দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের জ্বালানি–বিদ্যুৎনীতি সম্পূর্ণ ভুল পথে অগ্রসর হয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে। দেশের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আরও হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছেদের সম্মুখীন হয়েছেন এবং সন্তোষজনক বিকল্প জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়নি।

‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভিঘাত-অভিজ্ঞতা কী বলে’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলা হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এটি বাপা আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, জ্বালানিনীতি ঢেলে সাজাতে হবে। কয়লা থেকে সরে আসতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় সক্ষমতার অধীনে দেশে তেল–গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়াতে হবে।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ২০১২ সাল থেকেই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকার একগুঁয়ে ছিল। তারা বলেছিল, এতে কোনো ক্ষতি হবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব তারা বিবেচনায় নেয়নি। এমন সব উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে নদী নষ্ট হচ্ছে, বন উজাড় হচ্ছে, সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আন্দোলনের কারণে কিছু প্রকল্প বাতিল করেছে। কিন্তু যা করা হয়েছে, তা সর্বনাশের জন্য যথেষ্ট। মাতারবাড়ি, রামপাল, পায়রা এলাকায় এখন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে। এটি আরও বাড়বে।

গত সরকার যে শোষণ, লুণ্ঠন, সম্পদ পাচার করেছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত এর মধ্যে অন্যতম বলে সেমিনারে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এ খাতে বর্তমান সরকারের তিনটি বড় ভুল তাঁর নজরে এসেছে। প্রথমত, দায়মুক্তি আইন বাতিল করেও ওই আইনে করা চুক্তি হুবহু বলবৎ রেখে আগের করা লুণ্ঠনের অনুমোদন দিয়েছে এ সরকার। দ্বিতীয়ত, চুক্তি বাতিল করতে না পারার কথা বলাটা আসলে গত সরকারের ধারাবাহিকতা। আর তৃতীয়ত, বিডার চেয়ারম্যান সগর্বে প্রচার করেছেন, একটি মার্কিন কোম্পানি থেকে এলএনজি কেনার চুক্তির কথা। নতুন একটা কোম্পানি, যে কখনো এলএনজি সরবরাহ করেনি; তার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে। বিডার তো এই চুক্তি করার কথা নয়। দরপত্র ছাড়া ওই কোম্পানিকে কীভাবে বাছাই করা হলো, পুরোটাই হয়েছে আগের সরকারের মতো।

অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, কোনো একটা প্রকল্প শুরুর আগে তার দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা বিশ্লেষণ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক। এ কারণে বিশ্বজুড়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান আছে। তাই কয়লার ব্যবহার লাভজনক নয়। প্রাথমিক বিকল্প হতে পারে দেশীয় গ্যাসের ব্যবহার। দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প হতে পারে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাপার সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। আর মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি নজরুল ইসলাম।

বাপার নিবন্ধে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতের প্রথম মহাপরিকল্পনায় ৫০ শতাংশ কয়লার ব্যবহার ধরা হয়। সমালোচনার পর ২০১৬ সালে সংশোধন করে ৪০ শতাংশ করা হয়। এ মহাপরিকল্পনা মূলত জ্বালানি খাতকে আমদানির দিকে নিয়ে যায়। বিদ্যুৎ খাত যেখানে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হওয়ার কথা, সেখানে এটি এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে।

তিনটি বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা থেকে বাসিন্দারা এসে সেমিনারে তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো.

মহসিন বলেন, জমি অধিগ্রহণের আগে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিছু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারণা করেছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এখনো সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকরি হচ্ছে না।

পটুয়াখালীর পায়রা এলাকার বাসিন্দা জি এম মাহবুব বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য উচ্ছেদ হওয়া ১৩০টি পরিবারকে স্বপ্নের ঠিকানা করে দিয়েছে। তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও দিয়েছে দেড় গুণ। ওখানে মূল পেশা মাছ ধরা, নদী দূষিত হয়ে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কারখানা করে চাকরি দেওয়ার কথা, সেটি হয়নি। মানুষের শরীরে চুলকানি হচ্ছে। ত্বকের রোগ দেখা দিচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ করে মহিষ পালছে বিদ্যুৎকেন্দ্র; অব‍্যবহৃত জমি ফেরত দেওয়ার দাবি করেন তিনি।

বাগের হাটের রামপাল এলাকার বাসিন্দা এম এ সবুর রানা বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নানা ক্ষতি হচ্ছে। অধিকাংশ সময় চারপাশ ধোঁয়াচ্ছন থাকে। মাছের প্রজনন কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। মানুষের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হচ্ছে, চুলকানি হচ্ছে।

বাপার নিবন্ধে বলা হয়, গত সরকার দায়মুক্তি আইনের অধীনে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে স্বজনপ্রীতি, লুটপাট করেছে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ–সক্ষমতার ভাড়া দিতে হচ্ছে। ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বহাল রেখেছে। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভাড়া দিতে হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব যবহ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ