বাধা ও হুমকির মুখে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে নারীকেন্দ্রিক আয়োজন। এরই মধ্যে একাধিক অভিনেত্রী উপস্থিত হতে পারেননি তাদের পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে। এমনকি দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে হাঙ্গামা বাধে স্থানীয় ‘তৌহিদি জনতা’ ও আয়োজকদের মধ্যে। খেলা বন্ধ করতে হামলা-ভাঙচুর করা হয় মাঠে। নারীর প্রতি এমন বিদ্বেষপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়ে যাচ্ছে প্রতিবাদের ঘূর্ণি।

এদিকে ঢাকায় কওমি উদ্যোক্তাদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক নারী সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে অনুষ্ঠানস্থলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ‘কওমি উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২৫’ নামে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড.

আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এদিকে, দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে হামলায় পণ্ড নারীদের ফুটবল ম্যাচ ফের আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। নারীদের খেলায় বাধা দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল সরকারপ্রধানের কার্যালয় জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার যে কোনো গোষ্ঠীর নাগরিকের প্রতি বৈষম্য বা নিপীড়নের চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলছে, নারীরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং পুরুষের মতোই সমানভাবে মানবিক ও নাগরিক অধিকার ভোগ করেন। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশি নাগরিকের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লি’ ও ‘তৌহিদি জনতা’র নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের অন্তত ৮০টি মাজার-দরবারে হামলা, লুটপাট হয়েছে। এরপর বেশ কয়েকজন অভিনেত্রীকে তাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ‘মুসল্লি’র চাপে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস একটি অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। বিভিন্ন স্থানে নারীকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান বাধা, মাজারে হামলার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও থেমে নেই ঘটনা। ‘মব জাস্টিস’-এর মাধ্যমে যারা এসব করে যাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন মানবাধিকারকর্মীরা। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল সমকালকে বলেন, নারী ফুটবলারদের আয়োজন পণ্ড করা, অভিনেত্রীকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার ঘটনা নিন্দনীয়। বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি হবে– ভাবতেই পারিনি। বৈষম্যবিরোধী নীতি থেকে জুলাই বিপ্লব হয়েছে। নারীর প্রতি বৈষম্য করাটাও জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটের বিরুদ্ধে যায়। তাহলে জুলাই বিপ্লবের নীতির বিরুদ্ধে প্রতারণা করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের শক্ত অবস্থান নেওয়া দরকার। তারা ব্যবস্থা নিয়ে দেখাক। নয়তো এটাও বাগাড়ম্বর হবে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মুসলিম বলেন, এসব ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ; খুবই উদ্বিগ্ন। নারীকে আটকে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না। ফৌজদারি আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে নারীর প্রতি অসম্মান, নারীবিদ্বেষী আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, এ ধরনের কাজ ইসলামের সুনাম ক্ষুণ্ন করে। বিভিন্ন স্থানে নারীদের বাধা দেওয়া কিংবা মাজার ভাঙা অপরাধ। তৌহিদি জনতার ব্যানারে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে সমাজে ইসলামের প্রতি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হবে। দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে। 

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম বলেন, এভাবে হামলা ইসলাম সমর্থন করে না। এ ধরনের কাজ করা হলে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। 
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, স্বীকৃতভাবেই আমরা গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের সমাজ। এখানে মতবিরোধ থাকলে তার জন্য প্রশাসনিক ও বিচারিক পর্যায়ে বন্দোবস্ত আছে। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না। নারীর খেলায় বাধা, মাজারে হামলা– এসব দুর্ভাগ্যজনক। এসব বন্ধে সরকারকে কঠোর বার্তা দিতে হবে। যেখানে এসব ঘটছে, সেখানে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা নিতে হবে, তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করতে হবে। আর সমাজের ভেতর থেকেও স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হওয়া উচিত। 

জয়পুরহাটের ঘটনার ব্যাপারে ওই জেলার পুলিশ সুপার মো. আবদুল ওহাব বলেন, স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে খেলা স্থগিত হয়। জেলা প্রশাসকসহ আমরা তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। 

স্থানীয় জনগণ কারা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক রয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক ব্যানার ছিল না। 
দিনাজপুরেরর ঘটনার ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আনোয়ার হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কায় খেলার আগের দিন মৌখিকভাবে খেলা স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। স্থানীয় লোকজন ঘটনা ঘটিয়েছে। দু’পক্ষের লোকজন আহত হয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ নিয়ে এখনও কেউ আসেনি। বাইরে উভয়পক্ষ বসে মীমাংসা করেছে। 

রেস্তোরাঁ উদ্বোধনে বাধা

চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে দিয়ে মঙ্গলবার কামরাঙ্গীরচর এলাকার একটি রেস্তোরাঁ উদ্বোধনের কথা ছিল। তবে এ নিয়ে প্রচারণা চালানোর পর্যায়েই আপত্তি তোলে একটি গোষ্ঠী। কেউ কেউ ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এ পরিস্থিতিতে চিত্রনায়িকা আর যাননি। 

কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি আমীরুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় দুই শতাধিক মাদ্রাসা। সেইসব মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্ররাই মূলত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। খেলাফত আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিরোধিতা করেন। তাদের কথা, কামরাঙ্গীরচর হাফেজ-হুজুরদের মাটি, এখানে কোনো নায়িকা আসবে না। সেই পরিস্থিতিতে রেস্তোরাঁর মালিকপক্ষই পুলিশকে বলে, আমরা এখানে ব্যবসা করতে চাই, কারও সঙ্গে বিরোধ থাকলে সমস্যা। পরে চিত্রনায়িকা আসেননি। এলে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে, আমরা বিষয়টি দেখতাম। 

ফার্মগেটে ওরস বন্ধের দাবি 

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কুতুববাগ দরবার শরিফের ওরস বন্ধের দাবিতে গত সোমবার বিক্ষোভ করে ‘সচেতন মুসলিম নাগরিক সমাজ ও ইমাম খতিব উলামা পরিষদ’। তারা তেজগাঁও কলেজের সামনে থেকে মিছিল কুতুববাগ দরবার শরিফের মূল ভবনের দিকে যান। তখন সড়কের পাশে ওরস উপলক্ষে তৈরি করা আলোকসজ্জাসহ অস্থায়ী স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। তারা স্লোগান দেন– কুতুববাগীর আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও; আল-কোরআনের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একপর্যায়ে পুলিশ ভাঙচুরে বাধা দেয় এবং তাদের সরে যেতে বলে। শেষ পর্যন্ত সংঘাত এড়াতে ওই ওরস স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। 

এ ব্যাপারে শেরবাংলা নগর থানার ওসি মোহাম্মদ গোলাম আজম বলেন, ওরস বন্ধের দাবিতে মিছিল নিয়ে এসে বিক্ষোভ করে কিছু মানুষ। তবে তারা ভাঙচুর করেনি। পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছে।

নাট্য প্রদর্শনী বন্ধ 

বিক্ষোভের মুখে প্রায় তিন মাস আগে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের ঘটনাও ঘটে। গত ২ নভেম্বর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় নাট্য সংগঠন দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ নিজেই এ সিদ্ধান্ত দেন। এ নিয়ে সেই সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করে মহাপরিচালক জানান, শিল্পকলা একাডেমি আক্রান্ত হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে তিনি নাটক বন্ধ করতে বাধ্য হন। এটাকে ‘খণ্ড যুদ্ধে’ হেরে যাওয়া হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ওই পরিস্থিতিতে তিনি কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেননি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আর দমন-পীড়ন চাইনি। বিক্ষোভ করতে যারা এসেছিলেন, তাদের মধ্যেও দু’জন ছিলেন জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর দেশে নানা ধরনের হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ব সুফি সংস্থা নামে একটি সংগঠন জানায়, ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৮০টির বেশি মাজার ও দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ করা হয়েছে।

জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবলে বাধা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বুধবার নারীদের ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে মাইকে প্রচার শুনে মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে স্থানীয় কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মুসল্লিরা মিলে খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।

অভিযোগ রয়েছে তিলকপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির জেলা নেতা মাওলানা আব্দুস সামাদ, তিলকপুর বাচ্চাহাজী মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকার মুসল্লিরা তিলকপুর রেলস্টেশনের সামনে স্বাধীনতা চত্বরে একত্রিত হন। এর পর সেখান থেকে স্লোগান দিতে দিতে তারা তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।

তিলকপুর বাচ্চাহাজী মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মেয়েদের খেলার কথা শুনে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। তবে তারা শোনেননি। পরে ধর্মপ্রাণ মুসলমান, তৌহিদি জনতাসহ ৫০০-৬০০ জন সেখানে গিয়ে খেলার মাঠে ঘেরা টিন খুলে দিয়েছি। কোনো সহিংসতা হয়নি। নারীরা বেপর্দা অবস্থায় খেলাধুলা করবে, এতে যুবকদের চরিত্র ঠিক থাকবে না।

তিলকপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের খেলাধুলা করার কথা না, তার পরও ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর আমরা আলেম সমাজ ও এলাকাবাসী মিলে প্রতিবাদ গড়ে তুলি।

আক্কেলপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান বলেন, দু’পক্ষের বিরোধ হওয়ায় বুধবার আলোচনার কথা ছিল। তার আগেই সেখানে একটি পক্ষ ভাঙচুর করেছে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।

জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, খেলা আয়োজনের আগে বৈঠকের কথা ছিল। কারণ পোশাক, আইনশৃঙ্খলার কিছু বিষয় আছে। কিন্তু নারীদের খেলতে দেবে না, এটি মনে হয় না। আলেমরা নারীদের নিয়ে কোনো বক্তব্য দিলে তা আমি শুনিনি।

দিনাজপুরে নারী ফুটবল নিয়ে সংঘর্ষ

দিনাজপুরের হাকিমপুরের বাওনা গ্রামে মঙ্গলবার নারী ফুটবল প্রীতি ম্যাচ ঘিরে ‘তৌহিদী জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভকারী ও ম্যাচ আয়োজকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে খেলা দেখতে যাওয়া ছয় বছরের শিশু শওকত রাফিসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এর পর প্রশাসন খেলা স্থগিত করে।

আয়োজক কমিটি বাওনা ছাত্র কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, খেলা শুরুর আগমুহূর্তে এলাকার তাবলিগ জামাত ও কওমি মাদ্রাসার কিছু ছাত্র-শিক্ষক হামলা চালিয়েছেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে মামলা করার সাহস পাচ্ছি না। প্রশাসন উল্টো আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

হাকিমপুর-ঘোড়াঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আ ন ম নিয়ামত উল্লাহ জানান, আইনশৃঙ্খলার অবনতির শঙ্কায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খেলা বন্ধের নির্দেশনা দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর থাকার পরও কিছু লোক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

তৌহিদী জনতা কারা? এ প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসন জানে তারা কারা। তবে এই মুহূর্তে অফিসিয়ালি তা বলা যাচ্ছে না। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় জানান, যেহেতু সেই স্থানে রক্তের দাগ লেগেছে, তাই আপাতত খেলা বন্ধ রাখা হয়েছে।

টাঙ্গাইলে বাধার মুখে পরীমণি

কালিহাতীর এলেঙ্গায় গত ২৫ জানুয়ারি কসমেটিক পণ্যের দোকান ‘হারল্যান স্টোর’ উদ্বোধনের কথা ছিল চিত্রনায়িকা পরীমণির। তবে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ এবং হেফাজতে ইসলামের টাঙ্গাইল ও কালিহাতী শাখার বাধায় অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

হারল্যান স্টোরের স্বত্বাধিকারী মীর মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, উদ্বোধনের দু’দিন আগে বৃহস্পতিবার রাতে শরিফুল ইসলাম নামে একজন ফোন করে জানান, তারা পরীমণিকে এনে অনুষ্ঠান করতে দেবেন না। শুক্রবার ফোন করেন মুফতি সুলাইমান, মুফতি সুরুজ্জামান, বাজার মসজিদের ইমাম মীর আশরাফ, বানিয়াবাড়ি মসজিদের ইমাম মুফতি শাহীন, রাজাবাড়ি মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি মুকতার আলীসহ ৩০ থেকে ৪০ জন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ এবং শোরুমের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায় টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেন।

হেফাজতে ইসলাম টাঙ্গাইল জেলা শাখার যুববিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ কালিহাতীর সভাপতি মুফতি সুলাইমান হাবিব বলেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক নেতিবাচক আলোচনা হওয়ায় স্থানীয় ইমাম, আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ কিছু ভাই আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় ওলামায়ে কেরামসহ আমি শোরুমের মালিকের সঙ্গে কথা বলি। 

কালিহাতী থানার ওসি আবুল কালাম ভূঞা বলেন, প্রচুর লোকসমাগম হবে ধরে নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে পরে আয়োজক জানান, অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে। বাধা দেওয়ার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। 

চট্টগ্রামে শোরুম উদ্বোধন করতে পারেননি মেহজাবীন

গত ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে নারীদের পণ্যের পসরা নিয়ে চালু হওয়া ‘খুকি লাইফ স্টাইল’ নামে একটি শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। কারণ, ‘রিয়াজউদ্দিন বাজারের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী ও তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে বিক্ষোভ করেন একদল মানুষ।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, এক দিন আগে হুজুর দিয়ে শোরুমটি উদ্বোধন করা হয়েছে। পরদিন মেহজাবীন চৌধুরীকে দিয়ে যখন উদ্বোধন করানোর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে, তখন অনেকে মনে করেছেন, এটা হুজুরকে অপমান করা। কিছু ব্যবসায়ী ও সাধারণ মুসল্লি ক্ষিপ্ত হয়ে শোরুমের নিচে অবস্থান নেন। 

ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি আসকের

দুই জেলায় নারী ফুটবল ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি, হামলা ও খেলা বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আসক মনে করে, নারী ফুটবল ম্যাচ বন্ধসহ মাজারে হামলা ও বাউলশিল্পীদের গানের আসর বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাগুলো দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজদারি অপরাধ। 

সুষ্ঠু তদন্তের দাবি বাফুফের

জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ ও হামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। প্রীতি ম্যাচটি বাফুফের আওতাধীন না হলেও ফুটবলের স্বার্থ বিবেচনায় বুধবার রাতে তারা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। বাফুফের বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে, ফুটবল সবার জন্য এবং নারী ফুটবলারদের খেলায় অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। নারীদের খেলাধুলায় বাধা সৃষ্টি করা ক্রীড়ার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পরিপন্থি। বাফুফে বিশ্বাস করে, দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। 

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম ব্যুরোর আব্দুল্লাহ আল মামুন, জয়পুরহাট প্রতিনিধি শাহারুল আলম, আক্কেলপুর প্রতিনিধি মওদুদ আহম্মেদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি আবদুর রহিম ও হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা মুসা মিয়া] 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র দ র ফ টবল ফ টবল ম য চ ব ক ষ ভ কর পর স থ ত ত লকপ র অবস থ ন ব যবস থ ল ইসল ম উপদ ষ ট এ ধরন র ইসল ম র য গ কর বন ধ র সরক র ঘটন য় অপর ধ ন করত র ঘটন দরব র

এছাড়াও পড়ুন:

আরও বিস্তৃত হয়েছে শ্রমিকের সংগ্রামের জমিন 

মে দিবস। পৃথিবীর খেটে খাওয়া মানুষের দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে আট ঘণ্টা শ্রমদিবসের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন শ্রমিকেরা। পুলিশের গুলিতে বহু মানুষ প্রাণ হারান। কিন্তু সেই রক্তের বিনিময়েই কাগজে–কলমে হলেও প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমের মর্যাদা, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা, ন্যায্য মজুরি ও সংগঠনের অধিকার। একসময় এসব দাবিই রূপ নেয় আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের ভিত্তিতে।

কিন্তু ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে আমরা যখন এই দিনে ফিরে তাকাই, তখন প্রশ্ন আসে, এখনো কি সেই সব দাবি প্রাসঙ্গিক? নাকি সময় পাল্টে দিয়েছে সব? এখন তো কাজের ধরনই বদলে গেছে—একদিকে অটোমেশন, অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়যাত্রা। উৎপাদনের পদ্ধতি যেভাবে বদলেছে, তাতে পুরোনো ধরনের শ্রমিক যেন ক্রমে অদৃশ্য হয়ে পড়ছেন।

আজকের দুনিয়ায় পুঁজি এক ক্লিকে দেশান্তরিত হয়, কারখানা গড়ে ওঠে যেখানে মজুরি কম এবং আইনের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল। মানুষ এখন আর কেবল শ্রমিক নয়; তাঁদের বলা হচ্ছে ‘ফ্রিল্যান্সার’, ‘কন্ট্রিবিউটর’, ‘পার্টনার’, ‘ডেলিভারি ম্যান’। কিন্তু আসলে, এদের অনেকেই এক নতুন ধরনের দিনমজুর; যাঁদের নেই নিরাপত্তা, নেই সুনির্দিষ্ট অধিকার। কাজ করছেন তাঁরা—কখনো রাস্তায় খাবার পৌঁছে দিয়ে, কখনো কম্পিউটারে চ্যাটবট প্রশিক্ষণ দিয়ে, আবার কখনো অ্যালগরিদম পরিশোধনে; কিন্তু কেউই প্রাতিষ্ঠানিক কর্মী নন। তাঁরা জানেন না যে তাঁদের কাজের ফল কোথায় যাবে, কীভাবে ব্যবহৃত হবে।

এই ব্যবস্থার একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে অ্যামাজন। তাদের গুদাম ও সরবরাহ চেইনে রোবট, ড্রোন ও এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। শ্রমিকেরা সেখানে নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করতে বাধ্য হন, মেশিনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অথচ যখন তাঁরা সংগঠিত হতে চান, তখন কোম্পানির বিরুদ্ধে ওঠে লবিং, বিরোধিতা, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ। ২০২৩ সালে অ্যামাজনের একাধিক গুদামে ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টাকে রুখে দিতে কোম্পানিটি কোটি কোটি ডলার খরচ করে আইনি দল গঠন করে।

মে দিবস আজও জীবিত; কিন্তু তার সংগ্রামের মাঠ আরও বিস্তৃত হয়ে গেছে। তা এখন শুধু কারখানার ফটক নয়; সার্ভার রুমে, ডেটা সেন্টারে, কোড লাইনে, ক্লাউড সিস্টেমে। কিন্তু যেখানেই হোক শ্রমিক তো সে–ই, যাঁর শ্রমে পৃথিবী চলে, যাঁকে ছাড়া কিছুই চলে না

শুধু অ্যামাজন নয়, গোটা দুনিয়াতেই শ্রমের এক নতুন রূপ তৈরি হচ্ছে—ডিজিটাল ও প্ল্যাটফর্মভিত্তিক শ্রম। এই ব্যবস্থায় শ্রমিকেরা কাজ করেন উবার, ফুডপান্ডা, আপওয়ার্ক বা ফাইভারের মতো অ্যাপে যুক্ত হয়ে। অথচ তাঁদের নেই কোনো কর্মস্থল, নেই কর্মঘণ্টার নিশ্চয়তা, নেই অসুস্থতার ছুটি বা পেনশনের মতো সামাজিক সুরক্ষা। বাস্তবে তাঁরা একা, বিচ্ছিন্ন। প্রতিযোগিতার চাপে তাঁদের ঠেলে দেওয়া হয় অনিরাপত্তার ভেতর।

২০২৩ সালের একটি আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশের অন্তত ৮০% গিগ-ওয়ার্কার দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। অথচ তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ মাস শেষে কোনো নির্দিষ্ট ন্যূনতম মজুরি পান না। গ্লোবাল গিগ ইকোনমির এই বাস্তবতা বাংলাদেশেও দৃশ্যমান। আমাদের শহরগুলোয় এখন হাজারো বাইক বা সাইকেলচালক কাজ করছেন খাবার কিংবা পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য, কিন্তু তাঁরা কেউই প্রাতিষ্ঠানিক কর্মী নন।

এর পাশাপাশি আরও একটি বড় পরিবর্তন এনেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান। প্রশ্ন উঠেছে, এআই কি শ্রমিকের বন্ধু, না প্রতিদ্বন্দ্বী? যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার এক গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ৫ বছরে এআই কমপক্ষে ৮০ কোটি মানুষের কাজের ধরন পাল্টে দেবে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ সম্পূর্ণভাবে কাজ হারাতে পারেন। হোয়াইট-কলার পেশাগুলো যেমন হিসাবরক্ষণ, গ্রাহকসেবা, এমনকি সাংবাদিকতার কাজও এই প্রযুক্তির কারণে সংকটে পড়ছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৩ সালের ‘দ্য ফিউচার অব জবস’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮ কোটি ৫০ লাখ কাজ হারিয়ে যাবে প্রযুক্তি ও অটোমেশনের কারণে। তবে একটা মৌলিক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। যদি উৎপাদিত পণ্যের খরিদ্দার না থাকে, তাহলে উৎপাদন করে কীভাবে মুনাফা আসবে? আর শ্রমিক না থাকলে কিনবে কে? তবে একই সময়ে ৯ কোটি ৭০ লাখ নতুন ধরনের কাজের সৃষ্টি হতে পারে। কাজগুলো হবে ডেটা অ্যানালিটিকস, প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালনা এবং সৃজনশীল ও মানবিক দক্ষতানির্ভর কাজ। এই নতুন শ্রমিকদের অবস্থার কথা ওপরে বলা হয়েছে।

কিন্তু এই নতুন কাজের মালিকানা কার হাতে? শ্রমিকদের নয়, রাষ্ট্রেরও নয়—এই ক্ষমতা এখন করপোরেট অলিগার্কদের হাতে কেন্দ্রীভূত। যুক্তরাষ্ট্রে ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গদের মতো প্রযুক্তি ধনকুবেররা শুধু প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রকই নন, তাঁরা রাজনীতিতেও সরাসরি প্রভাব ফেলছেন। করপোরেট লবিংয়ের মাধ্যমে আইন তৈরির পেছনে তাঁদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে; যেমন ট্যাক্স ছাড়, শ্রম আইন শিথিলকরণ বা প্রতিযোগিতা নীতির ধ্বংস।

বাংলাদেশেও দৃশ্যপট খুব আলাদা নয়। তৈরি পোশাকশিল্পে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাঁরা দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতের ভিত্তি। কিন্তু তাঁরা এখনো ন্যূনতম মানবিক মজুরি পান না। গত বছর শ্রমিকেরা ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরি চাইলেও সরকার তা নামিয়ে ১২ হাজারে নিয়ে আসে। আন্দোলনের জবাবে আসে পুলিশি দমন, ধরপাকড়, ভয়ের পরিবেশ। মালিকেরা নতুন প্রযুক্তি বসিয়ে আরও কম শ্রমিক দিয়ে আরও বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করবেন। আগে–পরে এটা অবধারিত।

এই প্রেক্ষাপটে মে দিবস আজ আমাদের সামনে এক নতুন প্রশ্ন তোলে—শ্রমিক আসলে কে? তাঁর অধিকার কী? আর লড়াইটা কিসের জন্য?

যদি শ্রমিকের সংজ্ঞাই বদলে যায়, তাহলে লড়াইয়ের রূপও কি পাল্টাতে হবে না? একসময়ের আট ঘণ্টার কাজের দাবি এখন হয়তো পুরোনো মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে বহু মানুষ এখনো দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। কেউ কাজ পাচ্ছেন না, কেউ কাজ করেও মাস শেষে ঠিকমতো পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। কেউ এমন এক ধরনের ডিজিটাল শ্রম করছেন, যার নিয়ন্ত্রণ বা মালিকানা তাঁর নয়, তিনি জানেনই না যে কার জন্য কাজ করছেন।

তাই আজ মে দিবস শুধু অতীত স্মরণের দিন নয়—এটি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনারও দিন। এটি নতুন ধরনের দাবির জায়গা—ডিজিটাল শ্রমের স্বীকৃতি, গিগ-ওয়ার্কারদের অধিকার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে জনসাধারণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি। আর অবশ্যই আমাদের মতো দেশে গায়ে খাটা শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবি।

মে দিবস আজও জীবিত; কিন্তু তার সংগ্রামের মাঠ আরও বিস্তৃত হয়ে গেছে। তা এখন শুধু কারখানার ফটক নয়, সার্ভার রুমে, ডেটা সেন্টারে, কোড লাইনে, ক্লাউড সিস্টেমে। কিন্তু যেখানেই হোক, শ্রমিক তো সে–ই, যাঁর শ্রমে পৃথিবী চলে, যাঁকে ছাড়া কিছুই চলে না।

এই সত্য যত দিন থাকবে, মে দিবস তত দিন থাকবে; নতুন প্রশ্ন নিয়ে, নতুন লড়াই নিয়ে।

জাভেদ হুসেন প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী

সম্পর্কিত নিবন্ধ