Samakal:
2025-08-01@23:44:51 GMT

সার্চের প্রশ্নে এআই বিতর্ক

Published: 16th, February 2025 GMT

সার্চের প্রশ্নে এআই বিতর্ক

বিশ্বজুড়েই বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দৌরাত্ম্য। এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে অনেক দেশ আগ্রহী। প্যারিস সম্মেলনে বক্তারা এআই পরিচালিত ভবিষ্যতের জন্য মানবিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। আবার এআই প্রযুক্তি নিয়ে কিছুটা শঙ্কাও ছড়ান। প্যারিস সম্মেলনে ঘোষণা আসে, পরের আন্তর্জাতিক এআই সামিটের আয়োজক হবে ভারত। লিখেছেন সাব্বিন হাসান

গুগল বা এআই সার্চের মধ্যে মৌলিক তফাত কোথায়– এমন প্রশ্ন অনেকেরই। গুগল ছাড়া অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে যখনই কিছু টাইপ করে সার্চ করেন, তখন ওই বিষয়ে বহু তথ্যচিত্র ও লেখা স্ক্রিনে দৃশ্যমান হয়। প্রয়োজনে পরপর ক্লিক করে তা পড়ে নিতে পারেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্যারিস সম্মেলনে অনেকেই শুনিয়েছেন আশঙ্কার কথা। অনেকে আবার বলেছেন অমিত সম্ভাবনার কথা।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে প্রায় সবারই কমবেশি ধারণা জন্মেছে। মূল কথা, জটিল সব কাজ আগের তুলনায় এখন এআই প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। বিপরীতে ক্ষতির দিকটি হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে মানবীয় কাজে চূড়ান্ত ভাগ বসাতে পারে। অনেকে হারাতে পারেন কর্ম; বিনষ্ট হতে পারে মানবীয় সক্ষমতা ও সৃজনশীলতা।

সহজে বললে, সব ধরনের কাজকেই নিমেষে তুড়ি বাজিয়ে করে দিচ্ছে এআই প্রযুক্তি। দিনে দিনে এমন প্রযুক্তির সক্ষমতা কল্পনাকেও হার মানাবে।
ফলে আর কাজের জন্য মানুষ নয়, প্রয়োজন হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সময় বলছে, এআই দিব্যি কবিতা লিখে ফেলছে। তাহলে আগামী দিনে কবির কদর কমে যাবে। এসবের চেয়ে রয়েছে বড় বিপদ। বিষয়টি আলোচনায় খুব কমই এসেছে। প্যারিসে এআই অ্যাকশন সম্মেলনে কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতারা এমন কথাই বলেছেন।

স্বাভাবিকভাবে ওপরের দিকে আসা কয়েকটা লেখা পড়ি। বাকি সব খুলে দেখি না। ওই ওপরে থাকা সব লেখার ভিত্তিতেই তৈরি হয় মতামত। কিছু সার্চ করলে কোন ওয়েবসাইটের লেখা প্রথমে আসবে আর কোনটা শেষের দিকে আসবে– সেসবই ঠিক করে গুগল উদ্ভাবিত নিজস্ব অ্যালগরিদম। যার রহস্য অনেকেরই অজানা। সার্চ আগ্রহীরা শুধু দেখতে পাই, গুগল কী দিচ্ছে। কেন দিচ্ছে, তার সদুত্তর জানা নেই। প্রায় সবার প্রত্যাশা, তার ওয়েবসাইটে লেখা গুগল সার্চে ওপরের সারিতে দৃশ্যমান হোক। যেন বেশি ভিউ হয়। এমন চাহিদা পূরণে পেছনে যা কাজ করে, তাকে বলা হয় (এসইও) সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন।
এমন প্রত্যাশা পূরণে শুধু চেষ্টাই করা সম্ভব। সিদ্ধান্ত কিন্তু নেয় গুগল অ্যালগরিদম। এবার জানা যাক এআই সার্চের কথা। যেমন জেমিনি বা কো-পাইলটের মতো অ্যাপ্লিকেশন ব্রাউজার খুলবেন। তার পর টাইপ করে কিছু জানার আগ্রহ প্রকাশ করবেন। এআই চাহিদা পূরণে প্রত্যাশিত লেখা তৈরি করে দেবে। যতটুকু ও যেভাবে চাইবেন, ঠিক সেভাবে লেখা তৈরি করবে। সারাংশ (সিনপসিস) চাইলে ছোট লেখাই দেবে। ঠিক কোথা থেকে তথ্য নিয়ে জেমিনি বা কো-পাইলট লেখাটা তৈরি করল, তা কিন্তু জানার সুযোগ নেই। কিছু তথ্য খুঁজলে গুগল অন্তত পঞ্চাশের বেশি কনটেন্ট সামনে হাজির করবে। ওখান থেকে সব পড়ে নিজের প্রয়োজন পূরণ করে– এমন লিঙ্কে যেতে পারবেন। এআই চাহিদা পূরণে প্যারাগ্রাফ তৈরি করে দেবে। সহজেই যা বুঝতে পারবেন। বিশেষজ্ঞদের ঠিক এখানেই চিন্তা। গুগল অ্যালগরিদম দেখতে পান, কিন্তু ঠিকঠাক বুঝতে পারেন না। এআই প্রযুক্তি অ্যালগরিদম বুঝতে পারবে না। আর তা অনুমান করা সহজও নয়। ফলে এমন প্রযুক্তির সাহচর্যে অসত্য তথ্য, ভুয়া তথ্য, পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য দৃশ্যমান হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়।

ভুল তথ্য পরিবেশনের কারণে জানার জায়গাটা অসত্য হয়ে যাবে। ভুল বুঝব। যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী ও মারাত্মক ক্ষতিকর। অনেকেই রাজনৈতিক তথ্য জানার প্রয়োজনে (পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ) তৈরিতে এআই প্রযুক্তির শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। অনেকে বিজনেসে আনডিউ অ্যাডভান্টেজ নিতে এআইমুখী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নিজের অজান্তে তথ্য প্রতারণার মুখোমুখি হতে পারেন। প্যারিস সম্মেলনে বক্তারা এআই প্রযুক্তির অ্যালগরিদমকে পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য পরিবেশন থেকে বিরত রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্যারিস সম্মেলনে বক্তারা এআই পরিচালিত ভবিষ্যতের জন্য মানবিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। আবার এআই প্রযুক্তি নিয়ে কিছুটা সতর্ক করেন।
সারাবিশ্বে এআই প্রযুক্তির বিকাশে কর্মসংস্থান কি কমবে– এমন প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিকভাবেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইতিহাস বলছে, প্রযুক্তি বিকাশে মানুষের কাজ কখনও কমেনি, বরং কাজের মানোন্নয়ন হয়েছে, ধরন বদলেছে। ঠিক এমন যুক্তিতেই এআই পরিচালিত ভবিষ্যতের জন্য মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
প্যারিস সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অংশ নেন। ছিলেন বিশ্বের নানা দেশের প্রতিনিধিরা। 

প্যারিস মঞ্চে জানানো হয়, পক্ষপাতহীন মানোন্নত ডেটা সেন্টার তৈরি করতে হবে। সারাবিশ্বের কাছে এমন ওপেন সোর্স সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা বিশ্বাস ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে, মানুষের কল্যাণে কাজে লাগবে। এআই প্রযুক্তির সুবিধা যেন সমভাবে সবাই পায়, সেদিকে বিশেষ নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেন বিশ্বনেতারা।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত র জন য ম ন এমন প

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ