তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি করতে ইবিতে কুহেলিকা উৎসব
Published: 9th, February 2025 GMT
তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির করার লক্ষ্যে এবং বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে তৃতীয়বারের মতো কুহেলিকা উৎসবের আয়োজন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্য। এতে উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে ছিল চিঠিবাক্স, রঞ্জনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৪৫টি বৈচিত্র্যময় স্টল।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
উৎসবে জ্ঞানতাপসী, দিশারী বুক হাউজ, আরশীনগর, আপ্যায়ন, পাটের ঝুড়ি চায়ের কুড়ি, গয়নার বাক্স, চন্দ্রমাধুরী, পৌষাল, পেটুক পয়েন্ট, শখের ঝুপড়ি, সাজপসরা, শথকথা, রসনার স্টেশন, পেদা টিংটিং, চিকেন চিনি চমক, পাঁচফোড়ন, পুষ্টি প্লাস, পিঠা যাবে পেটুক বাড়ি, স্টাইল ক্যানভাস, চায়ের দুনিয়া, কুটুম বাড়ি, বুক ভিলেজসহ বিভিন্ন ধরনের স্টল দেখা যায়।
এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নানা উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবে আসা দর্শকদের ক্যাম্পাসের তরুণ উদ্যোক্তাদের থেকে পছন্দসই পোশাক ক্রয়, খাবার খাওয়া ও প্রিয়জনকে চিঠি প্রদান করাসহ একসঙ্গে সময় কাটাতে দেখা যায়।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তামিম মীর বলেন, “প্রতি বছর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তবে আমি এবারই প্রথম পেয়েছি এবং আমি খুবই আনন্দিত। এখানে বিভিন্ন স্টল থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আমি চাই, প্রতি বছর এমন আয়োজন করা হোক। এতে আমরা আমাদের বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করতে পারব।”
অভয়ারণ্যের সদস্য অভয় মাহমুদা আক্তার বলেন, “এ উৎসবের সবচেয়ে সুন্দর আয়োজন হলো চিঠিবাক্স। আমরা ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছি। ফলে গ্রামীণ ঐতিহ্যের সেই চিঠি আদান প্রদান আর করা হয় না। তো কুহেলিকা উৎসবে চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ সেই সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার এক অনবদ্য চেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে নিজের পরিচয় গোপন রেখেই যে কেউ না বলা কথাগুলো লিখতে পারবেন প্রিয়জনের কাছে। আর সেই চিঠি আমরা অভয়রা পৌঁছে দেব তার হাতে, একদম নির্ভুলভাবে।”
অভয়ারণ্যের সভাপতি নাঈমুল ফারাবি বলেন, “কুহেলিকা উৎসব প্রতি বছরের এক অনন্য আয়োজন। যেখানে আমাদের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্যোগী মানসিকতার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পান। এ উৎসব কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং নবীন শিল্পী ও উদ্যোক্তাদের জন্য একটি মঞ্চ। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রতিভা ও দক্ষতা তুলে ধরতে পারেন।”
তিনি বলেন, “সৃজনশীলতার জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে কুহেলিকা প্রতিবারই শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। এটা তাদের ভবিষ্যতের পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।”
কুহেলিকা উৎসব পরিদর্শন শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব এম নসরুল্লাহ বলেন, “অভয়ারণ্যের উদ্যোগে একটি অসাধারণ আয়োজন করা হয়েছে। শীত বরণের এ ব্যতিক্রমী আয়োজনে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও উদ্যোক্তাদের সৃজনশীল উদ্যোগ প্রমাণ করেছে যে, এমন উৎসব কেবল আনন্দের জন্য নয়, বরং আমাদের শিকড়কে নতুনভাবে চেনারও একটি সুযোগ।”
তিনি বলেন, “ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধনে এ উৎসব হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি চর্চার এক নতুন অধ্যায়। এ রকম আয়োজনের কারণেই খুব কম সময়ের মধ্যে অভয়ারণ্য সবার কাছে পরিচিত হয়েছে। এসব আয়োজন তরুণদের উদ্যমী করে তোলে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষায় বেশ সহায়ক।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এ উৎসব উৎসব র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’