Samakal:
2025-11-03@08:21:37 GMT

নিন্দাই যথেষ্ট নহে

Published: 31st, January 2025 GMT

নিন্দাই যথেষ্ট নহে

দেশে গত কয়েক দিন যাবৎ বাধা ও হুমকির মুখে একের পর এক নারীকেন্দ্রিক আয়োজন বন্ধ হইবার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন বলিতেছে, মঙ্গল ও বুধবার কথিত তৌহিদি জনতা নামক গোষ্ঠীর হুমকির মুখে জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারীর ফুটবল খেলা বন্ধ করিয়া দিতে হইয়াছে। দিনাজপুরে উক্ত ‘তৌহিদি জনতা’ মাঠে হামলা-ভাঙচুরও চালাইয়াছে। শুধু উহাই নহে; অতি সম্প্রতি অনুরূপ গোষ্ঠীর হুমকির মুখে প্রথমে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এক অনুষ্ঠানে চিত্রনায়িকা পরীমণি এবং পরবর্তী সময়ে খোদ রাজধানীতে পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে আরেক চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস উপস্থিত হইতে পারেন নাই। এমনকি ঢাকায় ‘কওমি উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক নারী সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহের লক্ষ্যে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হইয়াছে, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড.

আ ফ ম খালিদ হোসেন। এই সকল ঘটনা স্পষ্ট করিয়া দেয়– দেশে ইতোমধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে কষ্টার্জিত অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য হইলেও উহা অদ্যাবধি ভঙ্গুর রহিয়া গিয়াছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে খুলনার বটিয়াঘাটায় এক দল মানুষ অনূর্ধ্ব-১৭ খুলনা বিভাগীয় নারী ফুটবল দলের চার সদস্যকে হাফপ্যান্ট পরিধান এবং ‘অনাচারী আচরণ’-এর জন্য আক্রমণ করে। গত বৎসর চট্টগ্রামে এক অভিনেত্রীকে একটি শোরুম উদ্বোধনে বাধা প্রদান করা হয়। আমরা মনে করি, উল্লিখিত ঘটনাগুলির হোতাদের উপযুক্ত শাস্তি বিধানসহ নারী অধিকার হরণের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গঠন করা হইলে হয়তো সাম্প্রতিক অনকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলি আমাদের প্রত্যক্ষ করিতে হইত না।

স্বীয় চরম রক্ষণশীল মত অন্যের উপর চাপাইয়া দিবার আলোচ্য ঘটনাবলি এমন সময়ে ঘটিতেছে যখন আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯, ২৭ ও ২৮ সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা ও আইনের সমতার কথা বলিতেছে এবং ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদির ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির বিরুদ্ধে বিধান দিয়াছে। তদুপরি, যেখানে সমগ্র জাতি সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বিশেষত বহু মত ও বহু সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের নূতন শপথ গ্রহণ করিয়াছে, তথায় নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর উল্লিখিত ঘটনাবলি কোনো প্রকারেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। স্মরণ করা যাইতে পারে, গত পাঁচ মাসের অধিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার, ওরসে হামলা ও ভাঙচুর হইয়াছে। কোথাও কোথাও বাউল গান, এমনকি কনসার্ট ও সাধারণ গানের আসরেও বাধা প্রদান করা হইয়াছে। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, এই সকল বেআইনি ঘটনার পশ্চাতে ওই কথিত ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানার ব্যবহৃত হইয়াছে। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত বৈচিত্র্যের গ্রাফিতি অপসারণ এবং উহার প্রতিবাদে সংঘটিত আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার ঘটনায় যাহাদের বিরুদ্ধে আঙুল উঠিয়াছে, তাহারাও অনুরূপ চরম রক্ষণশীল তথা বৈচিত্র্যবিরোধী অংশেরই প্রতিনিধি। এই বিশেষ গোষ্ঠী প্রায়ই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণেরও বিরোধিতা করিয়া থাকে। এই ঘটনাবলি জাতি-ধর্ম-লিঙ্গভিত্তিক বিধিনিষেধ, সহিংসতা, হয়রানি এবং কলঙ্কের একটি বিশেষ ধরনের প্রকাশ ঘটায়, যাহার বিরুদ্ধে দেশের সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরিয়া সোচ্চার। কিন্তু অতীতের প্রায় সকল আমলে রাষ্ট্রের পরিচালকদের এহেন অপশক্তির প্রতি এক প্রকার আত্মসমর্পণ পরিস্থিতিকে জটিল করিয়া তুলিয়াছে। 
সত্য, সাম্প্রতিক ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে এক বার্তায় সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার করিয়াছে। অনতিবিলম্বে সংগতিপূর্ণ শক্ত পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে উক্ত বার্তায় কোনো কাজ হইবে না। জাতিরূপে আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টিকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হইতে হইবে। ইহারই অংশরূপে সহিংসতা সংঘটনকারী বা উস্কানিদাতাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনয়ন, তৎসহিত স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি আলোচ্য ঘটনাবলি প্রতিরোধে কেন ব্যর্থ হইল– এই প্রশ্নের সদুত্তর অনুসন্ধানও জরুরি। যেই সকল সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা নারীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেন, তাহাদের আরও উচ্চকণ্ঠ হওয়া আজ সময়ের দাবি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।

গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ