আগ্রহ বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারে, লেনদেনও বেড়েছে
Published: 16th, February 2025 GMT
শেয়ারবাজারে আবারও লেনদেনে শীর্ষ পর্যায়ে উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্যাংকটি। আজ ঢাকার বাজারের মোট লেনদেনের সোয়া ৩ শতাংশই ছিল ব্যাংকটির দখলে।
বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামনে ব্র্যাক ব্যাংকসহ ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের ঘোষণা রয়েছে। গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত হিসাব বছর শেষে ব্যাংকগুলো এ লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। সাধারণত মার্চ–এপ্রিলে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশের ঘোষণা আসে। লভ্যাংশের ঘোষণা সামনে রেখে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাড়ে ভালো মানের ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি।
ব্র্যাক ব্যাংক গত বছরের প্রথম ৯ মাসের (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ব্যাংকটির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকটি ৮৭১ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে এ মুনাফার পরিমাণ ছিল ৫২৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মুনাফার এ তথ্য ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তুলেছে বলে মনে করছেন ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জানতে চাইলে ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউসমালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্র্যাক ব্যাংক খুব ভালো মুনাফা করেছে। শেষ তিন মাসে এ মুনাফা আরও বাড়বে। তাই বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, বছর শেষে ব্যাংকটি ভালো মুনাফা ঘোষণা করতে পারে। এ কারণে ব্যাংকটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তাতে বাড়ছে লেনদেন ও শেয়ারের দাম।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের বাজারমূল্য ৪ টাকা ৩০ পয়সা বা প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি ব্যাংকটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪৮ টাকা ৮০ পয়সা। গতকাল দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ টাকা ১০ পয়সায়।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, উদ্যোক্তা–পরিচালকদের বাইরে ব্যাংকটির যত শেয়ার রয়েছে, তার বড় অংশই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে। ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৩২ শতাংশের বেশি রয়েছে বিদেশিদের হাতে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সোয়া ১৪ শতাংশ শেয়ার। ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ার। এ ছাড়া উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে রয়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ শেয়ার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি
পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পর্যবেক্ষণে অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তাই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে করে কমিশন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
‘অরেঞ্জ বন্ড অন্তর্ভুক্তিমূলক পুঁজিবাজার তৈরির সুযোগ দিচ্ছে’
যমুনা অয়েলের ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৩৭.৭৮ শতাংশ
তদন্তের বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) অবহিত করা হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ওরিসুল হাসান রিফাত, ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সিডিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের হাল ধরেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ওই দিন অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসেনি। বরং, ক্ষেভে বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
সর্বশেষ সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫২.৭৯ পয়েন্টে। ফলে প্রায় ৮ মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৮২২.৭০ পয়েন্ট কমেছে।
এমন পরিস্থিতি বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখবে। এ কাজে কোনো কারসাজি চক্র জাড়িত আছে কি-না এবং বাজারে চক্রান্তকারী গুজব রটিয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করেছে বিএসইসি, যা অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। তাই কমিশন বিষয়টি পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর XVII) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিও অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সনের ১৫ নম্বর আইন) এর ১৭(ক) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি, ডিএসই এবং সিডিবিএলের ৪জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
ডিএসইএক্স সূচকের সাম্প্রতিক পতনের কারণ চিহ্নিত করা। বাজারে গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক বিষয় থাকলে তা চিহ্নিত করা। গঠিত তদন্ত কমিটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ প্রদান করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি কি কি কারণে বাজার পতনমুখী প্রবণতায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য কি কি করা প্রয়োজন সে বিষয়েও সুপারিশ প্রদান করবে তদন্ত কমিটি।”
ঢাকা/এনটি/এসবি