ষাটোর্ধ্ব খলিল আহমদ সিলেটের কবি নজরুল অডিটরিয়ামে কেয়ারটেকার কাম নাইটগার্ডের চাকরি করেন। জেলা প্রশাসনের অধীন মাস্টাররোলে চাকরি তাঁর। প্রতিদিন ৪৫০ টাকা হিসাবে মাস শেষে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা বেতন পান। তবে ১৩ মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। এতে পরিবার নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

সিলেট জেলা প্রশাসনের পরিচালনাধীন নজরুল অডিটরিয়ামের অবস্থান নগরের রিকাবিবাজার এলাকায়। প্রায় ৭০০ আসনবিশিষ্ট এ মিলনায়তনেই মূলত শহরের সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতিসংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে। আর এখানেই ২০২২ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরিতে ঢোকেন খলিল আহমদ। সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীদের কাছে তিনি ‘খলিল মামু’ নামে সুপরিচিত।

গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে অডিটরিয়ামের সামনে খলিলের সঙ্গে কথা হয়। স্ত্রী, তিন মেয়েসহ আটজনের সংসার তাঁর। মূল বাড়ি সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বারখলা এলাকায়। বর্তমানে নগরের বাগবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন।

খলিল বলেন, তাঁর দুই মেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। দুই মেয়ে আর নিজের আয়ে তাঁর সংসার চলে। তবে গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ‘অজানা কারণে’ তাঁর বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখায় বারবার যোগাযোগ করেও বেতন পাচ্ছেন না। কী কারণে তাঁর বেতন বন্ধ হয়ে গেছে, চেষ্টা করে তা–ও জানতে পারেননি।

দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন উল্লেখ করে খলিল আহমদ বলেন, ‘সংসার চালাইতাম পারতাছি না। ঋণের ওপর চলতাছি। ঋণ অই গেছে দেড় লাখ টাকা। খুব কষ্টে আছি। অফিসে (জেলা প্রশাসন) গিয়া দেখা করলে বলে সামনের মাসে দিমু। পরের মাসে দেখা করলে বলে সামনের মাসে দিমু। কিন্তু সামনের মাস আর আয় না। আমার বেতনও হয় না।’

সংসারের খরচের বিষয়ে খলিল বলেন, ঘরভাড়া ১১ হাজার টাকা, খাওয়াবাবদ খরচ গড়ে ১৪ হাজার টাকা। এর বাইরে অন্যান্য খরচ তো আছেই। বেতন বন্ধ হয়ে পড়ায় তাঁর জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। দুই মেয়ের সামান্য আয়ে সংসার চলছে না। বাধ্য হয়ে ঋণ নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন। তবে এখন ঋণও পাচ্ছেন না। বেতন দ্রুত না হলে তাঁকে আরও ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

সিলেটের সংস্কৃতি ও নাট্যব্যক্তিত্ব আমিরুল ইসলাম চৌধুরী (বাবু) মানবিক দিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনকে দ্রুত খলিল আহমদের বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘খলিল কাজের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় অভাব-অনটনে থাকা সত্ত্বেও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।’

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব বিষয়টি আসলে কী ঘটেছে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা

জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতাম।

শুক্রবার সকালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুটি গ্যাসকূপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সিলেটের যেসব এলাকা থেকে গ্যাস উত্তোলন হয় সেসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কি? -এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শিল্প কারখানা যেখানে গ্যাস পাচ্ছে না সেখানে বাসা বাড়িতে গ্যাস দেওয়া অপচয়। নতুন করে আর গৃহস্থালিতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হবে না। কেয়ামত পর্যন্ত এই সুযোগ বন্ধ রাখা উচিত। তবে যেসব এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করা হয়, সেসব এলাকায় স্বল্পমূল্যে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করবে সরকার।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, প্রতিবছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন কমছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানি বেড়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চেষ্টা চলছে।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, কৈলাশটিলা-৭ ও সিলেট-১০ গ্যাস কূপ থেকে থেকে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে গোলাপগঞ্জে কৈলাসটিলা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি উপজেলার পৌর এলাকার কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ডের ৭ নম্বর কূপ এলাকা, বাপেক্সের রিগ বিজয়-১২ ও কৈলাশটিলা ১ নম্বর কূপে ওয়ার্কওভারের নিমিত্ত প্রস্তুতকৃত রিগপ্যাড পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি একই উপজেলাধীন কৈলাশটিলা এমএসটি প্লান্ট পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের (অপারেশন বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. খালিদ আহমেদ, বাপেক্স/এসজিএফএলের প্রকৌশলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেব আহমদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেহসানুল ইসলাম, সেক্রেটারি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনির হোসেন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডের ডিজিএম ফারুক আহমদ, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড এমএসটি প্লান্টের ডিজিএম জাফর রায়হানসহ সংশ্লিষ্ট কূপের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা, আসামি ১৫৯
  • জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা: ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক ও ১৯ সংগঠনের নিন্দা
  • আপেল মাহমুদ অথবা রবিঠাকুরের কাদম্বিনীর গল্প
  • বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
  • জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • মরিচক্ষেতে গ্রেনেড, নিষ্ক্রিয় করলেন সেনাসদস্যরা
  • কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও আবাসিকে গ্যাস দেওয়ার সম্ভাবনা নেই: জ্বালানি উপদেষ্টা