উন্নয়নবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় অধিকাংশ হাওরপার
Published: 9th, February 2025 GMT
হাওর-বাঁওড়ের জেলাখ্যাত মৌলভীবাজারে রয়েছে ছোট-বড় ২০টির বেশি হাওর। এর মধ্যে হাওর-জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাস্টারপ্ল্যানের তালিকায় রয়েছে এ জেলার মাত্র তিনটি হাওর। ফলে উন্নয়নবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় জেলার ১৭টিরও বেশি হাওরপারের মানুষ।
জানা গেছে, অধিদপ্তরের মাস্টারপ্ল্যানের তালিকা থেকে বাদ পড়া এসব হাওরপারের বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয়রা। যার কারণে তারা সবক’টি হাওরকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত হাইল হাওর বা বাইক্কা বিল ও হাওর কাউয়াদীঘি ছাড়াও জেলায় অন্তত ২০টির অধিক ছোট-বড় হাওর রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সদরের বড় হাওর, খাইঞ্জার হাওর, রাজনগরের হাওর কড়াইয়া, গোয়ালিয়া, ভুরভুরিয়া, কমলগঞ্জের কেওলার ও হলদিয়ার হাওর।
২০১২ সালে হাওর-জলাভূমি উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যানে হাকালুকি, হাইল হাওর ও কাউয়াদীঘিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে জেলার বাকি সব হাওর। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তাদের তালিকায় বড় তিনটি হাওর ছাড়াও বড় হাওর, হাওর কড়াইয়া ও কেওলার হাওর রয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু হাওর রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। সূত্র জানায়, সদর উপজেলার বড় হাওরের বিস্তৃতি দুই হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে। অন্যদিকে রাজনগরের কড়াউয়া হাওর ৩৪৫ হেক্টর ও কমলগঞ্জের কেওলার হাওর ৪০০ হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত।
বড় হাওরপারে অবস্থিত সদর উপজেলার সাধুহাটী গ্রামের স্থানীয় মনুমুখ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সেফুল জানান, দিঘলা, টানাখালি, কাইটলা, হইলতাজুড়ি, বারকীগাঙসহ বিভিন্ন বিল-নালা ও কৃষিজমির সমন্বয়ে ফসলি জমির যে বিশাল অংশ, সেটাই মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষিজীবী মানুষের অবলম্বন। এ হাওরসহ জেলার সবক’টি হাওর মাস্টারপ্ল্যানের আওতাভুক্ত করার দাবি তাদের। এতে পিছিয়ে থাকা মানুষের জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। সাবেক এ জনপ্রতিনিধি জানান, কুশিয়ারা নদী থেকে উৎপত্তি বরাক ও কামারখালী নদী খনন করে পানিপ্রবাহের পথ সুগম করা হলে হাওরাঞ্চলে কৃষি ও মিঠাপানির মাছের উৎপাদন বাড়বে।
এদিকে উন্নয়ন মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত না হওয়ায় কাউয়াদীঘি হাওর রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আ স ম সালেহ সুহেল ও সদস্য সচিব খছরু চৌধুরী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। জেলার সব হাওরকে অন্তর্ভুক্তিকরণের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে এরই মধ্যে আবেদনও করেছেন তারা।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রোববার শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল পরিদর্শনে আসেন। তখন তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন দিয়ে সব হাওর মাস্টারপ্ল্যানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। উপদেষ্টা ফরিদা আখতার হাওরগুলো কেন মাস্টারপ্ল্যানের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তা খোঁজ নিয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন।
কাউয়াদীঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব খছরু চৌধুরী উপদেষ্টার কাছে আবেদনপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাওরগুলো বাদ পড়ার কারণ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন উপদেষ্টা। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুদ্দিন জানান, ছয়টি হাওরের তালিকা তাদের কাছে আছে। কী কারণে, কেন এর তিনটি হাওর মাস্টারপ্ল্যানের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে– তা তাদেরও জানা নেই।
মৌলভীবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ ইবনে ওয়ালিদ বলেন, কিছুদিন আগে এ জেলায় যোগদান করেছেন। হাওর উন্নয়ন মাস্টারপ্ল্যানের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা নেই। দ্রুতই এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে অবগত করবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ভ ক ত কর উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলভীবাজারে পিবিআইর হাজতখানা থেকে আসামির লাশ উদ্ধার
মৌলভীবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাজতখানার ভেতর থেকে মোকাদ্দুস (৩২) নামে আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে পিবিআই।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে মৌলভীবাজার জেলা শহরের টিভি হাসপাতাল সড়কে পিবিআইর হাজতখানা থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়।
মোকাদ্দুস কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তিনি আলোচিত লিটন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৯ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের ধানক্ষেত থেকে লিটন নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে মোকাদ্দুস পলাতক ছিলেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন মোকাদ্দুস। পরে তাকে লিটন হত্যার মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে থানা পুলিশ।
পিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর খাওয়া-দাওয়া শেষে মোকাদ্দুসকে ৭-৮ জন আসামির সঙ্গে হাজতখানায় রাখা হয়। সোমবার ভোর ৬টার দিকে ডিউটি অফিসার গিয়ে দেখেন, মোকাদ্দুস নিজের লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মোকাদ্দুসের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
১১ সেপ্টেম্বর লিটনের বাবা সাত্তার মিয়া অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এ মামলায় শামিম নামের আরেকজনকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. জাফর হুসাইন বলেছেন, লিটন হত্যা মামলার তদন্ত আমাদের হাতে। মোকাদ্দুস রবিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার সকালে হাজতখানায় আত্মহত্যা করেন তিনি। বিষয়টি আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।
ঢাকা/আজিজ/রফিক