বছর সাতেক আগের কথা! ১০–১২ দিন বয়সী বিড়ালছানাটি একাকী কোকাচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের এক কোণে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রী শাহারিন আকবার জ্যোতি। ছানাটিকে কোলে তুলে নেন। আদর যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে তিলে তিলে বড় করে তোলেন ছানাটিকে। নাম দেন মলি।

জ্যোতির ভাষায়, এই আট বছরে তিনি কখনোই মলিকে আলাদা করতে পারেননি। আলাদা হলেই মলি তাঁর জন্য চোখের পানি ফেলে সারাক্ষণ। বিয়ের পর তাই মলিকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে গেছেন। এরপর চলে গেলেন (জ্যোতি) যুক্তরাষ্ট্রে; কিন্তু বিড়ালের টানে আবার দেশে ফিরতে হলো। তারপর তাকে সঙ্গে করেই পাড়ি জমিয়েছেন ওকলাহোমা। তা–ও যেনতেনভাবে নয়। উড়োজাহাজে চড়ে মলিকে বিদেশ নিয়ে যেত পোহাতে হয়েছে নানা ভোগান্তি। খরচ হয়েছে অনেক টাকা।

আবাসিক হলে বিপত্তি

জ্যোতিদের (২৯) বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের ছবিঘর সিনেমা হল পাড়ায় (গীতাঞ্জলি সড়ক)। বাবা গোলাম আকবারের তিন মেয়ের মধ্যে জ্যোতি ছোট। বড় দুই বোনও যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। জ্যোতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ করেছেন। এখন নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। বিয়ে করেছেন ঢাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলামকে। তিনি বুয়েট থেকে পাস করে যুক্তরাষ্ট্রে খ্যাতনামা একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

জ্যোতি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি থাকতেন রোকেয়া হলে। ২০১৭ সালে তিনি তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। একদিন খবর পান, মুহসীন হলে একটি বিড়ালের বাচ্চা পড়ে আছে। ১০–১২ দিন বয়সী ছানাটি দেখতে তিনি কয়েকজন সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে মুহসীন হলে যান। বিড়াল ছানাটিকে কোলে তুলে নেন।

বাচ্চাটি নিয়ে হলে ফেরেন জ্যোতি। সিদ্ধান্ত নেন একে লালনপালন করবেন। বিড়াল ছানাটির নাম দেন মলি। সেবাশুশ্রূষা পেয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে ছানাটি। কিছুদিন পর হলের ছাত্রীরা আপত্তি জানালেন। হলে বিড়াল পালা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও গেল। জ্যোতিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো, হলে বিড়াল পালা যাবে না। তিনি মলিকে কোলে নিয়ে ঢাকায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কদিন সেখানে থাকার পর চলে যান আরেক বান্ধবীর বাড়ি। সেখানে থাকা অবস্থায় খবর পান, হলের চেনা–পরিচিতজনেরা তাঁর জন্য দুঃখ করছেন। তাঁরা মলিকে নিয়েই তাঁকে হলে ফেরার অনুরোধ করেন।

মন খারাপ করে থাকত

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে ২০২০ সালে মলিকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন জ্যোতি। জ্যোতির মা রাজিয়া সুলতানা জানান, বাড়িতে এসে জ্যোতি বিড়ালটিকে আদর–যত্নে রাখত। তার সব ভালোবাসা ছিল মলিকে ঘিরে। পরের বছর জ্যোতির বিয়ে হয়ে যায়। মলিকে রাখার দায়িত্ব তাঁর (রাজিয়া) ওপর পড়ে। তিনি খাওয়ানো, গোসল করানো থেকে শুরু করে সবই করেছেন; কিন্তু জ্যোতিকে ছাড়া মলি স্বাভাবিক ছিল না। মন খারাপ করে বসে থাকত। কিছুদিন পর বিড়ালটিকে শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ে যান জ্যোতি।

রাজিয়া সুলতানা আরও জানান, ২০২২ সালের শুরুর দিকে মেয়ে ও জামাতা দুজনে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। যাওয়ার সময় মলিকে তাঁর কাছে রেখে যান। জামাতা সেখানে চাকরি নেন, আর মেয়ে পিএইচডি করছেন। মেয়ের রেখে যাওয়া বিড়ালটির দেখভাল তিনিই করছিলেন; কিন্তু বিড়ালটি চুপচাপ বসে থাকত, ঠিকমতো খেত না। তিনি যত্নআত্তির ঘাটতি রাখেননি; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। উপায়ান্তর না পেয়ে বিষয়টি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মেয়েকে জানান। মলির দুরবস্থার কথা শুনে এবার জ্যোতির মন খারাপ হয়। এদিকে দিন গড়ায়; কিন্তু বিড়ালটি তেমনি চুপচাপ বসে থাকে। খাবারদাবারও খায় না তেমন। শেষে জ্যোতি দেশে এসে মলিকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর দেশে আসেন জ্যোতি।

বিদেশে নিতে ঝক্কি

জ্যোতি বলেন, দেশে এসে কীভাবে মলিকে নিয়ে যাব সে সম্পর্কে জানা–বোঝার চেষ্টা করেন। সহযোগিতা করেন পরিচিত এক প্রাণী চিকিৎসক সোহাগ তালুকদার। মাইক্রোচিপ, স্বাস্থ্যসনদ, টিকার কার্ড, পেট পাসপোর্ট—সবই তিনি করে দেন। এভাবে ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই তিনি মলিকে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে যান।

ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত মলি যায় উড়োজাহাজের কার্গোতে। জ্যোতি বিশেষ একটি বাক্সের মধ্যে খাবার ও পানির বোতল শক্ত করে বসিয়ে দিয়েছিলেন। মলিকে বিশেষভাবে নিয়ে আসতে জ্যোতির প্রায় ১ হাজার ৪১৭ ডলার খরচ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের বড় দুই আপু নাদিয়া ও চৈতিকে ধন্যবাদ জানালেন জ্যোতি। বললেন, তাঁরা না থাকলে মলিকে পেতেন না। মলিকে বড় করে তোলা তাঁর পক্ষে কষ্টকর হতো। তিনি জানান, এ পর্যন্ত মলি তিন দফায় ১০টি বাচ্চা দিয়েছে। বাচ্চাগুলো তাঁর চেনাপরিচিতজনদের দিয়ে দিয়েছেন।

জ্যোতিকে অনেকে জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশ থেকে এত কষ্ট করে কেন একটি বিড়াল আনলেন? যুক্তরাষ্ট্র থেকেই তো একটি পার্সিয়ান বিড়াল নিতে পারতেন। স্মিত হেসে জ্যোতি বলেন, ‘ভালোবাসা তো ভালোবাসাই। এখানে দেশি বা বিদেশি বিষয় না। আমি ভালোবেসেছি মলিকে, যে আমার সঙ্গে সাত বছর ধরে ছায়াসঙ্গী হয়ে আছে।’

আজাদ রহমান, ঝিনাইদহ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা

লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনে পা রাখেন পিয়া বিপাশা। এরপর অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও, নাটক ও সিনেমায়। কিন্তু হুট করেই নাই হয়ে গেলেন। পরে জানা গেল অভিনেত্রী আমেরিকায়। গেল পাঁচ বছর সেখানেই বাস করছেন তিনি। সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যমে প্রবাসজীবনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

পিয়া বিপাশা জানান, একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁর প্রেম ও ভালোবাসা তৈরি হয়। তারপর তাঁরা বিয়ে করেন। দুজনে মিলে বিয়ে করলেও আনুষ্ঠানিকতা সারেননি। চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নেওয়ার ইচ্ছা।

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘বাংলাদেশে ভালো লাগত না। কারণ, লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটা সিনেমা করার কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর হয়নি। এরপর আমার মিডিয়ায় কাজ করার ইচ্ছাই নষ্ট হয়ে যায়। আমি আসলে কাজ করতে চেয়েছিলাম টাকা কামানোর জন্য। কাজ না করতে পারলে টাকা কামাব কী করে। তাই সিদ্ধান্ত নিই অন্য কিছু করার।’

বিপাশার কথায়, ‘টাকা রোজগারের জন্য আমি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করেছিলাম। কারণ, আমার একটা মেয়ে ছিল। মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকার বিষয় ছিল। পরে দেখলাম, যেভাবে কাজ হয়, আমাকে দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমেরিকায় চলে আসার। এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। অনেক টাকাও আয় করছি।’

পিয়া বিপাশা বলেন, ‘সত্যি বলতে এখন আমার এমন অবস্থা, টাকা ইনকাম না করলেও হয়। যতটুকুই করি, আমার মেয়ে ও হাজব্যান্ড ওরাই বলে। আমার এখন আর কোনো স্বপ্ন নেই। যা চেয়েছি, গত পাঁচ বছরে সবই পেয়েছি। টাকাপয়সা, সুন্দর জীবন, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ভালো স্বামী—সবই আমার হয়েছে। টাকা নিয়ে এখন কোনো চিন্তা নেই আমার—যা আয় করি, তা ব্যয় করার সময় পাই না।’ 

পিয়া বিপাশা জানান, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে বিভিন্ন পণ্যের যেসব পোস্ট করেন, তার জন্য বেশ ভালো সম্মানী পান। তাঁর দাবি, এই সম্মানী কখনো দুই হাজার ডলার, আবার কখনো তিন হাজার ডলারের মধ্যে।

২০১৩ সালে ‘দ্বিতীয় মাত্র’ নাটকে তাহসান খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে পছন্দ করতেন। বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার চরিত্রে নিজেকে কল্পনাও করতেন। বড় পর্দায়ও অভিনয় করেছিলেন। ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’ নামের সেই ছবি মুক্তি পায়। এরপর ‘রাজনীতি’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পরে সেই ছবিতে পিয়া বিপাশার পরিবর্তে অপু বিশ্বাস অভিনয় করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট, মিরাজ ধন্যবাদ দিলেন ৬ জনকে
  • পেশায় বাসচালক, আড়ালে করেন ইয়াবার কারবার
  • ঢাকায় চালান পৌঁছে প্রতি মাসে পান ৬ লাখ টাকা
  • ১৭ মাস পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয় বাংলাদেশের
  • নদীতে মিলল স্কুলছাত্রের লাশ, চার সহপাঠী আটক
  • টাকার জন্য দেশে ছেড়েছি, এখন টাকা খরচের সময় নেই: পিয়া বিপাশা
  • মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিদেশ চলে যান পিয়া বিপাশা