হাওর-বাঁওড়ের জেলাখ্যাত মৌলভীবাজারে রয়েছে ছোট-বড় ২০টির বেশি হাওর। এর মধ্যে হাওর-জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাস্টারপ্ল্যানের তালিকায় রয়েছে এ জেলার মাত্র তিনটি হাওর। ফলে উন্নয়নবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় জেলার ১৭টিরও বেশি হাওরপারের মানুষ।
জানা গেছে, অধিদপ্তরের মাস্টারপ্ল্যানের তালিকা থেকে বাদ পড়া এসব হাওরপারের বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয়রা। যার কারণে তারা সবক’টি হাওরকে এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত হাইল হাওর বা বাইক্কা বিল ও হাওর কাউয়াদীঘি ছাড়াও জেলায় অন্তত ২০টির অধিক ছোট-বড় হাওর রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সদরের বড় হাওর, খাইঞ্জার হাওর, রাজনগরের হাওর কড়াইয়া, গোয়ালিয়া, ভুরভুরিয়া, কমলগঞ্জের কেওলার ও হলদিয়ার হাওর।
২০১২ সালে হাওর-জলাভূমি উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যানে হাকালুকি, হাইল হাওর ও কাউয়াদীঘিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে জেলার বাকি সব হাওর। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তাদের তালিকায় বড় তিনটি হাওর ছাড়াও বড় হাওর, হাওর কড়াইয়া ও কেওলার হাওর রয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু হাওর রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। সূত্র জানায়, সদর উপজেলার বড় হাওরের বিস্তৃতি দুই হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে। অন্যদিকে রাজনগরের কড়াউয়া হাওর ৩৪৫ হেক্টর ও কমলগঞ্জের কেওলার হাওর ৪০০ হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত।
বড় হাওরপারে অবস্থিত সদর উপজেলার সাধুহাটী গ্রামের স্থানীয় মনুমুখ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সেফুল জানান, দিঘলা, টানাখালি, কাইটলা, হইলতাজুড়ি, বারকীগাঙসহ বিভিন্ন বিল-নালা ও কৃষিজমির সমন্বয়ে ফসলি জমির যে বিশাল অংশ, সেটাই মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষিজীবী মানুষের অবলম্বন। এ হাওরসহ জেলার সবক’টি হাওর মাস্টারপ্ল্যানের আওতাভুক্ত করার দাবি তাদের। এতে পিছিয়ে থাকা মানুষের জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। সাবেক এ জনপ্রতিনিধি জানান, কুশিয়ারা নদী থেকে উৎপত্তি বরাক ও কামারখালী নদী খনন করে পানিপ্রবাহের পথ সুগম করা হলে হাওরাঞ্চলে কৃষি ও মিঠাপানির মাছের উৎপাদন বাড়বে।
এদিকে উন্নয়ন মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত না হওয়ায় কাউয়াদীঘি হাওর রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আ স ম সালেহ সুহেল ও সদস্য সচিব খছরু চৌধুরী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। জেলার সব হাওরকে অন্তর্ভুক্তিকরণের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে এরই মধ্যে আবেদনও করেছেন তারা।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রোববার শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল পরিদর্শনে আসেন। তখন তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন দিয়ে সব হাওর মাস্টারপ্ল্যানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। উপদেষ্টা ফরিদা আখতার হাওরগুলো কেন মাস্টারপ্ল্যানের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তা খোঁজ নিয়ে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন।
কাউয়াদীঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব খছরু চৌধুরী উপদেষ্টার কাছে আবেদনপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাওরগুলো বাদ পড়ার কারণ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন উপদেষ্টা। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুদ্দিন জানান, ছয়টি হাওরের তালিকা তাদের কাছে আছে। কী কারণে, কেন এর তিনটি হাওর মাস্টারপ্ল্যানের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে– তা তাদেরও জানা নেই।
মৌলভীবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ ইবনে ওয়ালিদ বলেন, কিছুদিন আগে এ জেলায় যোগদান করেছেন। হাওর উন্নয়ন মাস্টারপ্ল্যানের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা নেই। দ্রুতই এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে অবগত করবেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ভ ক ত কর উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে নোড়ার আঘাতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় মসলা বাটার নোড়া (শিল) দিয়ে আঘাত করে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। আজ বুধবার ভোর পাঁচটার দিকে উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খোয়াজনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে স্বামী পলাতক।

নিহত গৃহবধূর নাম কুলসুমা বেগম (৪০)। তিনি খোয়াজনগর গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী। দুজনের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরে পারিবারিক নানা বিষয়ে কুলসুমার সঙ্গে তাঁর স্বামীর ঝগড়া হয়। এ সময় স্বামী আজিজুল কুলসুমাকে কয়েক দফা মারধর করেন। একপর্যায়ে মসলা বাটার একটি নোড়া দিয়ে কুলসুমার মাথায় আঘাত করা হয়। এ সময় কুলসুমা অচেতন হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শরীফ হোসেন বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে বাগ্‌বিতণ্ডা মধ্যে স্বামীর নোড়ার আঘাতে কুলসুমার মৃত্যু হয়েছে। তাঁর স্বামী পলাতক। তাঁকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত কুলসুমার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে নোড়ার আঘাতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক