‘বৃষ্টি নামলে পোলাপাইন নিয়ে ঘরের এক কোনায় ঘাপটি মেরে বসে থাকি, কখন বৃষ্টি থামবে। বৃষ্টি না থামলে কখনও কখনও সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হয়। খাওয়া-গোসলের পানি নেই। বাথরুম করতে হয় খোলা মাঠে।’ কথাগুলো বলেন পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলেরটেক আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বাসিন্দা।
২০০৪ সালে সান্তানপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করে ভূমি ও গৃহহীন ১৩০টি পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৩টি ব্যারাকের প্রতিটিতে ১০টি পরিবার বসবাস করে। কয়েক বছর আগে ৭টি ব্যারাকের কিছু টিনের চাল মেরামত করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ৬টি ব্যারাকের ৬০টি পরিবারের ঘর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ায় ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় ১২০০ মানুষ বাস করছে। বিশুদ্ধ পানি সংকট, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঘরগুলোর খুঁটি মরিচা ধরে খসে পড়ছে। সামনে থেকে ঘরগুলোর অবস্থা মোটামুটি ভালো দেখা গেলেও ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় মাথার ওপর টিনের চালে মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। ঘরের দরজা-জানালা ও বেড়া ভাঙা। সামান্য বৃষ্টি হলেই চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে। 
কয়েকজন বাসিন্দা জানান, খাওয়া-দাওয়া ও গোসল করার জন্য সরবরাহ করা নলকূপে এক ফোঁটা পানিও ওঠে না। তাদের গোসল ও মাছ চাষের জন্য একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল, তাও শুকিয়ে গেছে। আলেয়া বেগম নামে এক গৃহবধূ আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাথরুমের সমস্যার কথা আর কী বলব! খোলা মাঠে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। খোলা বিলের মধ্যে গোসল করে কাপড় পাল্টানো যে কী লজ্জার, তা নারী না হলে কেউ বুঝবে না। এমনই পোড়া কপাল নিয়ে জন্ম নিয়েছি; রোদে পুড়ি, বৃষ্টিতে ভিজি, তারপরও আমাদের খবর নেয় না কেউ।’
আশ্রয়ণের বাসিন্দা বাউছার ও হাবিবুর জানান, অভাবের সংসারে পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাড় করাই কঠিন। এর পর ভাঙা ঘর মেরামত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ অবস্থায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বসবাস করতে হচ্ছে।
কথা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ; দিন আনি দিন খাই। সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখানে হয়েছে দুর্ভোগের আরেক নাম। ঘরগুলোর টিনের চাল মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে আছে। আমাদের বাথরুমগুলোর অবস্থা খুব খারাপ; ময়লা যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাথরুমের দুর্গন্ধে আমরা ঘরে থাকতে পারি না।’
তাঁর ভাষ্য, এই আশ্রয়ণ যখন নির্মাণ করা হয়, তখন এখানে খাওয়ার পানি ও গোসল করার জন্য ১৩টি নলকূপ ও একটি পুকুর করে দেওয়া হয়েছিল। ওই পুকুর এখন শুকিয়ে গেছে। ১০টি নলকূপ নষ্ট হয়ে আছে। বাকি তিনটি নলকূপেও ঠিকমতো পানি ওঠে না। প্রশাসনের কোনো লোক আসে না এখানে। সরকারি কোনো অনুদানও দেওয়া হয় না। 
শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এবারের শীতে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করলেও একটি সরকারি কম্বলও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। নির্বাচন-ভোটের সময় হলে আমাদের এখানে প্রার্থীরা আসেন। ভোট শেষ হলে আমাদেরও সবাই ভুলে যান। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা আমাদের দুর্ভোগের কথা শুনে সমাধান করার আশ্বাস দিলেও পরে আর কোনো খবর নেন না।’
ইউএনও মাসফিকা হোসেন জানান, প্রকল্পটি পরিদর্শন করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র পর ব র নলক প

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত