যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে তাদের ডেভিল হান্ট অপারেশনের আওতায় এনে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’ সম্পর্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের অনেক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটাকে স্বাভাবিক করতে এই অপারেশন চালানো হবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, ছয় মাস আগে সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সে সময় আমাদের পুলিশ বাহিনীর বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানসিকভাবে দুর্বল ও বেশকিছু সমস্যা হয়েছে। অনেক থানা পোড়ানো হয়েছিল। এসব কারণেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে আমরা অনেকগুলো পরিকল্পনা নিয়েছি। এর অনেকগুলো চলমান আছে, অনেকগুলো প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। তার একটা ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। 

তিনি বলেন, এই অপারেশন যৌথভাবে সকলে মিলে একটা ফোকাসড ওয়েতে কিছু কাজ করবে। দেশের স্থিতিশীল অবস্থাকে অস্থিতিশীল করার যে চেষ্টা হচ্ছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই অপারেশন চলবে। এজন্য আইনানুগ পদ্ধতিতে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেটা নেওয়া হবে। সেটার জন্য সকল বাহিনীকে প্রস্তুত ও ব্রিফিং করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের কাজ চলমান রয়েছে। 

নাসিমুল গনি বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আগে যে আকারে আইন প্রয়োগ করা হতো আমরা সেভাবে হাঁটতে পারবো না। সেজন্য আইন প্রয়োগের সঙ্গে যারা জড়িত সকল স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত হয়ে কীভাবে আইনটাকে প্রয়োগ করতে পারি সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, পুলিশের কেউ ভয়ে এবং চাপে পড়ে অন্যায় করেছে। কিছু অতিউৎসাহী ছিল তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হচ্ছে। আমরা চাই পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক।  

তিনি বলেন, আমাদের সিস্টেমের মধ্যে যেন একটা ভালো প্যাকটিস রেখে যেতে পারি। আর যেন দেশে আয়নাঘর তৈরি না হয়। এ রকম পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না হয়৷ আমাদের সিস্টেমে যারা কাজ করবেন তারা যেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হবে, যেখানে ঢাকা ও গাজীপুরের ১৫০ জন কর্মকর্তা থাকবে৷ 

ডেভিল হান্টে কারা নেতৃত্ব দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা পুলিশি অ্যাকশন। পুলিশ কাজ করবে এবং সেনাবাহিনী এতে সহায়তা করবে৷পুলিশের এই নাজুক অবস্থায় তাদের দিয়ে এই অপারেশন চলবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যে সকল দেশে বিপ্লব হয়েছে সেখানে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখেনি৷এই সরকার অতটা অমানবিক হতে পারেনি। আমরা পুলিশকে রিফর্ম করেছি। 

ডেভিল হান্টে কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা গতকাল (শনিবার) থেকে কাজ শুরু করেছে৷চট করে সবকিছু বলা যাবে না৷ যতদিন প্রয়োজন হয় ততদিন এই অপারেশন রাখা হবে৷ 

ডেভিল হান্টের তাৎপর্য কি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতিটি অপারেশনের একটি কোড নেম হয়। এই অপারেশনকে ফোকাস করার জন্য৷ডেভিল হান্ট অপারেশন যারা পরিচালনা করছে তাদের ক্ষমতা কতটুকু? এমন প্রশ্মের উত্তরে তিনি বলেন, পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের যে ক্ষমতা আছে সেই ক্ষমতাই পাবে৷ 
 
৫ আগস্টের পর যাদের নামে মামলা হয়েছে তারা ডেভিল হান্টের আওতায় আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ যখন ধরবে তখনই দেখতে পারবেন৷ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

‘১০০ টাকার’ বাজেটের নতুনত্ব কোথায়

ছোটবেলায় নালিতাবাড়ীতে শীতের রাতে যাত্রাগান বা পালাগান শুনতে বসতাম খড়ের ওপর। অপেক্ষা করতাম কখন শুরু হবে আসল কাহিনি। তখন বেরসিক বিবেক আধা ঘণ্টার বন্দনা গাইত, যা ছিল আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়। একই রকম বিরক্তি অনুভব করেছি, যখন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীরা বাজেট বক্তৃতা দিতেন, যেখানে একটি বড় অংশজুড়ে ছিল শুধুই সরকারের বন্দনা। যাত্রাগানে বন্দনা শুধু শুরুতে থাকে।

বাজেটে বন্দনা শুরু, শেষ ও মাঝেমধ্যেই আবির্ভূত হয়, যা শ্রোতাদের জন্য একধরনের অত্যাচার। সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের জন্য ওই দিন বড়ই মায়া হয়—কতবার যে টেবিল চাপড়াতে হয়, তার হিসাব থাকে না। বাজেট অর্থনীতির কল্যাণ বয়ে আনলেও এর আয়তন বাঙালির অতিবাচালতা বিশ্বসভায় তুলে ধরে জাতীয় চরিত্রের ক্ষতি করেছে। 

এক–এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাত্র ৫২ পৃষ্ঠায় ২০০৮–২০০৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা শেষ করেছিল, যা ছিল এক চমৎকার দৃষ্টান্ত। আওয়ামী লীগের ২০০৯–২০১০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা একলাফে ১১৪ পৃষ্ঠায় উঠে গেল। তার পর থেকে এই বক্তৃতার আয়তন বাড়তে বাড়তে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের ভাষণ সর্বোচ্চ ২০২ পৃষ্ঠায় উঠে গেল, সেই হিসাববিদ অর্থমন্ত্রীর বেহিসাবি আমলে, যিনি পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাত খতম করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এই বাচালতা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পাওয়ার যোগ্য। অর্থনীতি বড় হলেই বক্তৃতা ক্রমান্বয়ে বড় হবে—এমন কথা নেই। ভারতের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে কমপক্ষে আট গুণ বড়। অথচ অর্থনীতিবিদ নির্মলা সীতারমণ মাত্র ২৮ পৃষ্ঠায় বাজেট ভাষণ শেষ করেছেন। পাকিস্তানের শেষ বাজেট ভাষণ ছিল মাত্র ৩৮ পৃষ্ঠার। 

বাংলাদেশের এবারের বাজেটের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এর বাচনিক পরিমিতিবোধ। মাত্র ৫৬ পৃষ্ঠায় যে বাংলাদেশের বাজেট শেষ করা যায়, তা দেখিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি আরও ছোট করা যেত, যদি উপদেষ্টা সেখান থেকে বাদ দিতে পারতেন সংস্কারের প্যাচাল, যা ১০ মাস পর অনেকটা রূপকথার কাহিনিতে পরিণত হয়েছে। বাজেট অর্থনীতির দলিল। এখানে বারো জাতের কথা না আনাই ভালো। অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০০৫-০৯ কালপর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। 

২০০৯ সাল থেকে শাসনামল শুরু করে আওয়ামী লীগ কোনো অর্থনীতিবিদকে কখনো অর্থমন্ত্রী বানায়নি। পেশাদার লোককে ওই জায়গায় বসাতে লীগ সরকার সম্ভবত ভয় পেত—পাছে ধনিক গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি যদি বেঁকে বসেন। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে অর্থনীতিবিদদের নিয়ে এক চাঁদের হাট বসেছে। গভর্নর, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা—সবাই পেশাদার অর্থজ্ঞানী। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা তো ক্ষুদ্রঋণের বিশ্বখ্যাত নাম। সব মিলিয়ে তাই বাজেট নিয়ে মানুষের প্রত্যাশাও ছিল বেশ উঁচুতে। সে তুলনায় অর্থ উপদেষ্টা খুব একটা ভালো ‘হোমওয়ার্ক’ করেছেন বা করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। 

২০২৫–২৬ অর্থবছরের মোট বাজেট তথা ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটকে যদি ১০০ টাকা ধরি, তাহলে এর মধ্যে ৭১ টাকা হচ্ছে রাজস্ব আয় এবং বাকি ২৯ টাকা ঘাটতি ব্যয়। এই ঘাটতি মেটাতে ১৩ টাকার বিদেশি ঋণ ও অনুদান এবং ১৬ টাকার দেশি ঋণ ব্যবহার করা হবে। এই কাঠামোয় কোনো চমক বা নতুনত্ব নেই। আওয়ামী সরকার ২০২৪ সালে যে বাজেট বানিয়েছিল, তার পূর্ণ বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছে চলমান সরকার। ২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আয়তন ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। একে ১০০ টাকা ধরলে এখানে রাজস্ব আয় ৭০ টাকা। বাকি ঘাটতির ৩০ টাকা মেটানো হবে ১৪ টাকার বিদেশি ঋণ আর ১৬ টাকার দেশি ঋণের সমন্বয়ে। 

শেয়ারবাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের যে বেহাল চলছে, তাতে রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যায় না। শেষতক ২০২৫–২৬ সালের সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ৩০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। অর্থাৎ কাঠামোগতভাবে এটি আওয়ামী লীগের শেষ বাজেটের ধরন থেকে আলাদা নয়। তবে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটের কাঠামো থেকে বর্তমান বাজেটের কাঠামোয় পরিবর্তন এসেছে। সেখানে ১০০ টাকার বাজেটে ৬৭ টাকা ছিল রাজস্ব আয়। বাকি ৩৩ টাকার ঘাটতি মেটাতে আওয়ামী সরকার ১৩ টাকার বিদেশি ঋণ ও অনুদান এবং ২০ টাকার দেশি ঋণ নিয়েছিল। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ঋণনির্ভর উন্নয়ন মডেল থেকে সরে আসার চেষ্টা রয়েছে এই বাজেটে।

অর্থ উপদেষ্টা একপর্যায়ে বলেন যে তাঁর বাজেট অতীতের ‘প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিকতা’ থেকে মুক্ত হয়ে ‘সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন’ বা ‘হোলস্টিক ডেভেলপমেন্ট’-এর পথে ধাবিত হয়েছে। অতীতের বাজেটগুলোর একটি বর্ধমান দিক ছিল সামাজিক সুরক্ষা, যা নিছক প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিকতা প্রমাণ করে না। উপরন্তু বাজেট প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক হলে দোষটা কিসের?

আওয়ামী আমলের শেষ বাজেটের ৫৩ হাজার কোটি টাকা কমানো হলেও এর সিংহভাগ, অর্থাৎ ৫০ হাজার কোটি টাকাই কমানো হয়েছে উন্নয়ন বাজেট থেকে। এতে দোষের কিছু নেই। বড় বড় উন্নয়নকাজ নতুন নির্বাচিত সরকার গ্রহণ করবে, এটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু প্রত্যাশিত নয় এই সরকারের বিশাল পরিচালন ব্যয়, যা আওয়ামী বাজেটের অঙ্ক অক্ষুণ্ন রেখে অদক্ষতা প্রমাণ করেছে। বাহ্যত, সরকার মন্ত্রিসভা ছোট রেখে কৃচ্ছ্রসাধন করছে এবং বক্তৃতায় সে রকম দাবি করা হচ্ছে। সমাপ্তপ্রায় অর্থবছরে ৫ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার পরিচালন ব্যয় সে দাবির সত্যতা প্রমাণ করে না। কেননা, আগের অর্থবছরে এই পরিচালন ব্যয় ছিল ৪ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। 

অর্থ উপদেষ্টা কিছু পক্ষপাতদুষ্ট কথা বলেছেন বাজেটে। বাংলাদেশকে নিয়ে যত উন্নয়ন স্বপ্ন যেন সেই ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান থেকেই এসেছে—এমন ভাব রয়েছে নানা জায়গায়। উন্নয়ন মানে এক রোম শহর তিলে তিলে গড়ে ওঠার গল্প—এটি রাতারাতি তৈরি হয় না। আশির দশক থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রতি দশকেই আগের তুলনায় ১ থেকে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ করে বাড়তে থাকে। আশির দশকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশের প্রবৃদ্ধি শেষতক ২০১০-এর দশকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এ সময়ে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ শাসন করেছে, যারা প্রত্যেকেই এই কৃতিত্বের অংশীজন। 

আরও পড়ুনশিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ কি কম হয়ে গেল১৪ জুন ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা একপর্যায়ে বলেন যে তাঁর বাজেট অতীতের ‘প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিকতা’ থেকে মুক্ত হয়ে ‘সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন’ বা ‘হোলস্টিক ডেভেলপমেন্ট’-এর পথে ধাবিত হয়েছে। অতীতের বাজেটগুলোর একটি বর্ধমান দিক ছিল সামাজিক সুরক্ষা, যা নিছক প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিকতা প্রমাণ করে না। উপরন্তু বাজেট প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক হলে দোষটা কিসের? প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের পর্যাপ্ত শর্ত নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয় শর্ত। প্রবৃদ্ধি ছাড়া উন্নয়ন করেছে—এমন দেশ ভিন্ন গ্রহেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আশির দশক থেকে প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বধাপগুলো না থাকলে আজকের এই বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যেত না। 

এই অর্জন যে সামান্য নয়, তার প্রমাণ একই সময়ে তেজস্বী দেশ পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধিতে নিম্নগমন। একই কালপর্বে পাকিস্তান প্রায় সাত ভাগের প্রবৃদ্ধিকে চার ভাগে নামিয়ে ফেলেছে। এই উপমহাদেশে একমাত্র ভারতই বাংলাদেশের চেয়ে কিঞ্চিৎ উচ্চতর প্রবৃদ্ধিযাত্রা দেখাতে পেরেছে। এ জন্য অমর্ত্য সেন বলেছেন, অনেক সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারতকেও পেছনে ফেলেছে। এসব অর্জনের স্বপ্ন শুধু জুলাই থেকে শুরু হয়নি। কথাটি বিডা চেয়ারম্যানের পোষা বাক্যের মতো শোনাচ্ছে। তিনিও দাবি করেন, বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর হয়ে যাওয়ার স্বপ্নটি নাকি এই গত জুলাই থেকেই শুরু হয়েছে। এই সরকারের সব উপদেষ্টাই কি কোনো নির্দিষ্ট ‘ন্যারেটিভ’ তুলে ধরতে বাধ্য? এটিই কি ‘নতুন বন্দোবস্ত’? 

অর্থনীতিবিদের কাজ নির্মোহভাবে অর্থ খাতের ইতিহাস তুলে ধরা। অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় দুর্নীতির শিকড় খুঁজতে গিয়ে মাত্র ১৫ বছর পেছনে গেলেন কেন? অবশ্যই আওয়ামী আমলের দুর্নীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে দ্বিমত নেই। কিন্তু যত দূর মনে পড়ে, দুর্নীতিতে শিরোপা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় ‘হ্যাটট্রিক’ করেছিল ২০০৫ সালের দিকে। তখন বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। তাই বলে তাঁকে আমরা এককভাবে দায়ী করছি না। দুর্নীতি বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও সহজ কথায় বাঙালির মজ্জাগত সমস্যা। অতি সম্প্রতিও এর সাক্ষ্য মিলছে। উপদেষ্টার উচিত ছিল এ–জাতীয় বিতর্কিত বিষয়ের আলাপ এই বাজেট বক্তৃতায় না এনে একে সম্পূর্ণ অর্থনীতির জ্ঞানভিত্তিক এক নিষ্ঠাশীল দলিলে পরিণত করা। তাহলে এটি অনেক নতুনত্ব পেত। এটিও হতে পারত একটি সংস্কার। 

ড. বিরূপাক্ষ পাল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ডে অর্থনীতির অধ্যাপক

* মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ