঙ্গে রাইজিংবিডি ডটকমের এই বিষয়ে যখন কথা হয় তখন তিনি ছিলেন বিমানবন্দরে। যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামে। মুঠোফোনে নজিরবীহীন এই মুহুর্তটির বর্ণনা দিয়েছেন মনজুর।
তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। মালিকের এক বন্ধু ছিল আমার পরিচিত। সে টাকা দিতে রাজি হয়েছিল। টাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাইক দিয়ে ক্রিকেটারদের আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু হোটেল রুমের দরজা খোলেননি কোনো ক্রিকেটার। ততক্ষণে টিম ঘোষণা হয়ে যায়। আর কিছু করার ছিল না।”
“মালিককে আমি বলেছি তোমার সব যাবে। ব্যবস্থা করো। তার কোনো কমিটমেন্ট ঠিক ছিল না। চট্টগ্রামেও আমি ক্রিকেটারদের রাজি করিয়েছিলাম। এবার আর সম্ভব হয়নি”-আরও যোগ করেন মনজুর আলম।
এর আগে গতকাল বোর্ড মিটিংয়ে বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাওনা-দেওনা ইস্যুর সমাধান করা হবে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না যেতেই সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়। এর আগে চট্টগ্রাম পর্বে যখন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা অনুশীলন বাতিল করে তখন বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ ছুটে যান। মনজুর আলমসহ সামাল দেন পরিস্থিতি।
ফারুক এবার বলেছেন আর কোনো ছাড় নয়। মনজুর আলমের ভাষ্য, “প্রেসিডেন্ট পুরো সময়টা ছিলেন। তিনি খুব কঠোর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন আমাদের। বলেছেন, ‘অনেক হয়েছে, আর না।’ এটার সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত। বিসিবি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে। কঠোর ব্যবস্থা।”
শুধু ক্রিকেটারদের পাওনা নয়, চট্টগ্রামে হোটেল বিল নিয়েও গড়িমসি করেন রাজশাহীর মালিক। পরে সর্বোচ্চ ছাড় ও কম বিলে পরিশোধ করেন চট্টগ্রাম থেকে দল আসার একদিন পর। আজ আবার ম্যাচ ডে’তে ঢাকায় হোটেল পরিবর্তন করেন তারা।
বিদেশিদের সঙ্গে দেশিরাও হুঁমকি দিয়েছিল। পরে তড়িঘড়ি দেশিদের দেওয়া হয় আরও ২৫ শতাংশ টাকা। যেটির ঘোষণা এনামুল হক বিজয় ফেসবুকে দিয়েছেন।
এদিকে রাইজিংবিডিকে ফ্র্যাঞ্চাইজির একটি সূত্র জানিয়েছে বিদেশিরা চুক্তির টাকা পুরো বুঝে নিতে চাইছেন। এটি না হলে তারা মাঠে নামবেন না আর। সেক্ষেত্রে বিসিবিকে টাকা পরিশোধ তো করতেই হবে সঙ্গে দেশ ও বোর্ডের ভাবমূর্তিতে বড় দাগ লেগে যাবে।
প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ফি হিসেবে দিতে হয় দেড় কোটি টাকা। এটি বিপিএলের অংশগ্রহণ ফি। এ ছাড়া গ্যারান্টি মানি দিতে হয় ৮ কোটি টাকা। এবার দফায় দফায় কমিয়ে ৩ কোটিতে আনা হলেও সেটি দিতে পারেনি রাজশাহী। পরবর্তীতে বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক ৬৮ লাখ টাকা গ্যারান্টি নেন।
বাইলজ অনুযায়ী সর্বনিম্ন দুজন বিদেশি ক্রিকেটারকে খেলাতেই হবে প্রতি ম্যাচে। আর সর্বোচ্চ চারজন খেলান যাবে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় সেটি পরিবর্তনের নিয়মও রেখেছে বিপিএল কর্তৃপক্ষ। রাজশাহীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি ছাড়াই রাজশাহীকে বিপিএলে ম্যাচ খেলার অনুমতি দিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি।
পরবর্তীতে সেটি ব্যাখ্যা দিয়ে স্পষ্ট করে বিসিবি। এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানায়, রাজশাহীর অনুরোধ বিবেচনা করার পর বিপিএল ২০২৪-২৫ এর ম্যাচ খেলার শর্তাবলির ধারা ১.
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল র ব যবস থ ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।