আমদানিনির্ভরতা কমাতে দেশেই বড় পরিসরে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ জন্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। তারা ২০১৮ সালের নীতিমালা বাস্তবায়ন ও নমনীয় সুদে ঋণ চান। 
গত ১৮ নভেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে এমন লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন উপদেষ্টা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস (এপিআই) এবং রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত রিএজেন্ট উৎপাদনে জৈব ও অজৈব ক্ষুদ্র অণু উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। মূলত চীন, ভারত ও কোরিয়া থেকে এগুলো আনা হয়। এতে বছরে খরচ প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। দেশে বড় পরিসরে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদন শুরু হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি অন্তত ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। একই সঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের কাঁচামাল পাবে দেশ।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে অন্তত ১১টি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান বর্তমানে এপিআই উৎপাদন করছে। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়লে দেশের অন্তত ৫০ শতাংশ চাহিদা স্থানীয়ভাবে মেটানো সম্ভব। ২০১৭ সালে স্থানীয় উৎপাদকরা ৪১টি এপিআই মলিকিউল এবং রিএজেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এপিআই স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করে আমদানিনির্ভরতা কমানো এবং রপ্তানির উদ্দেশ্যে এই প্রণোদনার ঘোষণা করে সরকার। ২০১৮ সালে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হয়। এতে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনকারীকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত আয়কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া হয়। তবে এই সুবিধা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নানা শর্ত জুড়ে দেয়। শর্তের জালে আটকে যায় প্রণোদনা সুবিধা। ২০১৮ নীতিমালা হলেও এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০২১ সালের শেষে।
এনবিআর বলছে, যেসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এপিআই ও গবেষণাগারের রিএজেন্ট উৎপাদন করছে, তাদের জন্যও ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে কর রেয়াত প্রযোজ্য হবে। গত সোমবার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর জানায়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০৩২ পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা উপভোগ করার জন্য উৎপাদনকারীকে প্রতি বছর অন্তত ৫টি এপিআই ও গবেষণাগার রিএজেন্ট উৎপাদন করতে হবে। ৫টির কম এপিআই বা রিএজেন্ট উৎপাদন হলে সুবিধা মিলবে না। 

দেশে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল তৈরিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি এস এম সাইফুর রহমান সমকালকে বলেন, ২০১৮ সালের ওষুধ নীতি অনুসারে বাংলাদেশে নিবন্ধিত এপিআই ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদকদের রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান ও স্বল্প শর্তে ঋণ দেওয়া হলে বিকাশ হবে এই শিল্পের। এ ছাড়া উৎপাদনে ক্রয় বিক্রি ভ্যাট ২০৩২ সাল পর্যন্ত মওকুফ করতে হবে। এপিআই মলিকিউল ও রিএজেন্ট উৎপাদকদের তাদের বার্ষিক মুনাফার কমপক্ষে ১ শতাংশ গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে; যাতে পর্যায়ক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্তি বাড়ে।

গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দিন বলেন, চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদন করা হয়। তবে এর ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল বাইরে থেকে আনতে হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হলে খরচ কমবে এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা বাড়বে। 
নিপ কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, চীন ও ভারত সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দেয়। গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়। ভারত সরকার ৬২টি প্রয়োজনীয় ওষুধের কাঁচামাল দেশে তৈরি বাধ্যবাধকতা করেছে। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। চীনেরও এমন অনেক উদ্যোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের রাষ্ট্র অনেক পিছিয়ে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.

) ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওষুধের কাঁচামাল দেশে উৎপাদন করা জরুরি। এপিআই শিল্প বিকাশে এখনই উপযুক্ত সময়। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওষুধ উৎপাদনের ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা, সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়াসহ অন্যান্য নীতিমালা বাস্তবায়নে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • পুলিশের ৯ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর