প্রবন্ধ প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ ‘ছাত্র সংবাদ’ কর্তৃপক্ষের
Published: 29th, January 2025 GMT
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’। একইসঙ্গে ‘সম্পাদকমণ্ডলীর অসতর্কতাবশত’ প্রবন্ধে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটি লাইন প্রকাশ হওয়ায় দুঃখও প্রকাশ করা হয়।
বুধবার রাত ৮টার দিকে পত্রিকার ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, এ ধরনের লেখা প্রকাশের জন্য শিবিরকে জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে বলেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এছাড়া প্রকাশনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আওতায় বিচারের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
ছাত্র সংবাদের পোস্টে বলা হয়, ঐতিহ্যগতভাবে ‘ছাত্র সংবাদ’ মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা প্রকাশ করে থাকে। পত্রিকাটি মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস নিয়ে বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারাহিকতায় গত ডিসেম্বর’২৪ সংখ্যায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা প্রকাশ করে। তবে ওই সংখ্যায় সম্পাদকমণ্ডলীর অসতর্কতাবশত ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটি লাইন প্রকাশ হয়ে যায়।
এতে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে, এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রবন্ধ প্রকাশে ‘ছাত্র সংবাদ’ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে এবং বিতর্কিত এই প্রবন্ধটি অনলাইন থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। সেই সাথে ২০২৪ এর ডিসেম্বর সংখ্যার সকল প্রিন্ট কপিও প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
শিবিরকে ক্ষমা চাইতে হবে: ছাত্রদল
ইসলামী ছাত্রশিবিরের দলীয় প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’-এ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তারা বলেছে, এ জন্য জাতির কাছে ছাত্র শিবিরকে ক্ষমা চাইতে হবে। বুধবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান। ছাত্রদল নেতারা অবিলম্বে শিবিরকে এই ঘটনায় নিজেদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করারও আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রকাশকদের রাষ্ট্রদ্রোহের আওতায় এনে বিচারের দাবি
মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে লেখা প্রবন্ধ প্রকাশ করায় প্রকাশকদের গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আওতায় বিচারের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কানিজ ফাতেমা ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এ দাবি জানান।
তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি ছাত্র শিবিরের মাসিক প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কটাক্ষ করে বাংলাদেশে অস্তিত্বকে অস্বীকার ও সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিচার করতে হবে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো রাজপথে কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব