জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সেই মাঠে নারী ফুটবল দলের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বনাম জয়পুরহাট নারী ফুটবল দলের মধ্যে খেলা হয়। তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে নারীদের এ ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।

জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল ম্যাচের উদ্বোধন করেন। এ সময় জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান (চন্দন), জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি এস এম রাশেদুল আলম সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসি আফরোজা আকতার চৌধুরী বলেন, ভুল–বোঝাবুঝির কারণে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। দুই পক্ষই তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। যাঁরা ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, তাঁরা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। আসলে তাঁদের খেলায় বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না।

এর আগে নারীদের ফুটবল ম্যাচ দেখতে দুপুর থেকেই মাঠে আসতে শুরু করেন দর্শকেরা। বিকেল চারটার মধ্যে পুরো মাঠ দর্শকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। খেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করেছেন। সেনাবাহিনীরও একটি দল ছিল। নারী ফুটবলাররা যখন মাঠে নামেন, তখন দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান। খেলায় স্বাগতিক জয়পুরহাট নারী ফুটবল দল এক গোলে জয়ী হয়। পরে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেন প্রধান অতিথি। লতা পারভিন ম্যাচটি পরিচালনা করেন। সহায়তা করেন স্বপ্না ও রহিমা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় টি স্টার ক্লাবের উদ্যোগে তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রায় দেড় মাস আগে ছেলেদের আন্তজেলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচ মাটিতে বসে দেখার জন্য ৩০ টাকা ও চেয়ারে বসে দেখার জন্য ৭০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়। টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে পার্বতীপুর ও জয়পুরহাট ফুটবল দল।

ফাইনাল ম্যাচের আগে গত ২৯ জানুয়ারি জয়পুরহাট ও রংপুর নারী ফুটবল দলের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা দেন আয়োজকেরা। খেলার আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে একদল ব্যক্তি মিছিল নিয়ে এসে খেলার মাঠের বেড়া ভাঙচুর করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে ভাঙচুরের দৃশ্য প্রচার করা হয়। ওই ঘটনার পর আয়োজকেরা নারীদের প্রীতি ম্যাচটি বাতিল করেন।

এ ঘটনায় প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসন এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুটি কমিটিই তদন্ত করেছে। এরপর একটি তদন্ত কমিটির গণশুনানিতে ভাঙচুরে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অনুতপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। এরপর তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে আজ ওই মাঠে নারীদের ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।

হাকিমপুরে নারীদের স্থগিত খেলাটি কাল অনুষ্ঠিত হবে

এদিকে দিনাজপুরের হাকিমপুরে বিক্ষোভ ও বাধার মুখে স্থগিত হওয়া নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচটি কাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। বেলা তিনটায় উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের বাওনা গ্রামের অস্থায়ী মাঠে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন খেলার আয়োজক সংগঠন বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল।

খেলা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, কাল বিকেলে দিনাজপুর জেলা নারী ফুটবল একাডেমির সঙ্গে রংপুর বিভাগীয় নারী ফুটবল দলের মধ্যে ওই প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আজ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ডিসেম্বর পুরুষদের ১৬টি দলের অংশগ্রহণে বাওনা মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতি। ওই দিন টুর্নামেন্টের প্রথম ও কোয়ার্টার পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্টের মধ্যে এক দিনের জন্য নারীদের একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজনের ঘোষণা দেয় আয়োজক কমিটি। ২৮ জানুয়ারি বিকেলে ওই খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নারীদের খেলা বন্ধের দাবিতে তৌহিদী জনতার ব্যানারে স্থানীয় একটি পক্ষ বিক্ষোভ মিছিল করে। ২৮ জানুয়ারি দুপুরে তারা নারীদের খেলা বন্ধ করতে মাঠে গেলে আয়োজক কমিটির সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। এরপর নারীদের খেলাটি স্থগিত করেন আয়োজকেরা।

এ ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের এক প্রেস উইং থেকে দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনকে স্থগিত ফুটবল ম্যাচ আবার চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই বাওনা গ্রামের মাঠে স্থগিত হওয়া খেলাটি আবার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় আয়োজক কমিটি।

বাওনা ছাত্রকল্যাণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এখনো আতঙ্কে আছেন। খেলা নিয়ে তৌহিদী জনতার পক্ষের কেউ আর কিছু বলেননি। কাল বেলা তিনটায় বাওনা মাঠে আগের নারী দলের খেলাটি হবে। মাঠে দর্শকদের একটি সুন্দর খেলা উপহার দেওয়ার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় প্রথম আলোকে বলেন, আয়োজকদের একজন বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন। খেলাকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছে না প্রশাসন। এরপরও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে।

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজন মিঞা বলেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, স্থগিত খেলাটি কাল অনুষ্ঠিত হবে। কাল ওই এলাকায় পুলিশের টহল থাকবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ টবল ম য চ র জন য প রথম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’

বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’ 

পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।

২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
  • ১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
  • নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক
  • টাকার জন্য দেশে ছেড়েছি, এখন টাকা খরচের সময় নেই: পিয়া বিপাশা
  • মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা