সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পর‌ওয়ার বলেছেন, দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। বিভিন্ন এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যারা ঘাপটি মেরে বসে আছে, তাদেরকে দিয়ে নৈরাজ্য করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন তিনি।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে জামায়াতে ইসলামীর নেত্রকোণা জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মিয়া গোলাম পর‌ওয়ার বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এই ফ্যাসিস্ট হাসিনার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছে। আমরা কোনো ষড়যন্ত্রকে কাজে লাগাতে দেব না।

তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল, আপনি যে বক্তব্য দিচ্ছেন হাসিনার বক্তব্যের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক নাই। এটি অসত্য কথা। দেশের এত বড় একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলে পরিচিত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্যের সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতির কোনো মিল নেই। এর জন্য কোনো দেশকে আমরা দায়ী করি না।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ভারত শাসন করছে যে বিজেপি, তারা চরম সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল একটি রাজনৈতিক দল। তার শাসক গোষ্ঠী শেখ হাসিনাকে প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশে আরেকটি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে হাসিনাকে আবার এখানে আনার ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি আরও বলেন, হাসিনার বক্তব্যের জন্য ভারত দায়ী নয়, এ কথা আন্তর্জাতিকভাবে অসত্য। কারণ, আপনারা আশ্রয় দিয়ে দুধ-কলা খাইয়ে বড় করছেন। আপনার মিডিয়া, আপনার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন। তবে কেন আপনি দায়ী হবেন না?

কর্মী সমাবেশে নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন মিয়া গোলাম পর‌ওয়ার।

তিনি বলেন, নির্বাচন তো দিতে হবে। কিন্তু নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রয়োজন। ১৫ বছর ধরে প্রশাসনে যে জঞ্জাল জমে আছে। দলবাজ, দুর্নীতিবাজ- এসব ছেটে প্রশাসনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। এরা ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।

জামায়াত সেক্রেটারি আরও বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বার্থে সম্পৃক্ত পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, জুডিসিয়ারি, সাংবিধানিক কিছু বিধি-বিধান, রাষ্ট্রের কিছু অর্গান, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এসব ন্যূনতম সংস্কার আগে করতে হবে। তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে এসব আওয়ামী ফ্যাসিবাদী খুনি-হত্যাকারীদের বিচার ট্রাইব্যুনালে দৃশ্যমান হতে হবে, তারপর নির্বাচন হবে।

ফ্যাসিবাদের দোসর কারা, তাদের আচরণ ও কথাবার্তা শুনলে টের পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যখন ডিসি, এসপি, থানার ওসি, এসআই কিংবা প্রশাসনে যাই তাদের আচরণে বোঝা যায়। অনেকের কথার মধ্যে মধ্য দিয়ে এখনও ফ্যাসিবাদের গন্ধ আসে। প্রশাসনের এই জায়গাগুলো পরিষ্কার করুন।

গোলাম পর‌ওয়ার বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এক সাগর রক্ত গেল, হাজার হাজার জীবন গেল। তাই দুই মাস আগে কিংবা পরে নির্বাচন হলো, তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ১৫ বছর অপেক্ষা করতে পারি, ছয় মাস আগে-পরে হবে এটা বিষয় না।

তিনি বলেন, প্রশাসনকে পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার করে নির্বাচন করতে একটু সময় লাগবে। যেটুকু সময় লাগবে, তা দিতে জামায়াতে ইসলামী প্রস্তুত আছে।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, আপনি নির্বাচনের জন্য যে সম্ভাব্য ডেডলাইন দিয়েছেন, আপনার দেওয়া সেই ডেডলাইনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করুন, খুনিদের বিচার নিশ্চিত করুন। তারপর নির্বাচনের সম্ভাব্য ডেডলাইন আপনি ঘোষণা করুন। সেই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী আপনাদেরকে সহযোগিতা করবে।

নেত্রকোণা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা ছাদেক আহমাদ হারিছের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চল পরিচালক ড.

ছামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাবেক নেত্রকোণা জেলা আমির মাওলানা এনামুল হক, তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মুফতি আবু ইউসুফ খান প্রমুখ।

বিএইচ

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: র জন য আপন র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ