পুলিশের তিনটি সংস্থার তদন্তেও চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব মেলেনি। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে জটিলতায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। 

তবে তিন সংস্থার কেউই তার মরদেহে একাধিক আঘাত ও ক্ষতের কারণ জানাতে পারেনি। নগরী থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে নেভাল একাডেমি পয়েন্ট এলাকায় তাসফিয়া যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গিয়েছিল, সেই চালকের খোঁজও বের করতে পারেনি। 

চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল তাসফিয়া। ২০১৮ সালের ২ মে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির কাছে কর্ণফুলী নদীর তীররক্ষা পাথরের ওপর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শরীরে ১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। দুই চোখ মারাত্মকভাবে থেঁতলানো। ডান চোখের ভ্রু ক্ষতবিক্ষত। মৃত্যুর আগে নাক দিয়ে বের হয়েছে ফেনা। 

মূলত, এই আঘাতের চিহ্ন থেকেই তাসফিয়ার মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়। সেই কারণ বের করতে না পারলেও ডিবি-পিবিআই দুই সংস্থার প্রতিবেদনেই বলা হয়, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার শাসনের ভয়ে ঘটনার দিন বাসায় না গিয়ে কর্ণফুলী নদীর মোহনা এলাকায় যায় তাসফিয়া। পরে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। 

গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, অধিকতর তদন্তে তাসফিয়াকে হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য, ডিজিটাল তথ্য এবং ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাসফিয়া পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রতিবেদনে সেই তথ্যই দেওয়া হয়েছে। 

তবে তাসফিয়ার মা নাঈমা খানম সমকালকে বলেন, তিন সংস্থার কেউই নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি। সবাই পানিতে ডুবে মারা গেছে বলছে। কিন্তু শরীরে নির্যাতনের কোনো ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না। এখানেই মূল রহস্য। আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সিআইডির প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে 

২০১৮ সালে ঘটনার এক মাস আগে তাসফিয়ার সঙ্গে আদনান মির্জা নামে এক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানার পর মা-বাবা সম্পর্ক না রাখতে মেয়েকে চাপ দেন। তবে ১ মে সম্পর্কের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে আদনানের সঙ্গে বের হয় তাসফিয়া। এক পর্যায়ে এক বন্ধুকে কল করে তাসফিয়ার মা নাঈমা খানম বিষয়টি জানতে পারেন। বাবা-মা খোঁজ করছে জানতে পেরে, আদনান নগরীর জিইসি মোড় থেকে তাসফিয়াকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেয়। আরেকটি অটোরিকশায় সে বাসায় চলে যায়। 

তবে তাসফিয়া বাসায় না ফিরে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমি এলাকায় চলে যায়। ওই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সেখানে ঘুরতে যাওয়া মিনহাজ উদ্দিন খান আন্না, আশিকুর ইসলাম ও কুদরত ই ইলাহী নদীর পারে দেয়ালের ওপর বিষণ্ন মনে তাসফিয়াকে বসে থাকতে দেখেন। এর পর কিছুক্ষণ পর শোরগোল শুনে এগিয়ে গিয়ে জানতে পারেন, ওই তরুণী নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে অন্যদের সঙ্গে প্রাইভেটকার ও মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে খোঁজাখুঁজি করলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরদিন ওই এলাকা থেকে তাসফিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাসফিয়াকে নির্যাতন বা হত্যার কোনো সম্ভাবনা তদন্তে মেলেনি। ধর্ষণের আলামতও পাওয়া যায়নি। মৃতদেহে বাহ্যিক যে আঘাত পাওয়া গেছে, তা মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয় বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার শাসনের ভয়ে বাসায় না ফিরে নেভাল একাডেমি এলাকায় নদীতে ঝাঁপ দেয়। শ্বাস বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ভ ল এক ড ম এল ক য় স আইড তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • পুলিশের ৯ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর