গল্প এখন হয়ে গেছে কনটেন্ট: আবুল হায়াত
Published: 11th, February 2025 GMT
আবুল হায়াত। বরেণ্য অভিনেতা ও নির্মাতা। গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘দায়মুক্তি’। পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় করছেন তিনি। এ সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এমদাদুল হক মিলটন।
বেশ বিরতির পর আপনার অভিনীত সিনেমা ‘দায়মুক্তি’ প্রেক্ষাগৃহে এসেছে। সিনেমাটি নিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়া জানার কী সুযোগ হয়েছে?
লম্বা বিরতির পর নিজের কোনো সিনেমার মুক্তিতে ভালো লাগছে। এটি দেখতে এখনও হলে যাওয়া হয়নি। এ কারণে সরাসরি দর্শক প্রতিক্রিয়া জানা একটু মুশকিল। যারা দেখেছেন, তারা ভালোলাগার কথা জানিয়েছেন।
সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
বৃদ্ধাশ্রমের গল্পকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। অসাধারণ গল্পটি আমাকে অভিনয়ে আগ্রহী করে তুলেছে। নির্মাতা বদিউল আলম খোকন এখানে পিতামাতার প্রতি দায়মুক্তির বিষয়টি বলতে চেয়েছেন। বাবা-মার বয়স হয়ে গেছে, টাকা-পয়সা দিয়ে আলাদা করে দিই। অনেকেই ভাবেন, টাকা-পয়সা দিয়ে দিলাম মুক্তি হয়ে গেল। না, বাবা-মা কী জিনিস, একসঙ্গে থাকার কী উপকারিতা, তা এ সিনেমাতে দেখানো হয়েছে।
অনেকেই বলছেন সিনিয়র অভিনেতারা নাটক, চলচ্চিত্রে এখন উপেক্ষিত। আপনার কী মত?
ঠিকই বলছেন। আমাদের মতো বেশি বয়সের অভিনয়শিল্পীদের বাতিল করে দিয়েছেন নির্মাতারা। বিদেশে এ বয়সের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে সিনেমা হয়। বিশেষভাবে চরিত্র রচনা করে। একটা সময় চলচ্চিত্রে গুরুত্ব দেওয়া হতো সিনিয়রদের। এরপর দেখা গেল, সিনিয়র অভিনয়শিল্পীর চরিত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তারপর একটা ছবি টানানো হয় দেয়ালে। এরপর সবাই পুরো সিনেমায় ওই ছবিটি নিয়ে কান্নাকাটি করে। এভাবেই চরিত্রকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এটি মোটেও ঠিক নয়। একটি ভিতের ওপরই দাঁড়িয়ে থাকে স্থাপনা। ভিতকে কখনও অবহেলা করা উচিত নয়। তাকে যত্ন নিতে হয়।
চলচ্চিত্রের এ সময়কে কীভাবে দেখছেন?
আমি তো এখন আর সিনেমার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নেই। মাঝেমধ্যে অভিনয় করছি। এককথায় বলতে হলে বলব, চলচ্চিত্রের দুরবস্থা চলছে। যারা কাজ জানেন না কিংবা সিনেমার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা নেই, তারাই এখন সিনেমা বানাচ্ছেন। তারা আবার ভাড়া দিচ্ছেন অন্য একজনকে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এটি ই দেখে আসছি। বিগত সরকার একটু চেষ্টা করেছিল। তারা চেষ্টায় সফল হতে পারেনি। হল নির্মাণের জন্য ঋণও দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই ঋণ নেননি। যারা বড় বড় প্রযোজক ছিলেন, তারা টেলিভিশন মিডিয়া কিংবা ওটিটি ওয়ালাদের কাছে ঠিকমতো পাত্তা পাচ্ছেন না। তাদের কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে পৌঁছাতে পারছেন না।
টিভি মিডিয়া নিয়ে কী বলবেন?
গত ৩০ বছর আমি ভিডিও মিডিয়ায়ই কাজ করছি। অভিনয় ও নির্মাণ নিয়ে এখানেই ব্যস্ত। প্রচুর টিভি নাটক হচ্ছে। এখানেও এখন লাইকস ও ভিউজের চল শুরু হয়েছে। একটি গল্প সাকসেসফুল হলে এরই আদলে পর পর নাটক নির্মাণ করছেন নির্মাতরা। এখন আর শিল্পী বাছাই করার কোনো বালাই নেই। গল্প নির্মাতা নিজেই লিখছেন। লেখককে কেউ আর পয়সা দিতে চান না। তারপরেও শুনি নাটকের বাজার নাকি আগের থেকে অনেক ভালো। বাস্তবে তা দেখছি না। এখন সবকিছু ইউটিউবকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ইউটিউব থেকে পয়সা যেভাবে আসে, সেভাবে নাটক বানানো হচ্ছে।
টিভি-সিনেমায় আপনাকে দেখা গেলেও ওটিটিতে একেবারেই অনুপস্থিত। এর কারণ কী?
অভিনয়টাই তো করছি। এখানে আমাকে কেউ ডাকছে না। ডাকলে তো অভিনয়ের প্রসঙ্গ আসে। তারা মনে করছে, আমি অপ্রয়োজনীয়। আমার তো ভিউ আর লাইক নাই। ভিউ ও লাইকের ওপর চলে এগুলো। অভিনয় জানুক আর না জানুক ভিউজ থাকলেই তাদের কাছে চলে। আগে শুনতাম ভালো গল্প বা কাহিনি। এখন গল্প হয়ে গেছে কনটেন্ট। বলা হচ্ছে, কনটেন্ট ভালো দিতে হবে। এগুলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছি না। এসব শুনতে শুনতে হাঁপিয়ে উঠছি।
প্রতি বছর বইমেলায় আপনার নতুন বই আসে। এবার লিখলেন না যে.
..
কিছুদিন আগে নিজের একটি আত্মজীবনী লিখেছি। ওটা লিখতেই আমার অনেক সময় গেছে। মাঝে শারীরিকভাবে অসুস্থও ছিলাম বেশ কিছু দিন। সবকিছু মিলিয়ে আর লেখা হয়নি। ‘রবি পথ’ নামে আত্মজীবনীটিই এবার মেলায় এসেছে। এটি ‘সুবর্ণ’ প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি।
সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।
ঢাকা/এএএম/ইভা