Samakal:
2025-08-01@21:08:39 GMT

ঝোপখালী চরে আশার আলো

Published: 9th, February 2025 GMT

ঝোপখালী চরে আশার আলো

বেতাগীর ঝোপখালী চর নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। তাদের আশা, চরটিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আশ্বাস পাওয়া গেছে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন তারা। এ ছাড়া ভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনায় ভূমিহীনদের জন্য নতুন বাসস্থানের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। 
কৃষক, পরিবেশবিদসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সম্ভাবনার নানা দিক। তারা জানায়, বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে দক্ষিণের এ জনপদ। ফলে জেগে ওঠা নতুন চর তাদের মধ্যে সীমাহীন আশা জাগিয়েছে। চরের মাটিতে আবাদ হচ্ছে তরমুজসহ মৌসুমি সবজি। চর ঘেঁষা নদীতে পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর মাছ। সেই সঙ্গে রয়েছে পর্যটনে অপার সম্ভাবনা। সবকিছু মিলে চরকে ঘিরে তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। নদীর বুক চিরে আগামী দশকে এখানে আরও ভূমি জেগে ওঠার সম্ভাবনাও দেখছেন তারা।
বেতাগী উপজেলার বিষখালী নদীর মোহনায় সর্বশেষ জেগে ওঠা ‘ঝোপখালী পাখির চর’। ছোট-বড় বিভিন্ন  প্রজাতির প্রাণী, উদ্ভিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এখানকার জীববৈচিত্র্য। এখানে রয়েছে পাখিদেরও অভয়ারণ্য। জোয়ারের সময় চরটি পানিতে প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় নৌকায় করে উপভোগ করা যায় এখানকার পাখির কলতান ও বিস্তৃত বনাঞ্চলের সবুজের সমারোহ। তাই চরটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন মহলের। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দুপুরে ‘ঝোপখালী পাখির চর’ পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব খোন্দকার নাজমুল হুদা শামীম।
যুগ্ম সচিব নাজমুল হুদা শামীম ‘ঝোপখালী পাখির চর’কে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের জেলা সমন্বয়কারী হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা দক্ষিণের এ চরের প্রকৃতি দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। অথচ অনেকেই জানেন না ঘুরে বেড়ানোর জন্য এলাকাটিতে এমন একটি সুন্দর জায়গা রয়েছে। পাখির কলতান ও সবুজের সমারোহে আর ছৈলা গাছের ডালে ডালে পাখির বাসা ভ্রমণপিয়াসী পর্যটকদের মনকে আন্দলিত করবে নিশ্চিত। তাই চরের উন্নয়নে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় প্রশাসনসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বেতাগী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু বলেন, সরকারি নজরদারি আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে গড়ে উঠতে পারে নান্দনিক পর্যটন স্পট, যা থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির গাজী বলেন, জেগে ওঠা চরের সার্বিক উন্নয়ন কাজের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এর মধ্যে চরটিকে ‘পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এসব চরের মানুষকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে। মোটকথা, চরটিকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
গত ১৬ জানুয়ারি বেতাগী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামকরণের ফলক ও জাতীয় পতাকা উড়িয়ে চরটির সূচনা করা হয়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ