১৩ মাস ধরে বেতন বন্ধ, সংসার চলে না সিলেটের ‘খলিল মামুর’
Published: 11th, February 2025 GMT
ষাটোর্ধ্ব খলিল আহমদ সিলেটের কবি নজরুল অডিটরিয়ামে কেয়ারটেকার কাম নাইটগার্ডের চাকরি করেন। জেলা প্রশাসনের অধীন মাস্টাররোলে চাকরি তাঁর। প্রতিদিন ৪৫০ টাকা হিসাবে মাস শেষে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা বেতন পান। তবে ১৩ মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। এতে পরিবার নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
সিলেট জেলা প্রশাসনের পরিচালনাধীন নজরুল অডিটরিয়ামের অবস্থান নগরের রিকাবিবাজার এলাকায়। প্রায় ৭০০ আসনবিশিষ্ট এ মিলনায়তনেই মূলত শহরের সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতিসংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে। আর এখানেই ২০২২ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরিতে ঢোকেন খলিল আহমদ। সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীদের কাছে তিনি ‘খলিল মামু’ নামে সুপরিচিত।
গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে অডিটরিয়ামের সামনে খলিলের সঙ্গে কথা হয়। স্ত্রী, তিন মেয়েসহ আটজনের সংসার তাঁর। মূল বাড়ি সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বারখলা এলাকায়। বর্তমানে নগরের বাগবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন।
খলিল বলেন, তাঁর দুই মেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। দুই মেয়ে আর নিজের আয়ে তাঁর সংসার চলে। তবে গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ‘অজানা কারণে’ তাঁর বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখায় বারবার যোগাযোগ করেও বেতন পাচ্ছেন না। কী কারণে তাঁর বেতন বন্ধ হয়ে গেছে, চেষ্টা করে তা–ও জানতে পারেননি।
দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন উল্লেখ করে খলিল আহমদ বলেন, ‘সংসার চালাইতাম পারতাছি না। ঋণের ওপর চলতাছি। ঋণ অই গেছে দেড় লাখ টাকা। খুব কষ্টে আছি। অফিসে (জেলা প্রশাসন) গিয়া দেখা করলে বলে সামনের মাসে দিমু। পরের মাসে দেখা করলে বলে সামনের মাসে দিমু। কিন্তু সামনের মাস আর আয় না। আমার বেতনও হয় না।’
সংসারের খরচের বিষয়ে খলিল বলেন, ঘরভাড়া ১১ হাজার টাকা, খাওয়াবাবদ খরচ গড়ে ১৪ হাজার টাকা। এর বাইরে অন্যান্য খরচ তো আছেই। বেতন বন্ধ হয়ে পড়ায় তাঁর জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। দুই মেয়ের সামান্য আয়ে সংসার চলছে না। বাধ্য হয়ে ঋণ নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছেন। তবে এখন ঋণও পাচ্ছেন না। বেতন দ্রুত না হলে তাঁকে আরও ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
সিলেটের সংস্কৃতি ও নাট্যব্যক্তিত্ব আমিরুল ইসলাম চৌধুরী (বাবু) মানবিক দিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনকে দ্রুত খলিল আহমদের বেতন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘খলিল কাজের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় অভাব-অনটনে থাকা সত্ত্বেও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।’
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব বিষয়টি আসলে কী ঘটেছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’
খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’