গুমের প্রতিকার ও ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা
Published: 2nd, February 2025 GMT
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত; দেরিতে হলেও আমাদের রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। কোনো জাতির ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত বারবার আসে না। তাই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার আমাদের সবার কাম্য।
মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র সংস্কারের পূর্বশর্ত সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। অতীতের ক্ষত নিরাময় ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে দৃঢ় পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। বিশেষত গুমের শিকার ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের অকল্পনীয় যন্ত্রণার যত দ্রুত সম্ভব উপশম প্রয়োজন। কারণ, সবচেয়ে ভয়াবহ অন্যায়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিকৃষ্ট হচ্ছে বলপূর্বক অন্তর্ধান। এটি কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকেই বঞ্চিত করে না; তাঁর নিজের ও পরিবারকেও অকল্পনীয় যন্ত্রণার সম্মুখীন করে।
গভীর হতাশা ও উদ্বেগের বিষয়, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে গুম বা বলপূর্বক অন্তর্ধানের অনেক ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দোহাই দিয়ে অপহরণ, গোপন আটক এবং বিচারবহির্ভূত শাস্তির পদ্ধতিগত অভিযান প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। এমনকি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের সম্মুখীন ব্যক্তিদের তো আটক ও কারান্তরীণ করা হয়েছেই; তাদের সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা কেবল পারিবারিক পরিচয় ও সম্পর্কের কারণে গুমের শিকার হয়েছেন। কাউকে কাউকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গুম করে রাখা হয়েছে।
যেমন– একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিককে নিছক অনলাইনে লেখালেখির কারণে সড়ক থেকে অপহরণ করে বিনা বিচারে দেড় বছর গোপন বন্দিশালায় আটক রাখা হয়। আরেকজন ‘সোর্ড অব অনার’ পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে দীর্ঘ আট বছর তাঁর পরিবারকে না জানিয়ে বন্দি রাখা হয়।
রাজনৈতিক কর্মী, ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক, ব্লগার, কার্টুনিস্টদেরও বিচারবহির্ভূতভাবে আটক করে বন্দি রাখা হয়েছিল কেবল এমন মতামত প্রকাশ করার কারণে, যা শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। এদের কেউ কেউ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তি পেয়েছেন। কারও কারও খোঁজ এখনও অজানা।
এটা স্পষ্ট, গুমের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ ছিল না; বরং নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর পরিকল্পিত আক্রমণের অংশ ছিল। এ ধরনের যে কোনো ঘটনাই প্রতিহত করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সংবাদমাধ্যম, নাগরিক সমাজের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সেই দায়িত্ব কতটা প্রতিপালিত হয়েছে?
কল্পনা করুন, আপনার জীবনের এক দশক একটি অন্ধকার কক্ষে হারিয়ে যাচ্ছে; পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন, নির্যাতনের শিকার; এমনকি সবচেয়ে মৌলিক মানবাধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত। কল্পনা করুন একজন মায়ের যন্ত্রণা, যিনি জানেন না– তাঁর ছেলে বেঁচে আছে না মৃত, অথবা পিতা ছাড়া বেড়ে ওঠা একটি সন্তানের হতাশা। এই পরিস্থিতির মধ্যেও অনেক পরিবারকে তাদের প্রধান উপার্জনকারী হারিয়ে অর্ধপাগল অবস্থায় জীবনযাপনের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে।
এগুলো বিমূর্ত ট্র্যাজেডি নয়; গুমের শিকার পরিবারগুলোর জীবিত বাস্তবতা। গুমের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারগুলো যে যন্ত্রণা সহ্য করেছে তার একটি আন্তরিক, দ্ব্যর্থহীন স্বীকৃতি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা উচিত। এর সঙ্গে এমন একটি প্রতিশ্রুতি থাকা উচিত, যাতে এ ধরনের নৃশংসতা আর কখনও না ঘটে। রাষ্ট্রকে অবশ্যই ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনেও পদক্ষেপ নিতে হবে, তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এক অনন্য সুযোগ এসেছে। ন্যায়সংগত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নোবেলজয়ী সরকারপ্রধানের কাছে অন্য যে কোনো জাতীয় নেতার তুলনায় জনগণের প্রত্যাশা বেশি। তাঁর সরকারকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়গুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য এবং একটি নতুন পথ তৈরি করার জন্য এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে। এতে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তি স্থাপিত হবে। যত দ্রুত এসব পদক্ষেপ কার্যকর করা যাবে, তত দ্রুত বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।
আরাফাত আশওয়াদ ইসলাম: কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, গুলশান সোসাইটি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদক ষ প র পর ব পর ব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মে মাসে বিজিবির অভিযানে ১৩৩ কোটি টাকার চোরাচালান জব্দ
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত মে মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৩৩ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি জানায়, জব্দ করা চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১ কেজি ৫১২ গ্রাম স্বর্ণ, ১০ হাজার ৫৪৪টি শাড়ি, ৫ হাজার ১৪০টি কাপড়, ৩ হাজার ৪৭২টি তৈরি পোশাক, ১৯ হাজার ৩১৪ মিটার থান কাপড়, ২ লাখ ৫২ হাজার ২৯টি কসমেটিকস সামগ্রী, ৫ হাজার ৪৪৩টি ইমিটেশন সামগ্রী, ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৫১টি আতশবাজি, ১৭ হাজার ৫২৩ ঘনফুট কাঠ, ৩ হাজার ১৫১ কেজি চা পাতা, ৯২ হাজার ৪৮৭ কেজি সুপারি, ৫৩ হাজার ৪০ কেজি চিনি, ২০ হাজার ৪৪২ কেজি সার, ২৯ হাজার ৯৮৫ কেজি কয়লা, ১০০ কেজি সুতা/কারেন্ট জাল, ৩৪১টি মোবাইল, ১৭ হাজার ৬৫টি মোবাইল ডিসপ্লে, ৬ হাজার ৫৪০টি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ১৫,১১২টি চশমা, ৬ হাজার ৫৪৩ কেজি বিভিন্ন প্রকার ফল, ৫ হাজার ৯৬০ কেজি ভোজ্য তেল, ১০১০ লিটার ডিজেল/অকটেন, ১ হাজার ৫২৬ কেজি পিঁয়াজ, ৮ হাজার ৮২৬ কেজি রসুন, ২০ হাজার ৬৪২ কেজি জিরা, ১১ হাজার ২৩৬ প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার বীজ, ৫০ হাজার ১৯১ কেজি ফুচকা, ৯ হাজার ১৭৯ কেজি মাছ, ৫০ হাজার ৬০৩ পিস চিংড়ি মাছের পোনা, ৯৩৪ কেজি কফি, ২ লাখ ২৫ হাজার ৩৪৩ পিস চকোলেট, ১ হাজার ১৩১টি গরু/মহিষ, ৪টি কষ্টি পাথরের মূর্তি, ১৩টি ট্রাক/কাভার্ডভ্যান, ১৫টি পিকআপ, ৪টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ৯২টি নৌকা, ২৬টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৭২টি মোটরসাইকেল এবং ২২টি বাইসাইকেল।
আরো পড়ুন:
ঘাস খেতে খেতে সীমান্তের ওপারে ১০ গরু, ফেরত দিল বিএসএফ
ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে আরো ২৩ জনেকে ঠেলে দিল বিএসএফ
উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ২টি দেশীয় পিস্তল, ৫টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ৯মি.মি. পিস্তল, ২টি শট/পাইপ গান, ৫টি ম্যাগাজিন, ৪টি ককটেল, ২৪টি গুলি এবং ১টি হ্যান্ড গ্রেনেড।
এছাড়া গত মাসে বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে। জব্দ করা মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৯৬৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১০ কেজি ৯৩৫ গ্রাম হেরোইন, ২৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১ কেজি ৪১০ গ্রাম কোকেন, ১০ হাজার ৫২১ বোতল ফেনসিডিল, ৮ হাজার ৯৮৩ বোতল বিদেশি মদ, ৭১.২৫ লিটার বাংলা মদ, ৮১৩ বোতল ক্যান বিয়ার, ১ হাজার ৯১৩ কেজি ৬৩০ গ্রাম গাঁজা, ২ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ৩০ হাজার ১১৫টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৫৪ ঞাজার ৩৪৭ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ৫ বোতল এলএসডি, ২০ হাজার ৪৯৩টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট, ৭৩৭টি এমকেডিল/কফিডিল এবং ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০৪ পিস বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ও ট্যাবলেট।
সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৫ জন চোরাকারবারি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৭১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ১০ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৯০ জন মিয়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি