রংপুরের ইটভাটায় নজরদারি জরুরি
Published: 17th, February 2025 GMT
রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ইটভাটায় বিক্রির ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কৃষকেরা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাঁদের আবাদি জমির মাটি বিক্রি করছেন। এটি দীর্ঘ মেয়াদে কৃষির ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে এসব ইটভাটা কৃষিজমির উর্বরতা ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এ সংকট শুধু স্থানীয় কৃষকদের নয়; বরং সামগ্রিকভাবে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, জমির উপরিভাগের ১ ফুট মাটিতেই অধিকাংশ জৈব পদার্থ থাকে, যা ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাটি একবার সরিয়ে নেওয়া হলে পুনরায় উর্বরতা ফিরে পেতে প্রায় দুই দশক লেগে যায়। অথচ স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় কৃষকেরা এই মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন। অনেক কৃষক বুঝতে পারছেন না, এই মাটি বিক্রি করে তাঁরা ভবিষ্যতে চাষাবাদে আরও বড় লোকসানের মুখে পড়বেন।
অন্যদিকে ইটভাটাশিল্প দীর্ঘদিন ধরেই কৃষিজমি ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশদূষণের জন্য দায়ী। অধিকাংশ ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই এবং তারা কৃষিজমির মাটি ব্যবহার করেই ইট তৈরি করছে। এতে ভূমির উচ্চতা কমে গিয়ে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব ইটভাটা কয়লা ও কাঠ পোড়ানোর মাধ্যমে বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
এই সংকটের সমাধানে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। প্রথমত, কৃষকদের সচেতন করতে হবে, যাতে তাঁরা স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির দিকে না যান। তাঁদের জন্য কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া বা সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষিপণ্য উৎপাদনকে লাভজনক করার মতো বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, যেসব ইটভাটা কৃষিজমির মাটি ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং অবৈধ ইটভাটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া ইটভাটাশিল্পের জন্য বিকল্প কাঁচামাল ব্যবহারের উপায় খুঁজতে হবে। পৃথিবীর বহু দেশে মাটির পরিবর্তে ফ্লাই অ্যাশ ও অন্যান্য পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার করে ইট তৈরির প্রযুক্তি চালু হয়েছে। বাংলাদেশেও ধাপে ধাপে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় টেকসই নীতিমালা গ্রহণ ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। কৃষিজমি নষ্ট হলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে, যা সামগ্রিকভাবে খাদ্যনিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কৃষিজমির মাটি বিক্রি ও ইটভাটার অনিয়ম রোধে সবার আগে এই সত্যটি সরকার ও জনগণের উপলব্ধিতে আনতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র পর ব শ র জন য ইটভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান বলেছেন, ‘আমাদের যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, তার একটি হলো ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক গণতন্ত্রের দেশ নয়। এখানে গণতন্ত্র চলছে না। কার্যত এটা পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে।’
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আইরিন খান এ কথা বলেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধবার ‘আইন থেকে অধিকার: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণে ডিজিটাল স্বাধীনতার সুরক্ষা’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়েবিনারে বিদ্যমান ও নতুন সাইবার আইন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া এবং নাগরিকদের ওপর নজরদারিসহ ডিজিটাল সুশাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়। টিজিআই–এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি সরঞ্জাম কেনার জন্য ১৯ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।
ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য দেন টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ দিয়া। গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাবহানাজ রশীদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে কিছু উল্লেখযোগ্য তদন্ত, কমিশন ও প্রক্রিয়া করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা নির্বিচার গ্রেপ্তার হতেও দেখেছি।’
টিজিআই–এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। অতীতে আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, এই আইন বাংলাদেশে নজরদারির সবচেয়ে সহায়ক এবং একই সঙ্গে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে।’
আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা খাতের বিষয়গুলো নিয়ে আইরিন খান বলেন, ‘আমাদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার আছে, যার কর্তৃত্ব সীমিত। আমাদের একটি নিরাপত্তা খাত আছে; এই একটি মাত্র খাতে অভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’
জাতিসংঘের বিশেষ এই র্যাপোর্টিয়ার বলেন, ‘এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা খাতকেই সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে (বর্তমান সরকারকে)। এখনো তাদের কাছে সব ধরনের (নজরদারি) সরঞ্জাম রয়েছে। আর সে কারণে পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবে, তা নির্ধারণে অন্য সবার চেয়ে তাদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে।’
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান সরকার কী করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনায় আইরিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিয়ে ভাবুন। আমি মনে করি না, সরকার তা করছে। তবে অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারের ডিজিটাল নিয়ে এবং ডিজিটাল পরিসরে কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। (ইন্টারনেট) কোম্পানিগুলোকে ডাকুন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং ডিজিটাল পরিসর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মানুষকে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও বুঝতে দিন।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের প্রোগ্রাম অফিসার ডায়নাহ ফন ডার গেস্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, নজরদারি নিজে থেকে অবৈধ নয়। সর্বত্র রাষ্ট্রগুলোর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধের তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু নজরদারি যখন ব্যাপক, অস্বচ্ছ ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তখন তা একটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’
ওয়েবিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডিজিটাল স্বাধীনতা যেমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং অনলাইনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে সাইবার আইন ও এর প্রয়োগের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ; ডিজিটাল পরিসরে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষায় সংস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে এতে আলোচনা হয়েছে।