ভূমধ্যসাগরে স্বপ্নের সমাধি গোপালগঞ্জের ৩ যুবকের
Published: 4th, February 2025 GMT
ছোট বেলায় মা-বাবা হারান রফিকুল শেখ। এরপর থেকে চাচার কাছে বড় হওয়া তার। তাই চাচার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে নিজের ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে ইউরোপের দেশ ইতালি যেতে দালালদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিল তিনি। তবে তার ইতালি পৌছানো হয়নি। সেখানে পৌঁছানোর আগেই লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে স্বপ্নের সমাধি ঘটেছে রফিকুলের।
একই অবস্থা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার আরো দুই যুবকের। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে তাদেরও সলিল সমাধি হয়েছে। সাইফুল ব্যাপারী নামে আরেক যুবকের খোঁজ পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা।
আরো পড়ুন: রাজৈরে নিহত ১০ জনের পরিবারে চলছে মাতম
আরো পড়ুন:
লিবিয়ায় দালালদের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ
লিবিয়ায় ২ ভাইকে জিম্মি, মুক্তিপণ নিতে এসে গ্রেপ্তার ২
মারা যাওয়ারা হলেন- গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের চরপ্রসন্নদী গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সাত্তার খন্দকার (৪০), একই গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আরাফসান ইসলাম আশিক (১৮) ও মোল্লাদী গ্রামের আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে রফিকুল শেখ (২৫)।
রফিকুলের চাচা মো.
নিহত আশিকের বাবা মেহেদী শেখ বলেন, “ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য লোন করে ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে নিয়ে ১৭ লাখ টাকা পাশের শ্রীজিতপুর গ্রামের রকমান হাওলাদারের ছেলে বাবু হাওলাদারকে দেই। লিবিয়া যাওয়ার পর ছেলের সঙ্গে কয়েকবার কথা হয় আমাদের। পরে জানতে পারি লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে আমার ছেলে মারা গেছে। আমি দালাল বাবু হাওলাদারের শাস্তি চাই।”
আরো পড়ুন: লিবিয়া উপকূলে ২০ বাংলাদেশির মরদেহ ভেসে আসার খবর
ছাত্তার খন্দকারের স্ত্রী লাবনী খন্দকার বলেন, “লিবিয়া পৌঁছানোর পর আমার কাছ থেকে তিন দফা টাকা নিয়েছে দালালরা। ২৪ লাখ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও টাকা নিয়েছে ২৬ লাখ। আমি দ্রুত আমার স্বামীর মরদেহ ফেরত চাই। দালালদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানাচ্ছি।”
সম্প্রতি সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে ২৩ জনের মৃত্যুু হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি গোপালগঞ্জ ও ১০ জনের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী ব্রেগা তীরে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মরদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে। উদ্ধারকৃত মরদেহগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক থাকার আশঙ্কার কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেলেও, এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে।
ঢাকা/বাদল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।