তিন সংস্থার তদন্তেও উত্তর মিলল না রহস্যের
Published: 6th, February 2025 GMT
পুলিশের তিনটি সংস্থার তদন্তেও চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব মেলেনি। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে জটিলতায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে।
তবে তিন সংস্থার কেউই তার মরদেহে একাধিক আঘাত ও ক্ষতের কারণ জানাতে পারেনি। নগরী থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে নেভাল একাডেমি পয়েন্ট এলাকায় তাসফিয়া যে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গিয়েছিল, সেই চালকের খোঁজও বের করতে পারেনি।
চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল তাসফিয়া। ২০১৮ সালের ২ মে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির কাছে কর্ণফুলী নদীর তীররক্ষা পাথরের ওপর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শরীরে ১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। দুই চোখ মারাত্মকভাবে থেঁতলানো। ডান চোখের ভ্রু ক্ষতবিক্ষত। মৃত্যুর আগে নাক দিয়ে বের হয়েছে ফেনা।
মূলত, এই আঘাতের চিহ্ন থেকেই তাসফিয়ার মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়। সেই কারণ বের করতে না পারলেও ডিবি-পিবিআই দুই সংস্থার প্রতিবেদনেই বলা হয়, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার শাসনের ভয়ে ঘটনার দিন বাসায় না গিয়ে কর্ণফুলী নদীর মোহনা এলাকায় যায় তাসফিয়া। পরে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনেও একই কথা বলা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, অধিকতর তদন্তে তাসফিয়াকে হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য, ডিজিটাল তথ্য এবং ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাসফিয়া পানিতে ডুবে মারা গেছে বলে প্রতীয়মান হয়। প্রতিবেদনে সেই তথ্যই দেওয়া হয়েছে।
তবে তাসফিয়ার মা নাঈমা খানম সমকালকে বলেন, তিন সংস্থার কেউই নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি। সবাই পানিতে ডুবে মারা গেছে বলছে। কিন্তু শরীরে নির্যাতনের কোনো ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছে না। এখানেই মূল রহস্য। আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সিআইডির প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
২০১৮ সালে ঘটনার এক মাস আগে তাসফিয়ার সঙ্গে আদনান মির্জা নামে এক তরুণের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানার পর মা-বাবা সম্পর্ক না রাখতে মেয়েকে চাপ দেন। তবে ১ মে সম্পর্কের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে আদনানের সঙ্গে বের হয় তাসফিয়া। এক পর্যায়ে এক বন্ধুকে কল করে তাসফিয়ার মা নাঈমা খানম বিষয়টি জানতে পারেন। বাবা-মা খোঁজ করছে জানতে পেরে, আদনান নগরীর জিইসি মোড় থেকে তাসফিয়াকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেয়। আরেকটি অটোরিকশায় সে বাসায় চলে যায়।
তবে তাসফিয়া বাসায় না ফিরে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমি এলাকায় চলে যায়। ওই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সেখানে ঘুরতে যাওয়া মিনহাজ উদ্দিন খান আন্না, আশিকুর ইসলাম ও কুদরত ই ইলাহী নদীর পারে দেয়ালের ওপর বিষণ্ন মনে তাসফিয়াকে বসে থাকতে দেখেন। এর পর কিছুক্ষণ পর শোরগোল শুনে এগিয়ে গিয়ে জানতে পারেন, ওই তরুণী নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে অন্যদের সঙ্গে প্রাইভেটকার ও মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে খোঁজাখুঁজি করলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরদিন ওই এলাকা থেকে তাসফিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাসফিয়াকে নির্যাতন বা হত্যার কোনো সম্ভাবনা তদন্তে মেলেনি। ধর্ষণের আলামতও পাওয়া যায়নি। মৃতদেহে বাহ্যিক যে আঘাত পাওয়া গেছে, তা মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয় বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মা-বাবার শাসনের ভয়ে বাসায় না ফিরে নেভাল একাডেমি এলাকায় নদীতে ঝাঁপ দেয়। শ্বাস বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ভ ল এক ড ম এল ক য় স আইড তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার
আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়াকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অশ্লীল ও শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করায় স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরো পড়ুন:
জুলাই বিরোধিতা: ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার
সোমবার (৩ নভেম্বর) নোবিপ্রবির রেজিষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজীদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত বিদেশে গমন করেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর ধারা ২(চ) অনুযায়ী ‘পলায়ন’ ।
এছাড়া একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করায় ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ,২০০১’ এর ধারা ৪৭(৫) এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮ মে আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে সেটির জবাব যথাযথ হয়নি। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি আপনাকে পুনরায় ৭ জুলাই বিজ্ঞ আইনজীবীর মতামত এবং ৩১ জুলাই প্রেরিত নোটিশের জবাব না দেয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭ তম সভার আলোচ্যসূচি-১৮ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ৪৭(৮) ধারা অনুযায়ী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও (গ) অনুযায়ী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সহকারী পরিচালক (সামরিক বরখাস্ত) পদ থেকে চূড়ান্ত বা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো লেনদেন থাকলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকেন এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী