ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে টেলিফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন বলে নিউইয়র্ক পোস্ট খবর প্রকাশ করেছে।

শনিবার রাতে নিউইয়র্ক পোস্ট ট্রাম্পের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে (মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ) বসে ট্রাম্প তাদের ওই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কতবার পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, এ প্রশ্নের জবাব না দেওয়াই ভালো। তিনি (পুতিন) মানুষের মৃত্যু বন্ধ হওয়া দেখতে চান।

আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি না করে পুতিন রাশিয়াকে ধ্বংস করছেন: ট্রাম্প ২১ জানুয়ারি ২০২৫

নিউইয়র্ক পোস্টে ট্রাম্পের ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর রাতে রয়টার্স থেকে এ বিষয়ে জানতে ক্রেমলিন এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কারও কাছ থেকেই সাড়া মেলেনি।

গত মাসের শেষ দিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে প্রস্তুত আছেন। ওয়াশিংটনও প্রস্তুত, এমন কথা শোনার অপেক্ষায় আছে মস্কো।

শুক্রবার ট্রাম্প আরও বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি খুব সম্ভবত আগামী সপ্তাহে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলবেন।

আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিন আলোচনায় না বসলে ট্রাম্প কি নিষেধাজ্ঞা দেবেন২২ জানুয়ারি ২০২৫

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের তৃতীয় বার্ষিকী। এই যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ইউক্রেনের নাগরিক।

ট্রাম্প নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সব সময়ই ভালো এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তাঁর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।

এ নিয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য ট্রাম্প দেননি।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আশা করি এটা দ্রুত হবে। প্রতিদিনই লোকজন প্রাণ হারাচ্ছেন। ইউক্রেনে এ যুদ্ধ খুবই বাজে প্রভাব ফেলেছে। আমি জঘন্য এই জিনিসটি শেষ করতে চাই।’

আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি না করে পুতিন রাশিয়াকে ধ্বংস করছেন: ট্রাম্প ২১ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক প স ট বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে

আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। যমজ বোন। গত ১৭ মে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। বরিশাল সদরে জন্ম নেওয়া দুই বোন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর কেমন করে গেলেন স্বপ্নের বন্দরে তাই তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ 

গত ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। এর ঠিক পরদিনই এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এমবিএ গ্র্যাজুয়েশন ও সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের ঠিক পরদিন, ১৮ মে ছিল এই দুই বোনের জন্মদিন। জন্মদিনটি তারা পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের আর রাজ্জাক সুপারমার্কেটের ব্যাঙ্কুয়েট হলে।
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে...
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যমজ বোন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবার জন্ম বরিশাল সদরে। ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। নিউইয়র্কে গিয়ে হাইস্কুল শেষ করে তারা সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা প্রশাসনে ভর্তি হন এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। ১৬ মে সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে 
কমিশন্ড হন।
যে উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক
সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি ১৭ মে তাদের ডিগ্রি অর্জন উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি বলেন, ‘শিক্ষার পাশাপাশি দেশসেবায় তাদের এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে তারা নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেবেন।’
যে জন্য করেছেন এমবিএ
মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ কোর্স সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনে আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি কসমেটিকস ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এ দুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনকের অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি হচ্ছে– এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মিট, আর রাজ্জাক সুপারমার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার। 
ঐতিহ্য ও মায়ের অগ্রযাত্রা
বরিশাল থেকে মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দুই বোন দেখেছেন মায়ের দৃঢ়তা ও পরিবারের জন্য মায়া। এও দেখেছেন যে মায়ের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ কেমন করে আস্থা অর্জন করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে! প্রতিষ্ঠানটির মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেবল পহেলা বৈশাখেই নয়; বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সব অনুষ্ঠানে এবং শৌখিন প্রবাসীদের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে তাদের মাটির ডিনার সেট। মায়ের মতো দুই বোনও বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালিয়ানায় ভর করে এগিয়ে যেতে চান। 
আগামীর স্বপ্ন
আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা দেশ ছাড়ার পর থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যয় নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা করতে হয়নি মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে। তারা বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গেই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে তারা ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। সেদিন সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দুই বোন বলেন, ‌‘পেশার পাশাপাশি আগামীতে নিজেদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে চাই। দেশেও কাজ করছি আমরা। সেখানেও রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই!’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে
  • টানা ৩৬ ঘণ্টা খেললেন গলফ