সেচ নিয়ে দ্বন্দ্বে চাষি-নলকূপ মালিক
Published: 13th, February 2025 GMT
সাদুল্লাপুরে বোরো জমিতে সেচের মূল্য নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন কৃষক ও নলকূপ মালিকরা। একপক্ষ বলছেন সেচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। অন্যপক্ষের দাবি পাঁচ বছর আগের মূল্য তালিকা মেনে সেচ সুবিধা দিলে লোকসান গুনতে হবে তাদের। তারা তালিকা হালনাগাদের দাবি জানিয়েছেন। দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ফসল আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার জন্য সরকারিভাবে ২০২০ সালে সর্বশেষ সেচ চার্জ নির্ধারণ হয়। সেচ কমিটি ৩৩ শতাংশে (এক বিঘা) জমি ধরে মূল্য তালিকা নির্ধারণ করেন। রসুলপুর, নলডাঙ্গা, দামোদরপুর, কামারপাড়া, জামালপুর, বনগ্রাম, ভাতগ্রাম, ফরিদপুর ও ক্ষোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নে প্রতি বিঘায় সেচ চার্জ ১ হাজার ২০০ টাকা। লাল মাটির খিয়েরি এলাকার হওয়ায় ধাপেরহাট ও ইদিলপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৮০০ টাকা সেচমূল্য নির্ধারণ করা হয়। জয়েনপুর গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন এবার নলকূপ মালিককে বিঘাপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছেন। প্রতি বিঘায় সেচ মূল্য ১ হাজার ৮০০ টাকা হলেও ইসলামপুর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বিঘাপ্রতি ৪ হাজার ৩০০ টাকায় চুক্তি করেছেন নলকূপ মালিকের সঙ্গে।
কৃষকদের অভিযোগ, জমিতে সেচ নিতে নলকূপ মালিকদের কাছে জিম্মি তারা। নলকূপ মালিকদের চাহিদামতো অর্থ না দিলে সেচ মেলে না সময়মতো। বাধ্য হয়ে তাদের সরকার নির্ধারণ করা মূল্যের দ্বিগুণের বেশি টাকা দিতে হয়। এতে ফসল উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এ সসম্যা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ না থাকায় সেচ নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে বলছেন তারা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও স্থানীয় ফিলিং স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ইরি-বোরো সেচ পাম্পের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ছিল ৪ টাকা ১৬ পয়সা ও প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ছিল ৬৫ টাকা ২০ পয়সা। বর্তমানে বিদ্যুতের মূল্য বেড়ে ৫ টাকা ২৫ পয়সায় ও ডিজেলের মূল্য ১০৫ টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রতি লিটার ডিজেলে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা ১ পয়সা।
কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের নলকূপ মালিক মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার সেচের বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করেনি। পাঁচ বছর আগের মূল্য তালিকায় সেচ দিলে, নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে। তাই হিসাবনিকাশ করেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একই কথা বলেছেন জয়েনপুর গ্রামের সেচ পাম্পের ম্যানেজার মোস্তাফিজার রহমান।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। এসব মাঠে সেচ কাজে ব্যবহার হবে ৬ হাজার ৭৩৬টি নলকূপ। এর মধ্যে বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ ১১৬টি, অগভীর নলকূপ ১ হাজার ৩০৫টি ও এলএলপি নলকূপ ২৫০টি। সৌরবিদ্যুৎচালিত নলকূপ ১৪টি। ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপ ৫ হাজার ৫১টি। বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় মালিকরা এসব নলকূপ দেখভাল করে।
নলকূপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘সেচ কমিটি’ হালনাগাদ সেচ চার্জ নির্ধারণ না করলে কৃষকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়তেই থাকবে নলকূপ মালিকদের। তাই বিষয়টি নিয়ে সেচ কমিটিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে সেচের ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব এড়াতে নিজেই বৈদ্যুতিক মোটর কিনেছেন বলে জানান কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান। তবে একই গ্রামের বর্গাচাষি আসাদুল হক সরকারের সেচ চার্জ নির্ধারণের বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তাই নলকূপ মালিক যেভাবে ভাড়া চান, সেভাবেই পরিশোধ করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, নলকূপ মালিকরা কৃষকদের সঙ্গে বসে বাড়তি অর্থ নিলেই সমস্যা নেই। কিন্তু তারা সরকারি মূল্য তালিকার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি চার্জ নিচ্ছেন। প্রতি বিঘায় সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে এলাকাভেদে ৪ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এভাবে টাকা নিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, জরিপ কার্যক্রম চালানোর পর সেচের হালনাগাদ মূল্য তালিকা নির্ধারণ করা হবে। আগামী সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে সেচ মালিকদের।
সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে না থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় সেচ মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। কৃষকরা দেশের প্রাণ। তাদের সুবিধা আগে দেখতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নলক প ম ল ক স চ কম ট দ বন দ ব র নলক প উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’, শিক্ষার্থীরা পাবেন ২ ক্যাটাগরিতে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি ২০২৫’ নামের একটি শিক্ষাবৃত্তি। এর আওতায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল, প্রান্তিক ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা আর্থিক সহায়তা পাবেন। এ বৃত্তির আবেদন শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অফিস আদেশে, বৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠাতে কলেজগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাবৃত্তির জন্য প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের শিক্ষার্থীকে বিবেচনায় নেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে প্রথম ক্যাটাগরিতে পড়বেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী এবং দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে পড়বেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল, প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এই বৃত্তি পেতে আবেদন করতে হবে কলেজের মাধ্যমে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পোর্টালে লগইন করে ‘শিক্ষাবৃত্তি তথ্যছক’ অপশনে গিয়ে তথ্য আপলোড করতে হবে।
আরও পড়ুনএকাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন শুরু, ফি-মেধা কোটা-ভর্তির যোগ্যতা-গ্রুপ নির্বাচন যেভাবে১ ঘণ্টা আগেশিক্ষাবৃত্তির জন্য স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ও স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়নরত যেসব নিয়মিত শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবেন, তাঁদের তালিকা নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষ ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (পাস) তৃতীয় বর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ (তৃতীয় বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে), মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে (অনার্সের ফলাফলের ভিত্তিতে) শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়ুনকমনওয়েলথ ফেলোশিপে আবেদনের সুযোগ, মাসে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সঙ্গে নানা সুবিধা৪ ঘণ্টা আগেবিশ্ববিদ্যালয় জানায়, শিক্ষার্থীদের মনোনয়ন ও যাচাই-বাছাই কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও শিক্ষাবৃত্তির নিয়মাবলি ওয়েবসাইটের কলেজ পোর্টালের ‘শিক্ষাবৃত্তি’ অপশনে পাওয়া যাবে।
এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ১ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২২ ঘণ্টা আগে