দেশে গত কয়েক দিন যাবৎ বাধা ও হুমকির মুখে একের পর এক নারীকেন্দ্রিক আয়োজন বন্ধ হইবার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। শুক্রবার সমকালের এক প্রতিবেদন বলিতেছে, মঙ্গল ও বুধবার কথিত তৌহিদি জনতা নামক গোষ্ঠীর হুমকির মুখে জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারীর ফুটবল খেলা বন্ধ করিয়া দিতে হইয়াছে। দিনাজপুরে উক্ত ‘তৌহিদি জনতা’ মাঠে হামলা-ভাঙচুরও চালাইয়াছে। শুধু উহাই নহে; অতি সম্প্রতি অনুরূপ গোষ্ঠীর হুমকির মুখে প্রথমে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এক অনুষ্ঠানে চিত্রনায়িকা পরীমণি এবং পরবর্তী সময়ে খোদ রাজধানীতে পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানে আরেক চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস উপস্থিত হইতে পারেন নাই। এমনকি ঢাকায় ‘কওমি উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২৫’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক নারী সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহের লক্ষ্যে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হইয়াছে, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড.
স্বীয় চরম রক্ষণশীল মত অন্যের উপর চাপাইয়া দিবার আলোচ্য ঘটনাবলি এমন সময়ে ঘটিতেছে যখন আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯, ২৭ ও ২৮ সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা ও আইনের সমতার কথা বলিতেছে এবং ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদির ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির বিরুদ্ধে বিধান দিয়াছে। তদুপরি, যেখানে সমগ্র জাতি সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বিশেষত বহু মত ও বহু সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের নূতন শপথ গ্রহণ করিয়াছে, তথায় নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর উল্লিখিত ঘটনাবলি কোনো প্রকারেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। স্মরণ করা যাইতে পারে, গত পাঁচ মাসের অধিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার, ওরসে হামলা ও ভাঙচুর হইয়াছে। কোথাও কোথাও বাউল গান, এমনকি কনসার্ট ও সাধারণ গানের আসরেও বাধা প্রদান করা হইয়াছে। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, এই সকল বেআইনি ঘটনার পশ্চাতে ওই কথিত ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানার ব্যবহৃত হইয়াছে। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত বৈচিত্র্যের গ্রাফিতি অপসারণ এবং উহার প্রতিবাদে সংঘটিত আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার ঘটনায় যাহাদের বিরুদ্ধে আঙুল উঠিয়াছে, তাহারাও অনুরূপ চরম রক্ষণশীল তথা বৈচিত্র্যবিরোধী অংশেরই প্রতিনিধি। এই বিশেষ গোষ্ঠী প্রায়ই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণেরও বিরোধিতা করিয়া থাকে। এই ঘটনাবলি জাতি-ধর্ম-লিঙ্গভিত্তিক বিধিনিষেধ, সহিংসতা, হয়রানি এবং কলঙ্কের একটি বিশেষ ধরনের প্রকাশ ঘটায়, যাহার বিরুদ্ধে দেশের সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরিয়া সোচ্চার। কিন্তু অতীতের প্রায় সকল আমলে রাষ্ট্রের পরিচালকদের এহেন অপশক্তির প্রতি এক প্রকার আত্মসমর্পণ পরিস্থিতিকে জটিল করিয়া তুলিয়াছে।
সত্য, সাম্প্রতিক ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে এক বার্তায় সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের অঙ্গীকার করিয়াছে। অনতিবিলম্বে সংগতিপূর্ণ শক্ত পদক্ষেপ গৃহীত না হইলে উক্ত বার্তায় কোনো কাজ হইবে না। জাতিরূপে আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টিকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হইতে হইবে। ইহারই অংশরূপে সহিংসতা সংঘটনকারী বা উস্কানিদাতাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনয়ন, তৎসহিত স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি আলোচ্য ঘটনাবলি প্রতিরোধে কেন ব্যর্থ হইল– এই প্রশ্নের সদুত্তর অনুসন্ধানও জরুরি। যেই সকল সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা নারীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেন, তাহাদের আরও উচ্চকণ্ঠ হওয়া আজ সময়ের দাবি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
এবার পাকিস্তানি তারকাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করল ভারত
কাশ্মীর হত্যাকাণ্ডের জেরে পাকিস্তানে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারত। এই ব্যবস্থার মধ্যে পড়লেন দেশটির তারকারা। ভারতের বিনোদন জগতেও তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেলেহগামের বৈসরণ এলাকায় গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ বেসামরিক মানুষ নিহত হন। ভারতের পক্ষ থেকে এ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। এরই মধ্যে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিদিন দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সীমান্তের শূন্যরেখায় গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে পাকিস্তানি তারকাদের বিপুল সংখ্যক ভক্ত রয়েছে। ইনস্টাগ্রামে তাদের অনুসারীর একটা বড় অংশ ভারতীয়। কিন্তু পাকিস্তানি তারকাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হানিয়া আমির, মাহিরা খান, আলী জাফর, আয়েজা খান, ইকরা আজিজ এবং সানাম সাঈদসহ বেশ কয়েক পাকিস্তানি তারকাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্লক করেছে ভারত সরকার। আজ বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। পাকিস্তানি তারকাদের মধ্যে বলিউডে কাজ করছেন রাহাত ফতেহ আলি খান, আতিফ আসলাম থেকে ফাওয়াদ খান, মাহিরা খান, আলি জাফরদের মতো শিল্পীরা।