সাদুল্লাপুরে বোরো জমিতে সেচের মূল্য নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন কৃষক ও নলকূপ মালিকরা। একপক্ষ বলছেন সেচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। অন্যপক্ষের দাবি পাঁচ বছর আগের মূল্য তালিকা মেনে সেচ সুবিধা দিলে লোকসান গুনতে হবে তাদের। তারা তালিকা হালনাগাদের দাবি জানিয়েছেন। দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ফসল আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার জন্য সরকারিভাবে ২০২০ সালে সর্বশেষ সেচ চার্জ নির্ধারণ হয়। সেচ কমিটি ৩৩ শতাংশে (এক বিঘা) জমি ধরে  মূল্য তালিকা নির্ধারণ করেন। রসুলপুর, নলডাঙ্গা, দামোদরপুর, কামারপাড়া, জামালপুর, বনগ্রাম, ভাতগ্রাম, ফরিদপুর ও ক্ষোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নে প্রতি বিঘায় সেচ চার্জ ১ হাজার ২০০ টাকা। লাল মাটির খিয়েরি এলাকার হওয়ায় ধাপেরহাট ও ইদিলপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৮০০ টাকা সেচমূল্য নির্ধারণ করা হয়। জয়েনপুর গ্রামের কৃষক মোজাফ্‌ফর হোসেন এবার নলকূপ মালিককে বিঘাপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছেন। প্রতি বিঘায় সেচ মূল্য ১ হাজার ৮০০ টাকা হলেও ইসলামপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বিঘাপ্রতি ৪ হাজার ৩০০ টাকায় চুক্তি করেছেন নলকূপ মালিকের সঙ্গে।
কৃষকদের অভিযোগ, জমিতে সেচ নিতে নলকূপ মালিকদের কাছে জিম্মি তারা। নলকূপ মালিকদের চাহিদামতো অর্থ না দিলে সেচ মেলে না সময়মতো। বাধ্য হয়ে তাদের সরকার নির্ধারণ করা মূল্যের দ্বিগুণের বেশি টাকা দিতে হয়। এতে ফসল উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এ সসম্যা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় সেচ নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে বলছেন তারা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও স্থানীয় ফিলিং স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ইরি-বোরো সেচ পাম্পের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ছিল ৪ টাকা ১৬ পয়সা ও প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ছিল ৬৫ টাকা ২০ পয়সা। বর্তমানে বিদ্যুতের মূল্য বেড়ে ৫ টাকা ২৫ পয়সায় ও ডিজেলের মূল্য ১০৫ টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রতি লিটার ডিজেলে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা ১ পয়সা। 
কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের নলকূপ মালিক মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার সেচের বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করেনি। পাঁচ বছর আগের মূল্য তালিকায় সেচ দিলে, নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে। তাই হিসাবনিকাশ করেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একই কথা বলেছেন জয়েনপুর গ্রামের সেচ পাম্পের ম্যানেজার মোস্তাফিজার রহমান।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। এসব মাঠে সেচ কাজে ব্যবহার হবে ৬ হাজার ৭৩৬টি নলকূপ। এর মধ্যে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ ১১৬টি, অগভীর নলকূপ ১ হাজার ৩০৫টি ও এলএলপি নলকূপ ২৫০টি। সৌরবিদ্যুৎচালিত নলকূপ ১৪টি। ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপ ৫ হাজার ৫১টি। বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় মালিকরা এসব নলকূপ দেখভাল করে।
নলকূপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘সেচ কমিটি’ হালনাগাদ সেচ চার্জ নির্ধারণ না করলে কৃষকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়তেই থাকবে নলকূপ মালিকদের। তাই বিষয়টি নিয়ে সেচ কমিটিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 
এদিকে সেচের ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব এড়াতে নিজেই বৈদ্যুতিক মোটর কিনেছেন বলে জানান কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান। তবে একই গ্রামের বর্গাচাষি আসাদুল হক সরকারের সেচ চার্জ নির্ধারণের বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তাই নলকূপ মালিক যেভাবে ভাড়া চান, সেভাবেই পরিশোধ করেন। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, নলকূপ মালিকরা কৃষকদের সঙ্গে বসে বাড়তি অর্থ নিলেই সমস্যা নেই। কিন্তু তারা সরকারি মূল্য তালিকার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি চার্জ নিচ্ছেন। প্রতি বিঘায় সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে এলাকাভেদে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এভাবে টাকা নিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 
উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, জরিপ কার্যক্রম চালানোর পর সেচের হালনাগাদ মূল্য তালিকা নির্ধারণ করা হবে। আগামী সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে সেচ মালিকদের। 
সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে না থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় সেচ মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। কৃষকরা দেশের প্রাণ। তাদের সুবিধা আগে দেখতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নলক প ম ল ক স চ কম ট দ বন দ ব র নলক প উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় উড়োজাহাজের ভয়াবহ ১০টি দুর্ঘটনা

কোঝিকোড় দুর্ঘটনা (২০২০)

২০২০ সালের ৭ আগস্ট এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি ফ্লাইট কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৃষ্টিভেজা রানওয়েতে ছিটকে পড়ে এবং দুই ভাগ হয়ে যায়। এতে ২০জন নিহত হন, আহত হন বহু যাত্রী। খারাপ আবহাওয়া, কম দৃশ্যমানতা এবং টেবলটপ রানওয়ে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল।

ম্যাঙ্গালুরু দুর্ঘটনা (২০১০)

২০১০ সালের ২২ মে দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট ৮১২ ম্যাঙ্গালুরুতে অবতরণের সময় রানওয়ে ছাড়িয়ে একটি খাদে পড়ে যায়। বিমানে থাকা ১৬৬ জনের মধ্যে ১৫৮ জন নিহত হন। রানওয়েটি ‘টেবলটপ’ হওয়ায় দুর্ঘটনার মাত্রা ভয়াবহ হয়। টেবলটপ রানওয়ে হলো এমন একটি বিমানবন্দর রানওয়ে, যা একটি পাহাড় বা উঁচু মালভূমির ওপর অবস্থিত এবং চারপাশে গভীর খাদ বা ঢাল থাকে।

পাটনা দুর্ঘটনা (২০০০)

২০০০ সালের ১৭ জুলাই কলকাতা থেকে দিল্লিগামী অ্যালায়েন্স এয়ারের একটি ফ্লাইট পাটনার একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের ৫৫ যাত্রী ও ভূমিতে থাকা ৫ জনসহ মোট ৬০ জন নিহত হন। অবতরণের সময় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১২ জুন, ভারত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি
  • কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের পিসিআর ল্যাবে চুরি, খোয়া গেছে ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ
  • কুষ্টিয়ার একমাত্র পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি
  • ভারতীয় উড়োজাহাজের ভয়াবহ ১০টি দুর্ঘটনা