৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান মাহমুদ।

তিনি বলেন, এতদিন আইন অনুযায়ী ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের আওতার বাইরে ছিলেন। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৩০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটের আওতার বাইরে রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ছোট ব্যবসায়ীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। আগের মতো ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখতে হবে।

নাজমুল হাসান মাহমুদ বলেন, এতদিন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, শপিংমলে অবস্থিত দোকানগুলোর ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটের আওতার বাইরে ছিল। নতুন প্রজ্ঞাপনে এসব দোকানকে এ টার্নওভার সীমার বাইরে রাখা হয়েছে। দোকান ব্যবসায়ীরা এটি প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থাৎ পুনরায় এসব দোকানকে ৫০ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখতে হবে।

এনবিআর নতুন করে বিভিন্ন পণ্যের ওপর যে বর্ধিত ভ্যাট আরোপ করেছে তা প্রত্যাহারের জোর দাবি তুলে তিনি বলেন, উৎপাদন বা আমদানি পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি নির্ধারণ করে ভ্যাট আদায় করার দাবি করছি। এতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা ভ্যাট নামে হয়রানি থেকে মুক্ত থাকবে।

রোজার মাস ছাড়া অন্য যে কোনও মাসে ভ্যাট অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছে ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরফিুর রহমান টিপু বলেন, ছোট ব্যবসায়ীরা বছরের ১০ মাসে যে পরিমাণ বেচাকেনা করেন তারচেয়ে পাঁচ-ছয় গুণ বেচাকেনা করেন রোজার মাসে। কিন্তু ভ্যাট কর্মকর্তারা রোজার মাসকে ব্যাট আদায়ের মাস হিসেবে বেচে নেন। তারা রোজার বেচাকেনাকে ভিত্তি ধরে পুরো বছরের ব্যবসার বেচাকেনা হিসেব করেন। এতে কয়েকগুণ বেশি ভ্যাট গুণতে হয় ব্যবসায়ীদের।

এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ জানান সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ভ্যাট আদায়ের সময় কিছু কর্মকর্তা টেবিলের নিচ দিয়ে টাকা নেয়। দেখা যায়, একটি দোকান থেকে ৫০০ টাকা ভ্যাট আদায় করে তা সরকারি কোষাগারে দিল। কিন্তু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টেবিলের নিচ দিয়ে নিল এক হাজার টাকা। এক্ষেত্রে সরকার যথাযথ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।

নাজমুল হাসান মাহমুদ বলেন, জিডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখা ৭০ লাখ দোকান ব্যবসায়ী প্রায় দুই কোটি লোকের কর্মসংস্থান করে থাকে। ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ীরা বিরোধী নয়। তবে ভ্যাট আদায় সহজীকরণ করতে হবে। যৌক্তিক বেচাকেনার ওপর ভ্যাট নির্ধারণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে, ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ব্যবাসায়ীদের সুদ মওকুফ করে ১ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ১৫ বছরের কিস্তিতে এককালীন ঋণ পরিশোধের প্রজ্ঞাপন জারির দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণের সময় দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ষ দ র ব যবস য় ক ষ দ র ব যবস য় দ ক ন ব যবস য় ৫০ ল খ ট ক ব যবস য় র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ