পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদিকে আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান।

রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনের সময় ইমরান খান প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, ‘পুরো জাতি আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।’

ইমরান খান এ সময় আরও বলেন, তিনি পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে দুটি চিঠি লিখেছেন। এর কারণ, পাকিস্তানের সব গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

পিটিআই আইনপ্রণেতা ও সুপ্রিম কোর্টের দুই জ্যেষ্ঠ বিচারকের প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাকিস্তানের জুডিশিয়াল কমিশন সুপ্রিম কোর্টে ছয়জন নতুন বিচারকের নিয়োগ অনুমোদন দিচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইমরান খান এ মন্তব্য করেছেন।

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর একাধিক মামলায় কারাদণ্ড হয়েছে ইমরান খানের। ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ইমরান খান বর্তমান ক্ষমতাসীন পাকিস্তানের জোট সরকারের সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও মন্ত্রীরা সব ভুয়া। পার্লামেন্ট থেকে তাই কোনো আশা নেই। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ফল চুরি করার অভিযোগ তুলে ইমরান বলেন, পার্লামেন্ট কার্যকর নয়। এটা প্রতারণামূলক পার্লামেন্ট।

পিটিআই ও ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে ইমরান খান বলেন, এ আলোচনা নিয়ে তাঁর কোনো প্রত্যাশা নেই। তিনি তাঁর দলের সদস্যদের বলেছেন, এ আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। সরকারের সঙ্গে গত বছরের ৯ মে ও ২৬ নভেম্বরের বিক্ষোভ ঘিরে যে সহিংসতা হয়েছিল, সে বিষয়ে তদন্ত চেয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো সহযোগিতা করছে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইমর ন খ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দোয়ার ফজিলত ও আদব

দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)

আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)

মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)

‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)

দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)

নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)

দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।

হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ