মূল্যস্ফীতি কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে মুদ্রানীতি। তবে বাংলাদেশের মতো দেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সেটি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি মানেই হচ্ছে দেশে বিনিয়োগ কম হবে। বিনিয়োগ যদি কমে যায়, তাহলে কর্মসংস্থান কমে যাবে। তাই একটার সঙ্গে একটা জড়িত।

বেসরকারি খাতে যখন অর্থের প্রভাব কমবে, তখনই বেসরকারি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উৎপাদনব্যবস্থার প্রায় প্রতিটি কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। দু–একটি ছাড়া প্রায় সব ভোগ্যপণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। এমন দেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করলেই মূল্যস্ফীতি কমে আসবে, সেটির যৌক্তিকতা নেই।

নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, কঠোর আর্থিক নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি গত দুই মাসে কমেছে। কিন্তু বাস্তবে সেটি নয়।

গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমার মূল কারণ শীতের শাকসবজির পর্যাপ্ততা ও কম দাম। বাংলাদেশে শীতকালীন সবজির মৌসুম ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। তারপর সবজির সরবরাহ কমলেই দাম বাড়বে। এবার কিন্তু আমাদের ২০ লাখ টন চালও আমদানি করতে হবে। তাহলে সেখানে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে। বৈদেশিক মুদ্রা যখন এসব খাতে যাবে, তখন টাকার অবমূল্যায়ন হতে পারে। ফলে সামনের মাসগুলো খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়বে নাকি কমবে, সেটি সময়ই বলবে।

সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি যখনই অনুসরণ করা হয়, তখনই সুদের হার বেড়ে যাবে। সুদের হার বাড়লে পণ্য উৎপাদনের খরচও বেড়ে যায়। দেশের পণ্য রপ্তানির জন্য যে ব্যবস্থাপনা দরকার, সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে যায়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারিত মুদ্রানীতি হলেও যে বিনিয়োগ হতো তা নয়। তবে উৎপাদনমুখী খাত প্রয়োজনীয় চলতি মূলধনের জোগান পেত। তাতে অর্থনীতিতে গতি আসত বলে আমি মনে করি।

আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ