যে মিছিল ইসরায়েলের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে এনেছে
Published: 6th, February 2025 GMT
দুই সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ লেবাননের মানুষ হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে তাঁদের ঘরবাড়ি ও জমিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কোনো পক্ষই ইসরায়েলকে দখল করা অঞ্চল থেকে সরাতে পারেনি। এরপর লেবাননের সাধারণ মানুষই এ উদ্যোগ নেন।
২৬ জানুয়ারি রোববার প্রথম ইসরায়েলি বাহিনী নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি চালায়। এতে অন্তত ২২ জন নিহত হন এবং ১২০ জনের বেশি আহত হন। কিন্তু জনগণের অটল সংকল্প ও আত্মত্যাগে ইসরায়েলি বাহিনী অধিকাংশ সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এই প্রতিরোধ করতে গিয়ে লেবাননের মানুষকে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছে। তবে এটি আবারও প্রমাণ করেছে—ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তিই সবচেয়ে কার্যকর পথ।
নভেম্বরের শেষ দিকে শুরু হওয়া ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো হামলা চালায়নি এবং তাদের কোনো সামরিক উপস্থিতিও দেখা যায়নি। কিন্তু এর বিপরীতে ইসরায়েল লেবাননের সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি শত শতবার লঙ্ঘন করেছে। তারা লেবাননের আকাশে ড্রোন উড়িয়েছে, সাধারণ মানুষকে অপহরণ ও হত্যা করেছে এবং বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এখনো তারা এসব অন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করছে না।
ইসরায়েলের এই উসকানিমূলক আচরণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে। লেবাননে মোতায়েন জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউনিফিল), যারা ইসরায়েলের হামলা থেকে লেবাননকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা বরং হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। ইউনিফিল এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতির সময় দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর এক শরও বেশি গোপন অস্ত্র কেন্দ্র পাওয়া গেছে।
এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে সাহায্য করা দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স ইসরায়েলকে তার জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফ্রান্স অন্তত লেবাননের সার্বভৌমত্বের কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র তা–ও বলছে না। তারা উল্টো লেবাননের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি দখলদারির ভয় দেখিয়ে লেবাননে দ্রুত নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়েছে, যাতে দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়।
লেবানন সরকারের পক্ষ থেকে দখলদারি শেষ না করার ব্যর্থতা প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরবে। তবে হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের প্রতিরোধহীনতা তার সক্ষমতার প্রতি আস্থা আরও কমিয়ে দেবে।এই চাপের ফলে দ্রুত একজন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া এখনো থমকে আছে, কারণ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দল মন্ত্রিত্ব পাওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নতুন সরকার সশস্ত্র প্রতিরোধের বিষয়ে কী অবস্থান নেবে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ কার্যকর হবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত লেবানন ফোর্সেস দলের নেতারা দ্রুত জাতিসংঘের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের পক্ষপাতদুষ্ট মার্কিন ব্যাখ্যা মেনে নেয়। তারা চেয়েছিল শুধু লিতানি নদীর দক্ষিণেই নয়, বরং লেবাননজুড়ে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা হোক।
এদিকে হিজবুল্লাহ যখন লেবাননের সাবেক সেনাপ্রধানকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনের দাবি মেনে নেয়, তখন অনেকে মনে করতে থাকে, সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমনকি এ গুজবও ছড়িয়ে পড়ে যে ইসরায়েল ৬০ দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও লেবানন দখল করে রাখতে চায়।
কিন্তু সপ্তাহান্তে পরিস্থিতি বদলে যায়। সাধারণ মানুষ হঠাৎ করে সংগঠিত হয়ে দক্ষিণ লেবাননে নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে শুরু করে। এটি ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে ভেস্তে দেয়।
লেবাননের সেনাবাহিনী (যাদের ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্ষাকর্তা হিসেবে মনে করা হতো) এবার সাধারণ মানুষের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। নিরস্ত্র নারী-পুরুষদের ইসরায়েলি ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার দৃশ্য অনেককে ২০০০ সালের মুক্তির সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
এখন এই ঘটনাকে লেবাননের ‘তৃতীয় মুক্তি’ বলা হচ্ছে (২০০০ ও ২০০৬ সালের পর)। তবে এই ফিরে আসা স্থায়ী হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
মানুষ ফেরার মাত্র দুই দিন পর ইসরায়েল নাবাতিয়েহ শহরে বিমান হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে আহত করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী এখনো কিছু সীমান্তবর্তী গ্রামে অবস্থান করছে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকার অনুমতি দিয়েছে।
এই পরিস্থিতি লেবাননের দক্ষিণ অংশকে সব সময় যুদ্ধের আতঙ্কে রাখছে। ওয়াশিংটন সম্ভবত এই অনিশ্চয়তাকে কূটনৈতিক চাপ হিসেবে ব্যবহার করবে, যাতে তারা লেবাননের নতুন সরকার ও পুনর্গঠনের পরিকল্পনায় নিজেদের শর্ত চাপিয়ে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই সহায়তাকে এমনভাবে ব্যবহার করতে চায়, যাতে লেবাননের জনগণের রাজনৈতিক চেতনা থেকে সশস্ত্র প্রতিরোধের ধারণাকে আলাদা করা যায়।
এদিকে দেশীয় ব্যবসায়ী চক্রগুলোও ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারের নামে অতিরিক্ত অর্থ কামিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সম্প্রতি হিজবুল্লাহর নতুন সেক্রেটারি জেনারেল নায়েম কাসিম তাঁর দলের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন, যত দিন দখলদারি থাকবে, তত দিন প্রতিরোধের অধিকার থাকবে। তবে তিনি নতুন সামরিক অভিযান শুরু করার কথা বলেননি।
এর পরিবর্তে তিনি সব দায় লেবাননের সরকার এবং সেনাবাহিনীর ওপর চাপিয়ে দেন। এটি একটি দ্বিধাগ্রস্ত নীতি।
লেবানন সরকারের পক্ষ থেকে দখলদারি শেষ না করার ব্যর্থতা প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরবে। তবে হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের প্রতিরোধহীনতা তার সক্ষমতার প্রতি আস্থা আরও কমিয়ে দেবে।
এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, সবাই জনগণের প্রতিরোধের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত
হিচাম সাফিইদ্দিন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ব নন র স ইসর য় ল র ন সরক র দখলদ র জনগণ র র সময় র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
রাশেদুল ইসলাম (৬১) পাঁচ মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরছেন। তাঁর ওয়ারিশান সনদ দরকার। এই সনদ ছাড়া তিনি জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছেন না। এই কাজের জন্য গতকাল সোমবারও এসেছিলেন তিনি। একইভাবে ফিরে গেছেন।
নানা প্রয়োজনে এসে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে রাশেদুলের মতো অনেক মানুষকে প্রতিদিনই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এই ইউপিতে সব নাগরিক সেবা চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জনগণ প্রায় ৩০ ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, গ্রাম আদালত, কয়েক ধরনের ভাতা, ভিজিডি ও ভিজিএফের খাদ্যপণ্য বিতরণ, ট্রেড লাইসেন্স উল্লেখযোগ্য। বাজুবাঘা ইউপিতে এর সব কটি সেবাই বন্ধ। ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে চেয়ারম্যানের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদে সেবা কার্যক্রম চালুর দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ফিরোজ আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। সরকার ১০ ডিসেম্বর তাঁর স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ওই প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হাইকোর্ট একটি রিট করেন। শুনানির পর আদালত প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এ জন্য প্রশাসক কোনো কাজ করতে পারছেন না। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানের ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে।
২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর ফিরোজ আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২০ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। সরকার ১০ ডিসেম্বর তাঁর স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। ওই প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে ২২ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান হাইকোর্ট একটি রিট করেন।বাজুবাঘা ইউনিয়নের নাগরিক সেবায় ভোগান্তি লাঘবে অতিদ্রুত প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়কে বাজুবাঘা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে একটি মানববন্ধন হয়। এই কর্মসূচিতে দাবি করা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ (রঞ্জু) ইউনিয়ন পরিষদে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ক্ষমতার লোভে ইউনিয়ন প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন। এতে জনগণ ইউনিয়নের সব ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গতকাল সোমবার জেলার বাঘা উপজেলার চণ্ডীপুর গ্রামে বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের বারান্দায় কয়েকজন গ্রাম পুলিশ বসে আছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষ খোলা। তিনি সেবাগ্রহিতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কেন সেবা দেওয়া যাচ্ছে না, এর কারণ জানাচ্ছেন। চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ লেখা কক্ষটিতে তালা লাগানো।
সেখানেই কথা হয় কয়েকজন সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে। জোতরাঘোব গ্রামের সুমন হোসেন (২৮) ছেলের জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমি তো জানি নি যে ইউনিয়ন পরিষদের এই অবস্থা হয়্যা আছে। আজ গা জাননু, সব কামই নাকি পাড়ি আছে। কিছুই হচ্ছে না।’
ছেলের জন্মনিবন্ধন করার জন্য এসেছিলেন বাজিতপুর গ্রামের রুবেল হোসেন (৩০)। তাঁকেও হতাশ হতে হয়েছে। এক গ্রাম পুলিশ যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কাজ শুরু হলে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থা সম্পর্কে বারান্দায় বসে থাকা গ্রাম পুলিশের দফাদার মকলেছুর রহমান জানান, ‘প্রতিদিন আমরা পালাক্রমে ডিউটি করছি। কার্যক্রম স্থগিতের প্রথম দিকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন লোক আসত। এখনো ১০ থেকে ১৫ লোকজন আসেন। তবে এখন বেশির ভাগ লোকজন ফোনে খবর নেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, দেশের পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী ঘরানার পৌর মেয়র, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে যান। পরে বর্তমান সরকার সেবা কার্যক্রম সুচারু রূপে পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেন। ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ‘যেহেতু আমার ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়নি। সে জন্য বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছি। মহামান্য আদালত ছয় মাসের জন্য এই ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেন। জনগণের ভোগান্তি হোক, এটা আমি চাই না। তবে এটার দ্রুত সমাধান আশা করছি।’
চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ লেখা কক্ষটিতে তালা লাগানো। গতকাল সোমবার তোলা