১ হাজার ৪১৭ ডলার খরচ করে প্রিয় বিড়ালকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেলেন জ্যোতি
Published: 14th, February 2025 GMT
বছর সাতেক আগের কথা! ১০–১২ দিন বয়সী বিড়ালছানাটি একাকী কোকাচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের এক কোণে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রী শাহারিন আকবার জ্যোতি। ছানাটিকে কোলে তুলে নেন। আদর যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে তিলে তিলে বড় করে তোলেন ছানাটিকে। নাম দেন মলি।
জ্যোতির ভাষায়, এই আট বছরে তিনি কখনোই মলিকে আলাদা করতে পারেননি। আলাদা হলেই মলি তাঁর জন্য চোখের পানি ফেলে সারাক্ষণ। বিয়ের পর তাই মলিকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে গেছেন। এরপর চলে গেলেন (জ্যোতি) যুক্তরাষ্ট্রে; কিন্তু বিড়ালের টানে আবার দেশে ফিরতে হলো। তারপর তাকে সঙ্গে করেই পাড়ি জমিয়েছেন ওকলাহোমা। তা–ও যেনতেনভাবে নয়। উড়োজাহাজে চড়ে মলিকে বিদেশ নিয়ে যেত পোহাতে হয়েছে নানা ভোগান্তি। খরচ হয়েছে অনেক টাকা।
আবাসিক হলে বিপত্তি
জ্যোতিদের (২৯) বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের ছবিঘর সিনেমা হল পাড়ায় (গীতাঞ্জলি সড়ক)। বাবা গোলাম আকবারের তিন মেয়ের মধ্যে জ্যোতি ছোট। বড় দুই বোনও যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। জ্যোতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ করেছেন। এখন নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। বিয়ে করেছেন ঢাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলামকে। তিনি বুয়েট থেকে পাস করে যুক্তরাষ্ট্রে খ্যাতনামা একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
জ্যোতি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি থাকতেন রোকেয়া হলে। ২০১৭ সালে তিনি তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। একদিন খবর পান, মুহসীন হলে একটি বিড়ালের বাচ্চা পড়ে আছে। ১০–১২ দিন বয়সী ছানাটি দেখতে তিনি কয়েকজন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে মুহসীন হলে যান। বিড়াল ছানাটিকে কোলে তুলে নেন।
বাচ্চাটি নিয়ে হলে ফেরেন জ্যোতি। সিদ্ধান্ত নেন একে লালনপালন করবেন। বিড়াল ছানাটির নাম দেন মলি। সেবাশুশ্রূষা পেয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে ছানাটি। কিছুদিন পর হলের ছাত্রীরা আপত্তি জানালেন। হলে বিড়াল পালা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও গেল। জ্যোতিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো, হলে বিড়াল পালা যাবে না। তিনি মলিকে কোলে নিয়ে ঢাকায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কদিন সেখানে থাকার পর চলে যান আরেক বান্ধবীর বাড়ি। সেখানে থাকা অবস্থায় খবর পান, হলের চেনা–পরিচিতজনেরা তাঁর জন্য দুঃখ করছেন। তাঁরা মলিকে নিয়েই তাঁকে হলে ফেরার অনুরোধ করেন।
মন খারাপ করে থাকত
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে ২০২০ সালে মলিকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন জ্যোতি। জ্যোতির মা রাজিয়া সুলতানা জানান, বাড়িতে এসে জ্যোতি বিড়ালটিকে আদর–যত্নে রাখত। তার সব ভালোবাসা ছিল মলিকে ঘিরে। পরের বছর জ্যোতির বিয়ে হয়ে যায়। মলিকে রাখার দায়িত্ব তাঁর (রাজিয়া) ওপর পড়ে। তিনি খাওয়ানো, গোসল করানো থেকে শুরু করে সবই করেছেন; কিন্তু জ্যোতিকে ছাড়া মলি স্বাভাবিক ছিল না। মন খারাপ করে বসে থাকত। কিছুদিন পর বিড়ালটিকে শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ে যান জ্যোতি।
রাজিয়া সুলতানা আরও জানান, ২০২২ সালের শুরুর দিকে মেয়ে ও জামাতা দুজনে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। যাওয়ার সময় মলিকে তাঁর কাছে রেখে যান। জামাতা সেখানে চাকরি নেন, আর মেয়ে পিএইচডি করছেন। মেয়ের রেখে যাওয়া বিড়ালটির দেখভাল তিনিই করছিলেন; কিন্তু বিড়ালটি চুপচাপ বসে থাকত, ঠিকমতো খেত না। তিনি যত্নআত্তির ঘাটতি রাখেননি; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। উপায়ান্তর না পেয়ে বিষয়টি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মেয়েকে জানান। মলির দুরবস্থার কথা শুনে এবার জ্যোতির মন খারাপ হয়। এদিকে দিন গড়ায়; কিন্তু বিড়ালটি তেমনি চুপচাপ বসে থাকে। খাবারদাবারও খায় না তেমন। শেষে জ্যোতি দেশে এসে মলিকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর দেশে আসেন জ্যোতি।
বিদেশে নিতে ঝক্কি
জ্যোতি বলেন, দেশে এসে কীভাবে মলিকে নিয়ে যাব সে সম্পর্কে জানা–বোঝার চেষ্টা করেন। সহযোগিতা করেন পরিচিত এক প্রাণী চিকিৎসক সোহাগ তালুকদার। মাইক্রোচিপ, স্বাস্থ্যসনদ, টিকার কার্ড, পেট পাসপোর্ট—সবই তিনি করে দেন। এভাবে ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই তিনি মলিকে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে যান।
ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত মলি যায় উড়োজাহাজের কার্গোতে। জ্যোতি বিশেষ একটি বাক্সের মধ্যে খাবার ও পানির বোতল শক্ত করে বসিয়ে দিয়েছিলেন। মলিকে বিশেষভাবে নিয়ে আসতে জ্যোতির প্রায় ১ হাজার ৪১৭ ডলার খরচ হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের বড় দুই আপু নাদিয়া ও চৈতিকে ধন্যবাদ জানালেন জ্যোতি। বললেন, তাঁরা না থাকলে মলিকে পেতেন না। মলিকে বড় করে তোলা তাঁর পক্ষে কষ্টকর হতো। তিনি জানান, এ পর্যন্ত মলি তিন দফায় ১০টি বাচ্চা দিয়েছে। বাচ্চাগুলো তাঁর চেনাপরিচিতজনদের দিয়ে দিয়েছেন।
জ্যোতিকে অনেকে জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশ থেকে এত কষ্ট করে কেন একটি বিড়াল আনলেন? যুক্তরাষ্ট্র থেকেই তো একটি পার্সিয়ান বিড়াল নিতে পারতেন। স্মিত হেসে জ্যোতি বলেন, ‘ভালোবাসা তো ভালোবাসাই। এখানে দেশি বা বিদেশি বিষয় না। আমি ভালোবেসেছি মলিকে, যে আমার সঙ্গে সাত বছর ধরে ছায়াসঙ্গী হয়ে আছে।’
আজাদ রহমান, ঝিনাইদহ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।