বড় কেলেঙ্কারিতে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। বিশ্বজুড়ে ধনী সংস্থা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছার কারণে বোর্ডের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিতেও কালিমালেপন করলো দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। 

বরাবরের মতো এবারও বিপিএলকে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক। কিন্তু এবার আগের দশ আসরকেও ছাড়িয়ে গেল। দুর্বার রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা রোববার (২৬ জানুয়ারি) রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কট করেন। বিপিএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে।

বিসিবি শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল ক্রিকেটারদের খেলানোর জন্য। বিপিএল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও বিসিবি পরিচালক মনজুর আলম চেষ্টা করে গেছেন শেষ পর্যন্ত। রাজশাহীর মালিক শফিক রহমান ও তার এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি। 

আরো পড়ুন:

বিপিএল: খেলার চেয়ে ‘ধুলা’ বেশি

বিদেশি ছাড়া ব্যাটিংয়ে ধুকল রাজশাহী, পেল মামুলি সংগ্রহ

মনজুর আলমের সঙ্গে রাইজিংবিডি ডটকমের এই বিষয়ে যখন কথা হয় তখন তিনি ছিলেন বিমানবন্দরে। যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামে। মুঠোফোনে নজিরবীহীন এই মুহুর্তটির বর্ণনা দিয়েছেন মনজুর।  

তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। মালিকের এক বন্ধু ছিল আমার পরিচিত। সে টাকা দিতে রাজি হয়েছিল। টাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাইক দিয়ে ক্রিকেটারদের আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু হোটেল রুমের দরজা খোলেননি কোনো ক্রিকেটার। ততক্ষণে টিম ঘোষণা হয়ে যায়। আর কিছু করার ছিল না।”

“মালিককে আমি বলেছি তোমার সব যাবে। ব্যবস্থা করো। তার কোনো কমিটমেন্ট ঠিক ছিল না। চট্টগ্রামেও আমি ক্রিকেটারদের রাজি করিয়েছিলাম। এবার আর সম্ভব হয়নি”-আরও যোগ করেন মনজুর আলম।

এর আগে গতকাল বোর্ড মিটিংয়ে বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাওনা-দেওনা ইস্যুর সমাধান করা হবে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না যেতেই সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়। এর আগে চট্টগ্রাম পর্বে যখন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা অনুশীলন বাতিল করে তখন বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ ছুটে যান। মনজুর আলমসহ সামাল দেন পরিস্থিতি।

ফারুক এবার বলেছেন আর কোনো ছাড় নয়। মনজুর আলমের ভাষ্য, “প্রেসিডেন্ট পুরো সময়টা ছিলেন। তিনি খুব কঠোর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন আমাদের। বলেছেন, ‘অনেক হয়েছে, আর না।’ এটার সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত। বিসিবি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে। কঠোর ব্যবস্থা।”

শুধু ক্রিকেটারদের পাওনা নয়, চট্টগ্রামে হোটেল বিল নিয়েও গড়িমসি করেন রাজশাহীর মালিক। পরে সর্বোচ্চ ছাড় ও কম বিলে পরিশোধ করেন চট্টগ্রাম থেকে দল আসার একদিন পর। আজ আবার ম্যাচ ডে’তে ঢাকায় হোটেল পরিবর্তন করেন তারা। 

বিদেশিদের সঙ্গে দেশিরাও হুঁমকি দিয়েছিল। পরে তড়িঘড়ি  দেশিদের দেওয়া হয় আরও ২৫ শতাংশ টাকা। যেটির ঘোষণা এনামুল হক বিজয় ফেসবুকে দিয়েছেন।

এদিকে রাইজিংবিডিকে ফ্র্যাঞ্চাইজির একটি সূত্র জানিয়েছে বিদেশিরা চুক্তির টাকা পুরো বুঝে নিতে চাইছেন। এটি না হলে তারা মাঠে নামবেন না আর। সেক্ষেত্রে বিসিবিকে টাকা পরিশোধ তো করতেই হবে সঙ্গে দেশ ও বোর্ডের ভাবমূর্তিতে বড় দাগ লেগে যাবে।

প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ফি হিসেবে দিতে হয় দেড় কোটি টাকা। এটি বিপিএলের অংশগ্রহণ ফি। এ ছাড়া গ্যারান্টি মানি দিতে হয় ৮ কোটি টাকা। এবার দফায় দফায় কমিয়ে ৩ কোটিতে আনা হলেও সেটি দিতে পারেনি রাজশাহী। পরবর্তীতে বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক ৬৮ লাখ টাকা গ্যারান্টি নেন।

বাইলজ অনুযায়ী সর্বনিম্ন দুজন বিদেশি ক্রিকেটারকে খেলাতেই হবে প্রতি ম্যাচে। আর সর্বোচ্চ চারজন খেলান যাবে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় সেটি পরিবর্তনের নিয়মও রেখেছে বিপিএল কর্তৃপক্ষ। রাজশাহীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি ছাড়াই রাজশাহীকে বিপিএলে ম্যাচ খেলার অনুমতি দিয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি।

পরবর্তীতে সেটি ব্যাখ্যা দিয়ে স্পষ্ট করে বিসিবি। এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানায়, রাজশাহীর অনুরোধ বিবেচনা করার পর বিপিএল ২০২৪-২৫ এর ম্যাচ খেলার শর্তাবলির ধারা ১.

২.৮ অনুযায়ী, টেকনিক্যাল কমিটি এই ম্যাচের জন্য দুর্বার রাজশাহীকে শুধু বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গঠনের অনুমতি দিয়েছে। 

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল র ব যবস থ ব প এল

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে