দশ বিষয়ে একমত বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন
Published: 27th, January 2025 GMT
দশ বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এসব বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন এবং ইসলামী শরিয়াহবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া ও ইসলামবিরোধী কোনো কথা না বলা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে চরমোনাইর পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুর ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানিয়েছেন।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যালয়ে ওই বৈঠকে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। ইসলামী আন্দোলনের আমিরের সঙ্গে ছিলেন মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম ও সহকারী মহাসচিব ইমতিয়াজ আলম।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি বরিশালে চরমোনাই পীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.
বৈঠকের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, “আজকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীম সাহেবের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। এ আলোচনায় আমরা মোটামুটি ১০টি বিষয়ে একমত হয়েছি।”
যে ১০ বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন
১. আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম টেকসই রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
২. দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচার।
৩. ভোটাধিকারসহ সব ধরনের মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়া।
৪. ন্যূনতম সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৫. দ্র্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে ও সব অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকীকরণ।
৬. আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।
৭. ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা।
৮. আগামীতে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী শক্তি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা।
৯. ইসলামী শরিয়াহবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া এবং ইসলামবিরোধী কোনো কথা কেউ না বলা।
১০. প্রশাসনে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, “দেশ, মানবতা এবং রাজনীতির ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব আপনাদের (গণমাধ্যমে) সামনে উপস্থাপন করেছেন। এগুলো নিয়ে আমাদেরও একই কথা।”
নির্বাচনের সূচির বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা আমরা আগের থেকেই বলেছি যে, দ্রুত সময়ে; আমরা যে শব্দটা ব্যবহার করেছি যে, খুব বেশি সময় না নিয়ে যৌক্তিক…। সেই যৌক্তিক সময়টা আমরা বলেছি—এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে। এরকম একটা কথা আমরা বলেছি। ছয় মাস তো প্রায় চলেই গেল। আর এক বছরের মধ্যেই সুন্দর একটা জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে সরকার, এটাই মূলত আমাদের কথা।”
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, “আমাদের দুই দলের মধ্যে আলোচনা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে।”
রাইজিংবিডি/নঈমুদ্দীন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ও ইসল ম ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
আট মাস আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তাকে ‘অশ্বডিম্ব’ বলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন।
‘জগাখিচুড়ি মার্কা’ কমিশনের সুপারিশের পর পরিস্থিতি জটিলতার দিকে মোড় নেওয়ার দিকটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আট মাস আলোচনার পর একটা অশ্বডিম্বের মতো একটা অবস্থা।’
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংলাপে ‘পলিটিকস ল্যাব: পাবলিক ডায়ালগ’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন সাজ্জাদ জহির। এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপ ও গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জার্মান ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটুং (এফইএস)-এর সহযোগিতায় ‘পলিটিকস ল্যাব’ শিরোনামে চারটি ধারাবাহিক কর্মশালা করেছে সিজিএস। তার সমাপনী অনুষ্ঠান হিসেবে আজকের সংলাপ হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। নানা প্রশ্নে বিভিন্ন দলের আপত্তির বিষয়গুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে না থাকা নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
এই সংকট তৈরির জন্য ঐকমত্য কমিশনকে দায়ী করে সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘এটার সমাধানটা কী? এই গণভোটের সমাধানটা কী? জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু নেই। মানে একধরনের হাওয়ার ওপরে সবকিছু চলছে। এখানে ৮৪টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০টাতে একমত হয়েছে, বাকিগুলোতে একমত হয়নি। তাহলে কোন বিষয়ে ভোটটা হবে।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘আমরা দেখলাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর হলো। এরপর সর্বশেষ সংস্কার কমিশন তারা আবার আরেকটা খেলা খেলল এখানে। দেখেন কী অবস্থা! তারা বলছে যে নোট অব ডিসেন্ট কিছুই থাকবে না। ভিন্ন মত থাকবে না। আমার তো ভিন্নমত আছে, কেন থাকবে না?’
গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে কোথাও গণভোটের কোনো বিধান নেই। একটা আছে যেটা ১৪২ ধারা। যেটা নির্বাচিত সংসদে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতভেদ তীব্রতর হয়, তাহলে সেই বিষয়ের ওপরে নির্বাচিত সংসদ জনগণের আহ্বান করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণভোট সংবিধানসম্মত নয়।’
সিপিবির সভাপতি বলেন, এসব জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে গত বছরের অক্টোবর মাসে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছিলেন। তবে ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ সরকার সেটি শোনেনি।