উচ্চশব্দে অতিষ্ঠ পাবিপ্রবির আবাসিক শিক্ষার্থীরা
Published: 15th, February 2025 GMT
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) মুক্তমঞ্চে বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক সংগঠন, ক্লাবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে গান-বাজনা এখন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ ও আবাসিক হল পাশাপাশি হওয়ায় উচ্চশব্দের এসব গান-বাজনা হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চরমভাবে ব্যাহত করছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলসংলগ্ন কবি বন্দে আলী মিঞাঁ মুক্তমঞ্চে প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত উচ্চশব্দে গান-বাজনার ধুম লেগেই থাকে। এর মধ্যে অনেক সময় অশ্লীল গানের আধিক্যও থাকে। এতে করে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং ঘুম চরমভাবে ব্যাহত হয়। এমনকি অনেকে তীব্র মাথাব্যথা ও অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন।
বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ জানিয়েও কোন কার্যকর সমাধান পাননি। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং দ্রুত এ সমস্যার সমাধান দাবি করেছেন।
হলের থাকা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, “আমাদের হলের পাশে মুক্তমঞ্চে প্রায় প্রতিদিনই বিকেল থেকে উচ্চশব্দে গান-বাজনা শুরু হয়, যা গভীর পর্যন্ত চলতে থাকে। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় এটা আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় এমন হয়, পড়ার টেবিলে বসে থাকলেও শব্দের কারণে মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয় না; মাথা ব্যাথা শুরু হয়। সারাদিন ক্লাস করে যখন হলে ফিরে একটু বিশ্রাম নিতে চাই, তখনই এই শব্দ দূষণ সহ্য করতে হয়।”
তিনি বলেন, “সেখানে বাজানো কিছু গান খুবই অশোভন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের সঙ্গে এসব মানানসই নয়। বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি। বরং দিন দিন শব্দের মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে।”
কম্পিউটার অ্যান্ড সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রতন আহমেদ বলেন, “আমার ঘুম খুব সংবেদনশীল। সামান্য শব্দ হলেই ঘুম থেকে জেগে যাই। অথচ প্রতিদিনই উচ্চশব্দে গান বাজানো হয়, যা ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে পরদিন ক্লাসে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়। প্রায়ই ক্লাসে গিয়ে মাথা ঝিম ঝিম করে, কোনো কিছু ঠিকমতো বুঝতে পারি না।”
তিনি বলেন, “শব্দ দূষণের কারণে মাঝে মাঝে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। মাথা ধরে আসে, কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পরিবেশ যদি শিক্ষার অনুকূলে না থাকে, তাহলে আমরা কোথায় পড়াশোনা করব?”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.
তিনি বলেন, “হলের শিক্ষার্থীরা ফোন দিয়ে অভিযোগ করে। বিশেষ করে হলের নামাজের সময়েও এসব চলে। প্রোগ্রামের পরিচালনায় থাকা শিক্ষার্থীদের আমি বলে দেয়, একটা নিদিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে এসব করতে। তারপরও আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করি খুব দ্রুত সমাধান করতে পারব।”
ঢাকা/আতিক/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা
ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।
ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।
ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।
গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে। এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।