Samakal:
2025-09-18@03:19:39 GMT

মাধবী থেকে মাধবী মার্ট

Published: 1st, February 2025 GMT

মাধবী থেকে মাধবী মার্ট

ফেসবুকে হাজারো ছবির মধ্যে একটি ছবি চোখ কেড়ে নেয়। পিকআপভর্তি নকশিকাঁথা। এর ওপর বসে আছেন এক তরুণী। তাঁর নাম মাধবী। এসএমই মেলা শেষ করে ফেরার পথে কাঁথা ও অন্যান্য পণ্য ট্রাকে তোলার লোক পাননি। তাই মাধবী নিজেই পণ্য তোলেন। নারী হিসেবে আমার গর্ববোধ তো অবশ্যই; কিছুটা কৌতূহলও জাগল। ‘মাধবী মার্ট’ নামে তাঁর একটি শোরুম রয়েছে। উত্তরা উত্তর মেট্রো স্টেশনের কাছে। 
মেট্রোতে করে একদিন মাধবী মার্টের শোরুমে হাজির হলাম। সেখানে সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। শোরুমে এমন পণ্য দেখতে পেলাম, যা আগে কখনও দেখিনি। আমি জানতাম, বাংলাদেশের অনুমোদিত জিআই পণ্যের সংখ্যা ৩১টি। মাধবী মার্টে গিয়ে মনে হলো, পুরো বাংলাদেশটাই জিআই পণ্যে ভরপুর। যেমন– মানিকগঞ্জের ঘিওরের বেত দিয়ে তৈরি ঝুড়ি, আয়নার ফ্রেম, বাটি ও থালা, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের বাঁশের পণ্য, নীলফামারীর হোগলাপাতা ও কচুরিপানার পণ্য, টেকনাফের সুপারির খোল দিয়ে তৈরি ওয়ানটাইম থালা-বাসন, কেরানীগঞ্জের মাটির পণ্য, নারায়ণগঞ্জের জামদানি, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, সিলেটের কমলগঞ্জের মণিপুরি শাড়ি। সব থেকে অবাক হলাম নারকেলের শলার ঝাড়ু দেখে। এটা ভীষণ নান্দনিক। মাধবী বলেন, ‘‘নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় আমার বাড়ি। আমার চাচা এই শলার ঝাড়ু তৈরি করেন। একদিন আমাকে বলেন, দেখ তো মাধবী, এটি বিক্রি করা যায় কিনা? আমি দেখেই বলি, বিক্রি করা যাবে না আবার। এটি দৌড়াবে। সেই থেকে শুরু নারকেলের শলার ঝাড়ু বিক্রি। যেদিন মাধবী মার্টের পেজে নারকেলের শলার ঝাঁড়ু বিক্রির ভিডিও ‍দিলাম, সেদিন আমার ফেসবুকে ভালোমন্দ মন্তব্যের ঝড় ওঠে। কেউ আমাকে ‘ঝাড়ুওয়ালি’ উপাধি দেন। কেউ বলেছেন ‘ফাতরা মহিলা’, কেউ বলেছেন ‘বেটির মাথায় সমস্যা আছে’, আবার এর বিপরীতে কেউ কেউ ইতিবাচক মন্তব্যও করেছেন।’’ শান্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মাধবী মার্টের স্বত্বাধিকারী।
চোখে একরাশ আলোর ঝলক নিয়ে মাধবী বলেন, ‘আমার ব্যবসার মূলধন আমার গ্রাহক। আমি ব্যবসা শুরু করেছি ২০১৭ সালে, জামালপুরের নকশিকাঁথা এবং সালোয়ার-কামিজ দিয়ে। তখন আমার কোনো শোরুম ও মূলধন ছিল না। সম্বল ছিল একটা বাইসাইকেল আর রুমমেট সানজিদা ইভা আপুর দেওয়া ১০ হাজার টাকা। আমার গণ্ডির মধ্যে যে কয়জন মানুষ ছিলেন তাদের কাছে সাইকেল চালিয়ে যেতাম ব্যাগে নকশিকাঁথা বা থ্রিপিস নিয়ে। যেহেতু আমার কোনো দোকান ভাড়া নেই। আমি একটু কম দামে পণ্য দিতাম। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বেশ ভালো সাড়া পেলাম। ২০১৯ সালে ফার্মগেটে জেনেটিক মার্কেটে একটি দোকান নিলাম। হঠাৎ করে ব্যবসা খারাপ চলায় দোকানের তিন মাসের ভাড়া দিতে পারিনি। পরে দোকানের মালিক দোকানে তালা দিয়ে দেন। আমি অনেক অনুরোধ করলেও তিনি দোকানের তালা খুলে দেননি। আমাকে বিপদে পড়তে দেখে তিনি আমাকে বাজে প্রস্তাব দেন। আমি মাথা নতো করিনি। মার্কেটের দোকান মালিক সমিতিকে লিখিত বিচার দিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কেটের সবার সামনে তিনি আমার কাছে ক্ষমা চান। তিনি তা ভুলে যাননি। ২০২০ সালে একদিন রাস্তায় পেয়ে আমার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। আমার ওড়না টেনে ধরেন। এ ঘটনার পর আমি মামলা করি।  কোনো অপরাধ না করেও চারদিকের মানুষের কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম। মা-বাবাও আমাকে ভুল বুঝলেন।’
নিজের সংগ্রামের কথা বলে চলেন মাধবী– “ব্যবসা নেই। হাতে টাকা নেই। পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবও পাশে নেই। আমি হাঁপিয়ে উঠছিলাম। হঠাৎ আমার মনে হয়েছে, প্রজাপতি বেঁচে থাকে মাত্র ২৮ ঘণ্টা। এরই মধ্যে সে চমৎকার পাখা মেলে দুনিয়াকে জানান দিয়ে যায়। আমার মনে হলো– একটাই তো জীবন। এখানে মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। তখন শূন্য হাতে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যাই। উদ্দেশ্য– মানুষকে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করা। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে স্কুল বা উঠানে বসে নারীদের সচেতন করতাম। এ কাজ করতে গিয়ে সচেতনতা তো হয়েছেই। আমি পুরো বাংলাদেশের কোথায় কী বিখ্যাত, তা কাছ থেকে দেখেছি এবং কিছু ভালো মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তারা আমার ব্যবসায় সাহায্য করেন। ২০২১ সালে আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং ডেইলি স্টারের উদ্যাগে ‘অদম্য সাহসী নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হই। সেখানে ২ লাখ টাকা পুরস্কার পাই। সেটি দিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করি। শোরুম নিলাম। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার বাউশি বাজারে নকশিকাঁথা উৎপাদন কেন্দ্রে একটি কারখানা খুলি।” 
মাধবী মার্ট এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। মাধবী বলেন, ‘আমি চাই আমার বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীর ঘরে ঘরে থাকুক। দু’এক বছর ধরে আমরা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে পণ্য পাঠাচ্ছি।’ 
এ নারী উদ্যোক্তার কথা শুনে শুধু এটাই মনে হচ্ছিল– নারীকে সাহসী হতে হবে। এভাবেই এগিয়ে আসতে হবে। অধিকার বুঝে নিয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজারে নারীর অংশীদারিত্ব সহজ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আরও পদক্ষেপ এবং এর তদারকি জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দরকার বলে মনে করেন মাধবী। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নকশ ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ